ছয় বছরেও হয়নি রামেবির পূর্ণাঙ্গ ক্যাম্পাস

রাজশাহী লীড

স্বদেশবাণী ডেস্ক: ২০১৬ সালের ১২ মে মন্ত্রিসভায় রাজশাহী ও চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রস্তাব অনুমোদন লাভ করে এবং পরে রামেবি-চমেবি আইন-২০১৬ সংসদে পাশ হয়। ৬ বছরে চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ এগিয়ে গেলেও রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় পড়ে রয়েছে সেই তিমিরে। প্রশাসনিক ব্যর্থতার কারণে এখনো রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (রামেবি) ক্যাম্পাস ও হাসপাতালের জন্য জমি অধিগ্রহণই হয়নি। অনুমোদন হয়নি রামেবির উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি)। ডিপিপি অনুমোদনের পর রামেবি উন্নয়ন প্রকল্প একনেকে যাবে। অনুমোদন লাভের পর শুরু হবে রামেবির অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও এখনো তৈরি হয়নি একটি নিজস্ব ক্যাম্পাস ও হাসপাতাল। শুরু থেকে সাড়ে ৫ বছর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ক্যাম্পাসে অবস্থিত নার্সিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কয়েকটি কক্ষে চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম। অন্যদিকে রামেবির ভিসির জন্য ঢাকায় রয়েছে একটি ক্যাম্প অফিস। রামেবির উপাচার্য ঢাকা ক্যাম্প অফিস থেকেই সব প্রশাসনিক কাজকর্ম করে থাকেন। রামেবিতে কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ হলেও তাদের কয়েকজন ঢাকায় ক্যাম্প অফিসে এবং কয়েকজন রাজশাহীর অস্থায়ী অফিসে।

জানা গেছে, ২০১৭ সালের ১ মে প্রথম উপাচার্য হিসাবে নিয়োগ পেয়ে অধ্যাপক ডা. মাসুম হাবিব এ বছর ৩০ এপ্রিল দায়িত্ব পালন শেষ করেন। প্রথম উপাচার্যের মেয়াদ শেষে ৩০ মে দ্বিতীয় উপাচার্য হিসাবে নিয়োগ পেয়েছেন অধ্যাপক ডা. এজেএম মোস্তাক হোসেন। জানা যায়, প্রথম উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কিছু জনবল নিয়োগ ছাড়া আর কিছুই করেননি। প্রথম উপাচার্য সম্প্রতি প্রয়াত হয়েছেন। ৩০ মে নিয়োগ পেলেও বর্তমান উপাচার্য ডা. মোস্তাক হোসেন এখনো রাজশাহীতে গিয়ে একদিনের জন্য অফিস করেননি। করেননি কোনো সিন্ডিকেট সভা।

রাজশাহী জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ (এলএ) শাখা সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ রামেবির ক্যাম্পাস করার জন্য একেক সময় একেক জায়গায় জমি অধিগ্রহণের অনুরোধ পাঠায়। ফলে জেলা প্রশাসন বেকায়দায় পড়েন। প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট সূত্রটি আরও জানায়, রামেবির ক্যাম্পাস ও হাসপাতাল নির্মাণ নিয়ে রাজনৈতিক টানাপোড়েনের ঘটনা ঘটেছে। ফলে কয়েকবার জমি অধিগ্রহণের প্রস্তুতি হিসাবে জরিপ ও জমি সীমানা নির্ধারণে নেমে প্রশাসন বিপাকে পড়ে। এক জায়গার জমির জরিপ শেষ হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ স্থান বদলের অনুরোধ পাঠায়। রামেবির জমি অধিগ্রহণ নিয়ে এমন ঘটনা বেশ কয়েকবারই ঘটে। ফলে শেষ পর্যন্ত কোনো কাজই আর এগোয়নি। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের দাবি, বাস্তবে জমি জটিলতা নেই। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বারবার স্থান নির্ধারণ করায় এই জটিলতা বেড়েছে।

রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল বলেন, তিন হাজার ৯৯ কোটি টাকার রামেবির সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) এখনো প্ল্যানিং কমিশনের অনুমোদন লাভ করেনি। ফলে জমি অধিগ্রহণের কাজও শুরু করা যায়নি। কয়েকবারই রামেবির ডিপিপি সংশোধন করা হয়েছে। ডিপিপি অনুমোদন না হওয়ায় বরাদ্দও আসেনি। আর এ কারণেই জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু করা যায়নি। ডিপিপি অনুমোদন হলেই জমি অধিগ্রহণের কাজ প্রশাসন শুরু করতে পারবে।

রামেবির একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, কয়েক দফা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের জায়গা পরিবর্তনের পর সর্বশেষ নগরীর ডাবতলা এলাকায় ৬৮ একর জমি অধিগ্রহণের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এসব জমি অধিগ্রহণে আগের জায়গাগুলোর তিনগুণ বেশি অর্থ ক্ষতিপূরণ হিসাবে জমি মালিকদের দিতে হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রামেবির একজন সিন্ডিকেট সদস্য যুগান্তরকে বলেন, বরং জায়গা নির্ধারণে কর্তৃপক্ষ যে বারবার সিদ্ধান্ত বদল করেন, তা কোনো বিশেষ পক্ষকে সুবিধা পাইয়ে দিতেই করেছেন। কারণ এখন জমির ক্ষতিপূরণ মূল মূল্যের তিনগুণ পাওয়া যায়। এসব করতে গিয়েই রামেবির কোনো অবকাঠামো নির্মাণ হয়নি সাড়ে ৫ বছরে। বর্তমানে যে জায়গাটি নির্ধারণ করা হয়েছে, তার জন্য তার অধিগ্রহণ মূল্য কয়েকগুণ বেশি দিতে হবে। এতে সরকারের ক্ষতি হবে শতকোটি টাকা।

রামেবি সূত্রে আরও জানা যায়, রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে বলা হয়েছে-রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগের আওতাধীন ১০টি সরকারি মেডিকেল কলেজ, ১৩টি প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ, দুটি ডেন্টাল কলেজ, ৫টি প্রাইভেট ডেন্টাল কলেজ, ৪টি সরকারি নার্সিং ইনস্টিটিউট, ৫টি প্রাইভেট নার্সিং ইনস্টিটিউট, ১টি হেলথ টেকনোলজি ইনস্টিটিউট (আইএইচটি), তিনটি প্রাইভেট হেলথ টেকনোলজি ইনস্টিটিউটসহ ৫০টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনাসহ শিক্ষার্থীদের সনদ প্রদান করা হবে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। পাশাপাশি ৯টি অনুষদের আওতায় ৮৫টি বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম রামেবির অধীনে পরিচালিত হওয়ার কথা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, বর্তমানে রামেবি থেকে শুধু এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সনদপত্র দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু চিকিৎসা শিক্ষার এসব প্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষা কারিকুলাম নেই। নেই কোনো ফ্যাকাল্টি সদস্য। নেই কোনো পরীক্ষক।

সূত্রমতে, দেশের চিকিৎসা ক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষা, গবেষণা ও সেবার মান এবং সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের লক্ষ্যে রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাশ হয়। ডিপিপিতে বলা হয়েছে, রামেবিতে মোট ৪২টি ভবন নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে প্রশাসনিক ভবন, দুটি একাডেমিক ভবন, শিক্ষার্থীদের জন্য দুটি এবং নার্সদের জন্য দুটি ছাত্রাবাস, স্কুল, গ্রন্থাগার, শিক্ষকদের আবাসিক ভবন, শহিদমিনার, বঙ্গবন্ধু চত্বর, ব্যায়ামাগার এবং ক্যাম্পাসের ভেতরে লেক থাকবে। এছাড়া রামেবিতে হবে ১ হাজার ২০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল কম্পাউন্ড। অধিকাংশ ভবন হবে সর্বোচ্চ ১২তলাবিশিষ্ট।

রামেবির একাডেমিকসহ সার্বিক কার্যক্রমের পাশাপাশি অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ শুরু না হওয়া প্রসঙ্গে রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ডা. এজেএম মোস্তাক হোসেন বলেন, আমরা সংশোধিত ডিপিপি অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছি। অনুমোদনের পর বাজেট পেলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু করা সম্ভব হবে। বাজেট না পাওয়ায় এখনো জমি অধিগ্রহণ শুরু হয়নি। বাজেট পেলে পরবর্তী তিন বছরের মধ্যেই রামেবির ক্যাম্পাস হাসপাতালসহ পূর্ণাঙ্গ ক্যাম্পাস তৈরি হয়ে যাবে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *