যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে নারীর অবস্থান কোন পর্যায়ে?

আন্তর্জাতিক লীড

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: আমেরিকার ২০১৮ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনের কোন কোন এলাকার ভোটের পূর্ণাঙ্গ ফলাফল এখনো আসতে বাকি। ধারণা করা হচ্ছে রেকর্ড সংখ্যক নারী (৯৮জন) মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদ বা ‘হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভস’-এর সদস্য হতে যাচ্ছেন।

কিন্তু এই ‘মাইলফলক ফলাফল’ যা মার্কিন সংবাদ মাধ্যম ব্যাপকভাবে তুলে ধরছে, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে তা মোটেই চিত্তাকর্ষক নয়। এর মানে হল, নিম্ন-কক্ষে কংগ্রেসে নারী সদস্য অন্তর্ভুক্ত হবেন ২২.৫ শতাংশের নিচে – যে অনুপাত কোনভাবেই আমেরিকাকে বৈশ্বিক জেন্ডার ভারসাম্যের ক্ষেত্রে চ্যাম্পিয়ন বা শ্রেষ্ঠত্ব দিতে পারবে না।

বিভিন্ন দেশের জাতীয় সংসদগুলোর বৈশ্বিক সংগঠন ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের তথ্যমতে, নিম্ন-কক্ষে নারীদের প্রতিনিধিত্বের দিক থেকে এই নির্বাচনের আগে ১৯৩টি দেশের মধ্যে আমেরিকা ছিল ১০৪তম অবস্থানে।

এমনকি কংগ্রেসে এবার নতুন করে রেকর্ড সংখ্যায় নারী প্রতিনিধিত্বের পরও মাত্র ৭০তম অবস্থানে আছে তারা, এবং এখনো উগান্ডা, পূর্ব তিমুর, জিম্বাবুয়ে এবং ইরাকের মতো দেশের থেকে পিছিয়ে আছে।

সত্যিকার অর্থে কিছু অত্যন্ত গণতান্ত্রিক দেশেও বিষয়টি সঠিকভাবে কার্যকর হচ্ছে না, আবার রুয়ান্ডা পার্লামেন্ট নারী সংখ্যার দিক থেকে শীর্ষে, যে জাতিটি এখনো নৃশংস গৃহযুদ্ধের পরবর্তী সংঘাত মোকাবেলা করছে।

গত সেপ্টেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে দেশটির ন্যাশনাল এসেম্বলিতে নারী সদস্য সংখ্যা ৬১% ছাড়িয়ে যায়। বিশ্বের বৃহৎ অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে কেবল মেক্সিকো ৪৮.২ শতাংশ নারী উপস্থিতির ওপর ভর করে শীর্ষ ৫টি দেশের মধ্যে আছে।

রাটগার্স ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর আমেরিকান উইমেন অ্যান্ড পলিটিক্স এর তথ্য বলে- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মহিলা প্রতিনিধিত্বের অভাব ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে আরও তীব্র ছিল, গত মঙ্গলবারের নির্বাচনের আগ পর্যন্ত মাত্র ৩২২ জন নারী কংগ্রেসে দায়িত্ব পালন করেছেন, (২০৮ ডেমোক্রেটিক পার্টির এবং ১১৪ রিপাবলিকান পার্টির)।

মনোনয়ন জটিলতা
সিএডিব্লউপি- র মতে, প্রার্থীদের সংখ্যার মধ্যে একটি বৈষম্যও ছিল। CAWP অনুসারে, মডারেটর হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভ তিনজন মনোনীত ব্যক্তির মধ্যে একজনেরও কম ছিলেন নারী।মার্কিন জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি নারী, কিন্তু ১৯১৯ সাল থেকে ভোটদানের অনুমতি দেয়া হয়।
আমেরিকান ইউনিভার্সিটির একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জেনিফার ললেজ বলেন, “নারী (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে) অনেক ক্ষেত্রে পুরুষের চেয়ে বেশি এগিয়ে আর কলেজ পর্যায় থেকে সমহারে স্নাতক হচ্ছে।”

উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং রাজনৈতিক দলগুলো
রাজনীতিতে ক্যারিয়ার গঠনের জন্য মোটিভেশন কতটা তা জানতে অধ্যাপক ললেজ নারী ও পুরুষের ওপর নানাভাবে জরিপ চালান। তিনি দেখেছেন, নারীরা প্রায় সময়ই তাদের নিজেদের যোগ্যতাকে অবমূল্যায়ন করে বা খাটো করে দেখে। আমেরিকার রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রে বৈষম্যকে পয়েন্ট হিসেবে তুলে ধরেছেন।বুধবার সন্ধ্যে নাগাদ ১১৮ জন নারী নিশ্চিতভাবে নির্বাচিত হয়েছেন নিম্ন-কক্ষ বা লোয়ার হাউজের সদস্য হিসেবে তাদের মধ্যে ১০০ জনই ডেমোক্রেট সদস্য। গবেষণায় দেখা গেছে আমেরিকার রাজনৈতিক মেরুকরণের কারণে রিপাবলিকান নারীরা সংকটে পড়েছে। জরিপ থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, পুরুষ সহকর্মীদের চেয়ে তারা অধিক মধ্যপন্থী দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী। নারী প্রার্থীদের সমর্থনে ডেমোক্র্যাট কমিটি রিপাবলিকানদের তুলনায় দ্বিগুণ অর্থ তহবিল গঠন করে।

বাধা-বিপত্তি
কিন্তু আইপিইউ র‍্যাংকিং এর দিকে আরও গভীরভাবে নজর দেয়া গুরুত্বপূর্ণ। আফ্রিকার দেশ রুয়ান্ডা প্রায় ২৫ বছর আগে গণহত্যার ঘটনার ১০০ দিন পর চরম বিশৃঙ্খলার মুখে পড়েছিল যাতে আট লাখ থেকে ১০ লাখের প্রাণহানির কথা বলা হয়। সেই গণহত্যার ফলে রুয়ান্ডাতে নারীদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রদান করে এবং যেখানে অল্পসংখ্যক নারী শিক্ষিত ছিল এবং তাদের ক্যারিয়ার গঠনের যোগ্যতা ছিল। ২০০৩ সালে দেশটিতে ৩০% পার্লামেন্টারি আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত রাখার ঘোষণা দিয়ে একটি প্রেসিডেন্সিয়াল ডিক্রি জারি করা হয়। একই বছর নির্বাচনে ৪৮% আসন নারীরা পায়। এখানে কেউ যুক্তি দিতে পারে যে, নারীদের প্রতিনিধিত্ব অপরিহার্য-ভাবে লিঙ্গ সমতা দিতে পারে না। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের জেন্ডার গ্যাপ ইনডেক্স, লিঙ্গ বৈষম্য কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের তালিক তৈরি করেছে যেখানে আমেরিকার অবস্থান (২৮তম) রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বমূলক তালিকার চেয়ে তুলনামূলক বেশ ভাল। আইপিইউ র‍্যাংকিং এ দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা কিউবা জেন্ডার ইকুয়ালিটি ইনডেক্স-এ ২৯তম। বিশেষজ্ঞরা লক্ষ্য দেখেছেন যে নারী রাজনীতিবিদদের চ্যালেঞ্জ ব্যালট বাক্সে গিয়েও শেষ হয় না। যেসব দেশে এমনিতেই রাজনীতিতে নারীদের সংখ্যা কম, তাদের জন্য পরিস্থিতি নিরাপদ নয়- নারীকে রাজনীতিতে প্রবেশ বা নির্বাচনে অংশ নেয়ার ক্ষেত্রে তা কঠোরভাবে নিরুৎসাহিত করতে পারে। ফলাফল এবং কারণ দুটোই গভীর উদ্বেগের, যা স্থায়ী বৈষম্যের এক চক্র তুলে ধরে- জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল পুমযিলে মামবো এনগুয়া গত এপ্রিলে প্রকাশিত এক খোলা চিঠিতে এমনটাই তুলে ধরেছেন।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *