তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন: কে আসছেন নেতৃত্বে! 

রাজশাহী
সারোয়ার হোসেন, তানোর: কে আসছেন নেতৃত্বে, কার হাতে যাবে নেতৃত্ব, কে হবেন সভাপতি ও সম্পাদক, চলছে তুমুল আলোচনা, তাহলে কি রাব্বানী মামুন অধ্যায় শেষ হতে চলেছে, নাকি অন্যকিছু অপেক্ষ মান। না এবার রাব্বানী মামুন অধ্যায়ের ইতি ঘটতে চলেছে বলেই ধরে নিচ্ছেন তৃনমুলের নেতাকর্মীরা। আগামী ১৬ জুন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রাজশাহীর তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন। জমকালো আয়োজনের মাধ্যমে সম্মেলন করার জন্য গত ৪ঠা জুন বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং সভার সভাপতি হিসেবে  বিদ্রোহীদের গড ফাদার বিতর্কিত উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম রাব্বানী ও সঞ্চালনার দায়িত্বে থাকা আরেক মদদদাতা সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন তৃণমূল নৌকার পক্ষের নেতাকর্মীদের তোপের মুখে পালিয়ে রক্ষা যান। তারা মঞ্চ থেকে পালিয়ে যাওয়ার কারনে চরম হতাশায় পড়েছেন অনুসারীরা।
 অবশ্য তারা পালিয়ে যাওয়ার পর এক প্রকার  বাধ্য হয়ে জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অনিল কুমার সরকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় বর্ধিত সভা। কারন সময় খুবই কম। এতে করে মাথায় হাত পড়েছে রাব্বানী মামুনসহ অনুসারীদের।
দলীয় সুত্রে জানা গেছে, গত ৪ঠা জুন  শনিবার সকালের দিকে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে উপজেলা আওয়ামী লীগের আয়োজনে বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। অবশ্য সভার আগ মুহুর্তে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা কটুক্তির প্রতিবাদে বিশাল বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
বর্ধিত সভার শুরুতেই নৌকার পক্ষের নেতাকর্মী এবং পাওনা দাররা  রাব্বানী ও মামুন কে দেখে বিক্ষুদ্ধ হয়ে চরম উত্তেজিত হয়ে হট্টগোল সৃষ্টি হলে মঞ্চ থেকে দ্রুত পালানোর চেষ্টা করেন গোলাম রাব্বানী। কিন্তু সম্পাদক মামুন রাব্বানীর হাত ধরে আটকাতে চাইলেও পারেন নি। অবশেষে রাব্বানীর সাথে মামুনও  পালিয়ে যান। এমনকি  জেলার নেতাদেরও অবজ্ঞা করেন তারা । তারা পালানোর পর শান্তি পূর্ণ ভাবে বিকেল পর্যন্ত চলে সভা।
চলতি মাসের ১৬ জুন তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। মুলত এজন্যই বাধ্য হয়ে বর্ধিত সভার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অনিল কুমার সরকার। ব্যানার সাটিয়েছিলেন রাব্বানী মামুন। প্রধান অতিথি নাম ছিল জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, প্রধান বক্তার নাম ছিল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ দারা, বিশেষ অতিথি হিসেবে তিনে ছিলেন সাংসদ ফারুক চৌধুরী। এটা নিয়েও ছিল নেতৃবৃন্দ ও তৃনমুলের চরম ক্ষোভ। কারণ তিনি সাবেক জেলা সভাপতি এবং সাবেক শিল্পপ্রতি মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন । আর তাকেই অবমাননা করছেন রাব্বানী মামুন।
সভার পর থেকে  রোববার, সোমবার ও মঙ্গলবার  দিনব্যাপী রাব্বানী মামুনের পালানো নিয়ে আলোচনা সমালোচনার বিষয়টি টক অব দা তানোরে পরিনত হয়েছে ।
তাদের এক হেভিওয়েট অনুসারী চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,  তারা মঞ্চ থেকে চলে যাবে কেন। তারা তো ভালো করেই জানতেন সভাতে এরকম ঘটনা ঘটতেই পারে। কারন তারা নৌকার বিরুদ্ধে চরম বিদ্রোহ করেছিলেন, যা দিবা লোকের মত পরিস্কার । সুতরাং পক্ষের নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করতেই পারেন। যেখানে মঞ্চে জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, সম্পাদক নেতৃবৃন্দ, স্হানীয় সাংসদ উপস্থিত আছেন, সেখানে যদি রাব্বানী মামুনের গায়ে হাত পড়ত, রক্ত বের হত, ব্যাপক রন ক্ষেত্র হয়ে পড়লে রাব্বানী মামুনের ভালো   হত। আর নানা প্রশ্নে পড়তেন সাংসদ সহ নেতারা। তা না করে ভয়ে  পালিয়ে গেলেন  ।  সভা তো ঠিকই হল। তারা রাজনৈতিক ভাবে পরাজিত হলেন। সুতরাং তাদের কথা বিশ্বাস করা মানে বোকার স্বর্গে বাস করা। আমার মনে হয় তাদের ডাকে আর কেউ যাবেওনা, তারা কিছু বললে বিশ্বাসও করবে না। তাদের সম্মানের সহিত সম্মেলনের আগে ইস্তফা দেয়াই উত্তম। এখন পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে সম্মেলনও হয় তো তাদের ছাড়াই হয়ে যেতে পারে। একেবারে নিঃশ্চিন্তে বলা যেতে পারে রাব্বানী মামুন অধ্যায়ের অবসান ঘটছে।
ফেসবুক থেকে শুরু করে সব খানেই রাব্বানী মামুনের পালানোর বিষয় এবং নতুন নেতৃত্ব নিয়ে শুরু হয়েছে জোর আলোচনা। তাহলে কি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের হাতেই যাচ্ছে নেতৃত্ব,  নাকি অন্য কিছু। তবে সবাই ধরেই নিচ্ছেন চেয়ারম্যান ময়নার হাতেই যেতে পারে  সভাপতির দায়িত্ব । তাহলে সম্পাদকের দায়িত্বে কে থাকবেন, কে আসছেন, কে হবেন ।
তৃনমুল নেতাকর্মীদের মাঝে সম্পাদক হিসেবে পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ প্রদীপ সরকারে নাম আসছে জোরালো ভাবে।
তিনি  জানান, দীর্ঘদিন পর সম্মেলন। নেতাকর্মীদের মাঝে প্রচুর উৎসাহ উদ্দীপনা বিরাজ করছে। তবে এবারের সম্মেলন নানা ভাবেই গুরুত্ব পাচ্ছে। কারণ বর্তমান সভাপতি ও সম্পাদক নৌকার বিরুদ্ধে সরাসরি বিদ্রোহ করেছে, চরম বিতর্কিত । এজন্য তৃনমুল চেয়ে আছে নতুন নেতৃত্বের দিকে। তিনি আরো জানান, আসলে কে নেতৃত্বে আসছেন বা আসবেন এবিষয়টা একেবারেই ধোয়াসার মধ্যে রয়েছে। বিদ্রোহীর মদদদাতারা আসতে পারছেন না এটা বলায় যায়। তারা বর্ধিত সভা থেকে তৃনমুল নেতাকর্মীদের তোপের মুখে মঞ্চ থেকে পালিয়েছে। যারা মঞ্চ থেকে পালিয়ে যায় তারা আবার কিসের নেতা হবেন। সাংসদ অত্যান্ত বিচক্ষণ নেতৃত্বের অধিকারী। তিনি আমাদের নেতা ও রাজনৈতিক  অভিভাবক। একজন ক্লিন ইমেজের রাজনৈতিক ব্যক্তি। সে আওয়ামী লীগকে অল্প সময়ের ব্যবধানে বিএনপি জামাতের আখড়া হিসেবে পরিচিত তানোর গোদাগাড়ীতে উঁচু স্হানে নিয়ে গেছেন । সাংসদের বিচক্ষণতার  নেতৃত্বে বিএনপি জামাতের সবকিছুই  তছনছ করে আওয়ামী লীগ কে  সুসংহত করেছেন। যা সবার কাছে পরিস্কার।
আপনি কোন পদে আসছেন  জানতে চাইলে তিনি জানান সবার ইচ্ছে থাকে উপরে উঠার  । তৃনমুল নেতাকর্মীরা  দলের প্রান,  যাকে দায়িত্ব দিবেন বা দেওয়া  সেটাতেই খুশি। তবে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আগ্রহ দেখান তিনি।
এছাড়াও নাম আসছে চান্দুড়িয়া ইউপির চেয়ারম্যান ইউপি আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান, বাধাইড় ইউপির চেয়ারম্যান ইউপি সম্পাদক আতাউর রহমান এবং তরুণ প্রজন্মের আইকন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সমাজ সেবক আবুল বাসার সুজনের।
অপর দিকে রাব্বানী রাজনীতির হতাশা থেকে এবং পদ হারানোর আতঙ্কে পড়ে দিশাহীন হয়ে  সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তার নিজ আইডিতে সাংসদ কে আজে বাজে মিথ্যা পোস্ট দিয়ে আরো সমালোচিত হচ্ছেন।
তিনি গত ইউপি নির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধে ছয়টি ইউনিয়নে মোটরসাইকেল প্রতীকের বিদ্রোহী প্রার্থী দিয়েছিলেন। ওই সময় তিনি ফেসবুকে লিখেছিলেন জিরো সেভেন থেকে লাকি সেভেন হতে হবে এবং দীর্ঘদিন দিন বাইকে চড়া হয়নি এবার চড়তেই হবে, চড়বই। পরাজিত হয়ে হতাশায় পুনরায় পোস্ট চোরের ভোট একদিন হিসেব দিতে হবেই।
অবশ্য বর্ধিত সভার দিন বিকেলে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এভাবে দল করা যায় না।
আমাদের কে মারবে আবার আমাদের কে আসামি করবে, তারাই রাজনীতি করুক। আপনাকে তো আঘাত করেনি জানতে তিনি জানান যে ভাবে উত্তেজিত পরিবেশ হয়েছিল মারামারি তো হতই। আর যাব না, কিছুই করব না। আমি এসএম কামাল ভাইকে জানিয়েছি। দেখি তিনি কি ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *