তানোর উপজেলা আ’লীগের সম্মেলন করতে চায় না কেন রাব্বানী মামুন

রাজশাহী

তানোর প্রতিনিধি: কেন তারা সম্মেলন করতে চায় না, নাকি পদ হারানোর চরম আতঙ্কে, তাছাড়া সম্মেলন করবেনা কেন, তারা আর কতকাল সভাপতি সম্পাদক থাকতে চায়। নাকি তারা ছাড়া দল চলবে না, কেন এই সম্মেলন খেলা, কোন অদৃশ্য এই খেলার পরিচালক, তার মাথায় কি রাজনীতির ভুত ঢুকেছে, সম্মেলন হবে নতুন নতুন নেতৃত্ব তৈরী হবে এটাই তো আওয়ামী লীগ। কেন তাদের এত ভয়, পদ হারালেই কি তারা সব হারিয়ে ফেললো, দল তাদেরকে আরো উঁচু স্হানে নিয়ে যেতে পারে, কারন তারা অত্যান্ত ত্যাগী আওয়ামী লীগ। আর ত্যাগীদের সব সময় মুল্যায়ন হয় অন্য রকম ভাবে, তারা দীর্ঘ সময়ের সভাপতি সম্পাদক, হয়তো উপজেলায় না রেখে জেলাতে নিতে পারেন। কিন্তু নতুন নেতৃত্ব তৈরী না হলে দলের গতি আসে না এটা চিরন্তন বাস্তব। এদুই নেতা আওয়ামী লীগের সাথে স্বাধীনতার প্রতিক নৌকার সাথে চরম গাদ্দারি করেছেন। এদের কোন ক্ষমা নেই, আর করতেও চাইনা। এই রাব্বানীর বিরুদ্ধে মামুন দুবার বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে তাকে পরাজিত করান। যেই মামুন রাব্বানীর গুষ্টি ধোলাই করত, বেইমান, বিশ্বাস ঘাতক, তারমত নেতার দলে কোন দরকার নাই, সে রাজনীতির জোকার, ইত্যাদি ইত্যাদি, তার সাথে যারায় থাকবে তাদের দলে কোন অবস্থান থাকবে না। আর এখন গলায় গলায় পিরিত দুজনের। দুজন যেন একই সুতে গাথা।কেউ কাউকে ছাড়া কোন কিছুই করেন না। কিন্তু সুসংগঠিত আওয়ামী লীগের মধ্যে গ্রুপিং লবিং পক্ষ বিপক্ষ কে তৈরি করল, কখনো সেভেন স্টার, কখনো ফাইভ স্টার, আবার কখনো এমপি ও নৌকা ফুটো করতে বিদ্রোহ করা, দলের সকল ধরনের সুবিধা ভোগ করে, নৌকা প্রতীক নিয়ে রাব্বানী ২০১৬ সালের স্হানীয় নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলন। আর তিনিই নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করছে। আসলে কি তাদের রাজনীতি জনগণের কল্যানে নাকি নারায়ন কামার খোয়াবে।

রাব্বানীর নৌকা বিরোধী কিছু চিত্র, তিনি নৌকার বিরুদ্ধে নিজের ভাইকে প্রার্থী করেছিলেন। ২০১৯ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তার ছোট ভাই সাবেক যুবলীগ ও কৃষক লীগ নেতা শরিফুল ইসলাম কে দল ত্যাগ করিয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির হাতুড়ি প্রতীকে নৌকার বিরুদ্ধে ভোট যুদ্ধে নামান। ওই সময় রাব্বানী মুন্ডুমালা পৌর মেয়র ছিলেন, বিভিন্ন প্রকল্পের কোটি কোটি টাকা তার নিজ গ্রাম প্রকাশ নগর স্কুল মাঠে নির্মিত চেম্বার থেকে পাতার মত উড়িয়েছেন। ওই সময় পৌরসভার সকল বরাদ্দের টাকা ভোটের মাঠে উড়ান তিনি। সঙ্গী হিসেবে সম্পাদক মামুনকে সাথে পেয়ে থেমে থাকেন নি তাদের বিদ্রোহ। এরপর তার একান্ত অনুসারী মুন্ডুমালা পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইদুর রহমানের মাধ্যমে পৌরসভার নয় ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের মাঝে করোনার লকডাউনের সময় নিয়মিত খাদ্য দ্রব্য বিতরন করেন প্রচুর ভাবে। শুধু মাত্র সাইদুর কে মেয়র করার জন্য এবং রাব্বানী এমপি হওয়ার স্বপ্নে বিভর হয়ে পড়েন। আর ঈদে তো পাইকারি ভাবে বিতরণ। তাহলে প্রশ্ন সাইদুর রহমান এত টাকা পেল কোথায়, এর উৎস কি, নাকি কালো টাকা সাদা করনের জন্য। এমনকি নিজ এলাকা রেখে সাইদুর রাজশাহী সিটি মেয়রের তহবিলে ৫০ হাজার টাকা অনুদান দেন, শুধু একটিই কারন মেয়র হওয়ার খোয়াব ও নৌকা প্রতীক পাওয়ার আসায়। কিন্তু নৌকা প্রতীক পান পৌর আওয়ামী লীগের বর্ষিয়ান জনপ্রিয় নেতা তিন বারের মুন্ডুমালা পৌর সদরের কাউন্সিলর, প্যানেল মেয়র পৌর সম্পাদক আমির হোসেন আমিন।

মাথায় নষ্ট হয়ে পড়ে রাব্বানী সাইদুরের। প্রথমে ভোট করার সিদ্ধান্ত না নিলেও পরে জগ প্রতীকে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে মাত্র ৬১ ভোটে মেয়র হন। তিনি রাব্বানীর অন্যতম সহচর অনুসারী। রাব্বানী মামুন বিদ্রোহী প্রার্থীর জন্য নৌকার পক্ষে কোন দিন ভোটে নামেন নি, যদি সাইদুর পরাজিত হয় তাহলেই মহা লুটপাটের চিত্র ফুটে উঠবে। অথচ তানোর পৌর নির্বাচনে তাদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ইমরুল হক নৌকা পাওয়ায় মাটি কামড়ে ভোট করে।

যাওয়া যাক গোদাগাড়ী পৌর নির্বাচনে সেখানে পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ওয়েজ উদ্দিন বিশ্বাস নৌকা পেলেও সেভেন স্টারের আরেক নেতা মনিরুল ইসলাম ওরফে রং লাল বাবু কে নৌকা ফুটো করতে নারিকেল গাছ প্রতীকে বাবু ভোট করে বিজয় হন। তার কয়েক মাস পর তিনি মারা যান। উপনির্বাচনে নৌকা পেয়ে মেয়র হন ওয়েজ উদ্দিন বিশ্বাস।

উল্টো চিত্র গোদাগাড়ী উপজেলার কাকন হাট পৌর নির্বাচনে প্রথম বারের মত নৌকা পান সেভেন স্টারের কেন্দ্রীয় নেতা আতাউর রহমান, সেখানে বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন দূবারের জনপ্রিয় নেতা আব্দুল মজিদ। তিনি এমপি পক্ষের। কিন্তু এমপি মজিদ কে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে ভোট করতে দেন নি এবং মজিদও প্রত্যাহার করে নেন। এবার আসা যাক, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে। তানোরের সাতটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীদের তালিকা জমা নেওয়ার সময় মামুন পৌরসভা থেকে মিছিল নিয়ে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে এসে হট্টগোল সহ মারপিট ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মাধ্যমে মামুন গ্রুপ পৌর ভবনে আশ্রয় নেয়। পরে শান্তিপূর্ণ ভাবে জেলার নেতার সভা করে প্রার্থী দের নাম জমা নেন, আর এই মারপিটের জন্য মামুনকে দায়ী করেন। ওই দিন রহস্য জনক কারনে রাব্বানী আসেন নি।

রাব্বানী মামুন অনুসারী কেউ নৌকা প্রতীক পায়নি। কিন্তু তাদের অনুসারীদের নৌকা প্রতীক দেওয়ার নামে লাখলাখ টাকা বানিজ্য করেছেন। টাকা হালাল করতে প্রতিটি ইউপি তে বিদ্রোহী প্রার্থী দিয়ে শহরে থাকেন রাব্বানী মামুন। এমনকি রাব্বানীর ভাই শরিফুল কে পুনরায় পাচন্দর ইউপি মোটরসাইকেল প্রতীকে ভোট করান রাব্বানী।

প্রতিটি ইউপি তে তাদের প্রার্থীরা পরাজিত হন। মুখ থুবড়ে পড়ে রাব্বানী মামুনের। ওই সময় নিজের ভাইকে বিদ্রোহী প্রার্থী করবেন না। কিন্তু তাদের আরেক বিদ্রোহী গড ফাদার সাবেন জেলা সাধারণ সম্পাদক আসাদের পরামর্শে ভাইকে ভোট করান। পরাজিত হওয়ার খবরে রাব্বানী গালমন্দ করে বলেছিলেন ওইসব নেতাদের আমাকে বিতর্কিত করা হল,আমি ভাইকে ভোট করাবো না, তারা আমাকে রাজনীতির অন্ধকারে ফেলে দিয়েছে। কারন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাব কথা বিদ্রোহী এবং মদদদাতারা কোন পদে আসতে পারবেন না। সেই হিসেবে রাব্বানী মামুনের পদ হারাচ্ছে নিশ্চিত।

এবার আসা যাক মামুনের নৌকার বিরুদ্ধে কিছু চিত্র, বিগত ২০০৯ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পান গোলাম রাব্বানী। বিদ্রোহী প্রার্থী হন মামুন, পরাজিত হয় রাব্বানী। ২০১৪ সালে পুনরায় দলীয় মনোনয়ন পান রাব্বানী, পুনরায় বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে মামুন রাব্বানীর পরাজয় নিশ্চিত করেন। ওই সব নির্বাচনে জাতীয় প্রতিক ছিল না। ২০১৬ সালে মুন্ডুমালা পৌর নির্বাচনে নৌকা প্রতীক পান রাব্বানী। তখন রাব্বানী অসুস্থ ছিলেন। এমপি ফারুক চৌধুরীর নির্দেশে নেতাকর্মীরা মাটি কামড়ে ভোট করে রাব্বানী কে বিজয়ী করান। এর আগে ২০১১ সালে মুন্ডুমালা পৌর নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পান রাব্বানী। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী শীশ মোহাম্মদ। কিন্তু এমপি দূরদর্শীতার কারনে শীশ মোহাম্মদ পরাজিত হন। যা একটাা ইতিহাস।

মামুন অত্যান্ত চতুর, তিনি যাই করুক অর্থনৈতিক ক্ষতির মধ্যে নাই। কামারগাঁ ইউপি ভোটে নৌকার প্রার্থী ফরাদ বিজয় লাভ করেন। কিন্তু বিদ্রোহী মুসলেমকে দিয়ে অযথা মামলা করান।

ফরাদ জানান খাটো মানুষের কুবুদ্ধি অনেক।অযথা মামলা করে আমার লাখ টাকা ক্ষতি করেছে।
চান্দুড়িয়া ইউপির তিনবারের চেয়ারম্যান ইউপি আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান জানান, রাজনীতির জীবনে অনেক কিছুই ঘটে।কিন্তু রাব্বানী মামুন গত ইউপি নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী দিয়েছিল নৌকার বিরুদ্ধে। এর চেয়ে লজ্জার আর কি হতে পারে। সাংগঠনিক ভাবে এবং কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ঘোষণা অনুযায়ী তারা পদের প্রার্থীই হতে পারবেন না, পদে আসা তো দুরে থাক। মুলত এজন্যই তারা সম্মেলন করতে চায় না।তবে আজ হোক কাল হোক সম্মেলন হবে এবং তারাও পদ হারাবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।

সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুনের মোবাইলে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও রিসিভ করেন নি।

আগামী ২৭ জুন সম্মেলন হবে কিনা গোলাম রাব্বানীর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান কখন সম্মেলন হবে সেটা বলা যাচ্ছে না। আর সম্মেলন বিষয়ে আমি কথাও বলতে চায় না।

 

স্ব.বা/বা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *