বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ, আহত ৫০

জাতীয়

স্বদেশবাণী ডেস্ক: হবিগঞ্জে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। সংঘর্ষে শহরের শায়েস্তানগর থেকে সার্কিট হাউস রোড পর্যন্ত এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। বুধবার বেলা পৌনে ২টা থেকে এ সংঘর্ষ শুরু হয়। এক ঘণ্টাব্যাপী এ সংঘর্ষ চলে।

পুলিশ অন্তত অর্ধশত রাউন্ড রাবার বুলেট ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করেছে। সংঘর্ষে পুলিশসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় পুলিশ এ পর্যন্ত ৭ জনকে আটক করেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বুধবার সমাবেশের আয়োজন করে জেলা বিএনপি। শহরের শায়েস্তানগর এলাকায় দলীয় কার্যালয়ের সামনে সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়।

সমাবেশে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জয়নাল আবেদীন ফারুক, সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবনসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত হন। বেলা ২টার কিছু পূর্বে নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে সমাবেশ স্থলে রওনা হন। এ সময় শায়েস্তানগর পয়েন্টে তাদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে।
বিকাল পৌনে ৩টা পর্যন্ত টানা সংঘর্ষ চলে। সংঘর্ষে আহতদের হবিগঞ্জ ও সিলেটের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় জেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক রাজিব আহমেদ রিংগনকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন জানান, কেন্দ্রীয় নেতারা সমাবেশ স্থলে আসার সময় বিভিন্ন স্থানে পুলিশ তাদের বাধা দিয়েছে। শহরের শায়েস্তানগরে বাধা দিলে নেতাকর্মীরা সেখানে গিয়ে তাদের নিয়ে আসেন। এ সময় পুলিশের সাথে সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষে তাদের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। তবে এখনই আহতের সংখ্যা বলা সম্ভব নয়।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শিমুল আক্তার জানান, পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো বাধা দেওয়া হয়নি। পুলিশ শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করছিল। হঠাৎ বিএনপি নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এতে ২৭ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তাদের সবাইকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

তিনি বলেন, কী পরিমাণ রাবার বুলেট বা টিয়ারসেল নিক্ষেপ করা হয়েছে তা এখনই নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। তবে বর্তমানে পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, দেশে গণতন্ত্র নেই এটি এখন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। এতদিন আমরা বলেছি দেশে গণতন্ত্র নেই। সরকার ১২ বছর ধরে গায়ের জোরে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। আমেরিকায় যে গণতন্ত্র সম্মেলন হয়েছে সেখানে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তারা বলেছে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক না। বাংলাদেশে যে মানবিক অধিকার নেই তা সবাই দেখছেন- কী পরিমাণ মানুষ গুম হয়েছে, বিনা বিচারে হত্যা হয়েছে, নিখোঁজ হয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের সবার বিরুদ্ধে মামলা। এই যে মানবাধিকার লঙ্ঘন আমরা এতদিন বলছি- এখন তাও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। কেন না আমাদের একটি সংস্থাকে আন্তর্জাতিকভাবে আমেরিকা থেকে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আমাদের কিছু বড় বড় সামরিক এবং পুলিশের কিছু কর্মকর্তাকে তারা এ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এটি জাতি হিসেবে, দেশ হিসেবে আমাদের জন্য অত্যন্ত লজ্জাকর। এটি কাম্য নয়; কিন্তু সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এ সংস্থাগুলোকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে ফেলছে।

আমরা দাবি করছি দেশনেত্রীকে অনতিবিলম্বে মুক্ত করা হোক এবং বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হোক। বিকাল সাড়ে ৩টায় সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এসব কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন— খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা জয়নাল আবেদীন ফারুক, ড. এনাম আহমেদ, খন্দকার মোক্তাদির, বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন, কেন্দ্রীয় সমবায় বিষয়ক সম্পাদক জি কে গউছ, শাম্মি আক্তার শিপা, যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পদাক ইকবাল আহমেদ শ্যামল প্রমুখ।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *