স্বদেশবাণী ডেস্ক : রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসারত শিশু সিয়াম মণ্ডলের (৬) অপারেশনের জন্য জোগাড়কৃত অর্থ চিকিৎসক পরিচয়ে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। এতে হতদরিদ্র ওই পরিবার ছেলের চিকিৎসা খরচ মেটাতে বিপাকে পড়েছে। শুক্রবার সকালে হাসপাতালের নয় নম্বর শিশু ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে।
সিয়াম মণ্ডল পাবনার সুজানগর উপজেলার নওয়াব গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবা শহীদ আলী মণ্ডল পেশায় দিনমজুর। বৃহস্পতিবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল ১০টার দিকে রাস্তা পারাপারের সময় বেপরোয়া চার্জার অটোরিকশা সিয়ামকে চাপা দেয়। গুরুতর জখম নিয়ে তাকে সুজানগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
সেখানে এক্সরে করে ডাক্তার জানান, তার বুকের তিনটি হাড় ভেঙে গেছে। পরে রক্ত বন্ধ না হওয়ায় তাকে পাবনা সরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখান থেকে ওই রাত সাড়ে ১০টার দিকে সিয়ামকে রামেক হাসপাতালের নয় নম্বর ওয়ার্ডের ২১ নম্বর বেডে ভর্তি করা হয়।
সিয়ামের চাচাতো ভাই রাজিব হোসেন জানান, তারা ১৬ তারিখ রাতে হাসপাতালে এসেছেন। চিকিৎসকরা অপারেশনের জন্য কিছু টাকা সংগ্রহ করতে বলেছিলেন। রাতে তিনি ও তার চাচা এই ওয়ার্ডের বারান্দায় ঘুমিয়ে ছিলেন। ১৭ তারিখ ভোর ৫টার দিকে তার চাচাকে সার্জারি ওয়ার্ডের চিকিৎসক শাজাহান পরিচয় দিয়ে ইনজেকশনের জন্য ৬ হাজার টাকা দিতে বলেন।
চাচা আকুতি-মিনতি করলে চার হাজার টাকায় ইনজেকশন দিতে রাজি হন। এই চার হাজার টাকা নিয়ে ওই লোক উধাও হয়ে যায়। মিথ্যা পরিচয় দিয়ে তার সহজ-সরল চাচার কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে।
সিয়ামের বাবা শহীদ আলী মণ্ডল বলেন, আমি গরিব মানুষ। ছেলের চিকিৎসার জন্য হাতে কোনো টাকা ছিল না। অপারেশনের কথা বলে বড়ভাই আব্দুর শকুর মণ্ডলের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা ধার করেছিলাম। এর মধ্য থেকে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে ৪ হাজার টাকা নিয়ে পালিয়েছে। বাকি টাকাসহ আরও কিছু ধার করে ছেলের অপারেশন করিয়েছি। এই গরিবের এত বড় ক্ষতি কেন করল?
শহীদ আলী মণ্ডল কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, এখন হাতে কোনো টাকা নেই। ছেলের মুখে ভালো কোনো খাবারও তুলে দিতে পারিনি। গতরাত থেকে বাকিদের এখনো পেটে কোনো দানাপানি পড়েনি। আপনারা (গণমাধ্যম কর্মীদের) কিছু করেন বাবা।
এ বিষয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ও শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. নওশাদ আলী জানান, বিষয়টি দুঃখজনক। তিনি সকালেই ওই ওয়ার্ডে রাউন্ড দিয়েছেন। কিন্তু তখন পর্যন্ত এ রকম কোনো অভিযোগ কেউ করেননি। আর ওই নামে সার্জারি ওয়ার্ডেও কোনো চিকিৎসক নেই।
এ বিষয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামিম ইয়াজদানী জানান, গ্রাম থেকে রোগীরা আসছেন। এরা এত সহজ-সরল যে, কেউ টাকা চাইছে আর দিয়ে দিচ্ছে। এসব ঘটনা খুবই দুঃখজনক। হাসপাতালে সচেতনতামূলক ব্যানার-ফেস্টুন লাগানো রয়েছে। এগুলোও তারা পড়ে না। তবে দেখি ওই রোগীর জন্য কী করা যায়।