চেয়ারম্যান টুলু আতংকে রিশিকুল ইউপিবাসী

রাজশাহী

তানোর প্রতিনিধি : রাজশাহী গোদাগাড়ী উপজেলার ৪ নং রিশিকুল ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম (টুলু দর্জি) ও তার লোকজনের অত্যাচারে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। তার হাত থেকে এলাকার সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীসহ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি (মেম্বার) কেউ ই রেহায় পাচ্ছে না। এলাকাবাসীর সূত্র মতে, চেয়ারম্যান টুলু এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করার জন্য কয়েক বছর আগে থেকে নানামুখী কৌশল অবলম্বন করতে থাকে। এজন্য তিনি স্থানীয় অভদ্র, গুণ্ডা-পাণ্ডা হিসেবে পরিচিতদের কাছে টেনে নেন। এবং তাদের দিয়েই পুরো রিশিকুল ইউনিয়ন দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন।

মান্ডইল এলাকার বকুল (ছদ্মনাম) এখন, দর্জি হতে নব্য চেয়ারম্যান টুলুর ডান হাত। চেয়ারম্যান টুলুর নিকট যেকোন কাজে গেলে আগে বকুলের (ছদ্মনাম) সাথে যোগাযোগ করতে হয়। লোকজন জানান, এই বকুল (ছদ্মনাম) সহ ১০-১২ জন বেপরোয়া কথিত নেতা টুলুর কথায় উঠাবসা করেন। এদের দিয়ে চেয়ারম্যান গোটা রিশিকুল ইউনিয়ন শাসন করছেন। সম্প্রতি স্থানীয় সাংসদের দেওয়া বিশেষ বরাদ্ধের ১৪ টন চাউল দিয়ে অত্র ইউপির ৪ নং ওয়ার্ডের এবং ৩ নং ওয়ার্ডের শল্লা হইতে বিলদুবইল পর্যন্ত আনুমানিক ১ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা সংস্কারে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ করেন এলাকাবাসী। পরে তোপের মুখে পড়ে ঐপ্রকল্পের দায়িত্বরত সভাপতি বহুল সমোলাচিত,জামায়াত বিএনপির এজেন্ডা, রিশিকুল ইউপির ১,২,৩ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার ফিরোজা বেগম তোপের মুখে পড়ে কাজ বন্ধ করে দেন।শেষে স্থানীয়রা অনিয়মের বিষয়টি গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে মোবাইল ফোনে অবগত করলে তিনি কাজ বন্ধ করে দিতে বলেন।

উক্ত ঘটনা বিভিন্ন অনলাইন সংবাদ মাধ্যম সহ পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হলে চেয়ারম্যান টুলু এবং মেম্বার ফিরোজা বেগম ক্ষুব্ধ হয়ে কাজের অনিয়মের প্রতিবাদকারীদের নামেই গোদাগাড়ী মডেল থানায় মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলা করতে সাহায্য করেন রিশিকুল ইউপির মহিলা মেম্বার ফিরোজা বেগম। মিথ্যা মামলা করে হয়রানি করে আসছেন এলাকাবাসীকে।

শুধু তাই ই নয়,বিলদুবইল গ্রামের ইউনুস,আতাহার,মোজাম্মেল মাস্টার,নজরুল,কশিয়া গ্রামের আব্বাস উদ্দিন জানান,চেয়ারম্যান টুলুর ছত্রছায়ায়, পেশীশক্তি,ক্ষমতার দাপটে মহিলা মেম্বার অত্র এলাকার ক্রাস ফিরোজা বেগম, বিলদুবইল গ্রামের কুরবানের নিজস্ব সম্পত্তির উপর দিয়ে জোর পূর্বক নিজের ব্যাবহারের জন্য রাস্তা বানিয়েছেন।তার ক্ষমতার কাছে স্থানীয় জনগন অসহায়।ভয়ে কেউ কিছু বলতেও পারেনা।কেউ মহিলা মেম্বার ফিরোজার অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে, ফিরোজা নিজে নিজেই তার শরীরের কাপড় ছিড়ে থানা বা পুলিশ ফাঁড়ি গিয়ে মিথ্যা মামলা করে হয়রানি করে-অভিযোগ এলাকাবাসীর।

মান্ডইল গ্রামের মামুন মির্জা জানান,চেয়ারম্যান টুলুর অনিয়ম,দূর্নিতীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় আমাকে ইউনিয়ন পরিষদে ঢুকতে নিষেধ সহ বিভিন্ন প্রকার ক্ষয়ক্ষতি করার চেস্টা চালিয়ে যাচ্ছে,অথচ আমি আওয়ামীলীগ এর একজন প্রকৃত কর্মী। ঐ গ্রামেরই হযরত,বাবু,রাকিব,দুলাল, হিমেল, বিশাল জানান,এই চেয়ারম্যান আগে দর্জি ছিলো। হঠাৎ করে চেয়ারম্যান হয়ে যেন সব ভুলে গিয়েছে।নারী কেলেঙ্কারি,দূর্নিতী,অনিয়ম,টেন্ডারবাজী,ঘুষ বানিজ্য,চাকুরী দেওয়ার নামে টাকা আত্মসাৎ,গভীর নলকূপে অপারেটর নিয়োগের নামে কামিয়েছেন কাড়ি কাড়ি টাকা।দর্জি থেকে হয়েছেন বিত্তবৈভব ক্ষমতাশীল টাকা ওয়ালা।ঠিক মত পরিষদেও উপস্থিত থাকেননা।আর পরিষদে কোন কাগজপত্র নিতে গেলে টাকা ছাড়া কিছুই হয়না।এসব অনিয়মের প্রতিবাদ করলেই মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেন।

হিমেল এবং বিশাল জানান,চেয়ারম্যান টুলুর মিথ্যা হয়রানীমূলক মামলার জন্য আমরা অনেকদিন যাবত বাড়ি ফিরতে পারিনা।আমরা চেয়ারম্যান টুলুর এহেন কর্মকান্ডের প্রতি আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহণে উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। এবং বিষয়টি আমরা এলাকাবাসী, উপজেলা প্রশাসন, জেলা প্রশাসন, এবং বিভাগীয় কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগ প্রদানের ব্যাবস্থা গ্রহণ করছি। এনায়েতুল্লাপুর গ্রামের নিলুফা বেগম জানান, জিবীকার তাগিদে আমরা গ্রামের বাড়িতে থাকতাম না,ঢাকায় থাকতাম।২০১৬ সালে চেয়ারম্যান টুলুর সাহায্য ও হস্তক্ষেপে একই গ্রামের কাজি আমার বাড়ি দখল করেন এবং বসবাস করতে থাকলে আমি বিভিন্ন প্রশাসন বরাবর অভিযোগ করি।বিষয়টি স্থানীয় পত্রিকা সহ জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হলে চেয়ারম্যান টুলুর বিরুদ্ধে জনমত গড়ে উঠে এবং তোপের মুখে পড়ে চেয়ারম্যান টুলু তার নিকটআত্মীয় কাজিমুদ্দিনকে বাড়ি থেকে সরিয়ে নেন।যেদিন বাড়ি দখল ছেড়ে দেন সেদিনই রাতে বাড়ির সকল মালামাল লুট করে নেন চেয়ারম্যান টুলুর লোকজন এবং কাজিমুদ্দিন।পরে মোবাইল ফোনে চেয়ারম্যান টুলু আমাকে হুমকি দেন, আমি যদি এই ঘটনায় আইনের আশ্রয় নেয় তবে আমাকে ভিটেমাটি ছাড়া করে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে পাঠাবে।

রিশিকুল গ্রামের গভীর নলকূপের চালক বাবু জানান,আমার স্কুল পড়ুয়া ছেলেকে স্কুল থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে ব্যাপক মারধর করেন চেয়ারম্যান টুলু। এনায়েতুল্লাপুর গ্রামের মুদি দোকানি নুরুজ্জামান জানান,৮-৯ মাস আগে একটি সোলার লাইট স্থাপন করেছিল প্রাইমারী স্কুলের পিছনে।স্থাপনের ৫ মিনিট পরই ভেঙে পড়েছে ওই লাইট। তারপর আর কোন খেয়াল নেই চেয়ারম্যান টুলুর।অনিয়মের অভাব নেই তার। চব্বিশনগর গ্রামের টুনু,মিলন,রিয়াজ জানান,যেকোন কাজে পরিষদে কাজের জন্য গেলে পরিষদে গিয়ে দেখি তিনি নেই।ফোন দিলে বলে আজ ডিসি অফিস আছি আজ মিটিং এ আছি।আসলে এসব কিছুই না,তিনি বউ রেখে সৈয়দপুর গ্রামে বিয়ে করেছেন।তাই পরিষদ রেখে রাজশাহী শহরেই সেই বউকে সময় দেন।এবার ই শেষ ওর ভোট। তারপর দেখবো দর্জি কি করে।

এ বিষয়ে জানতে চেয়ারম্যান টুলুর মোবাইল ফোনে ফোন দিলে তিনি জানান,ভাই আমি খুবই অসুস্থ। পরে কথা বলবো। তবে সৈয়দপুর গ্রামের যে মেয়ের সাথে আমার সম্পর্ক মানুষ অভিযোগ করছে আসলে সেটা নয়।ওই মেয়ের সাথে আমার বন্ধুত্বের সম্পর্ক বলে ফোন বন্ধ করে দেই। এলাকাবাসী এ বিষয়ে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *