‘দিনে ফকফকা বাত্তি জ্বলে, রাইতে আন্দার’

জাতীয় লীড

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: দিনের বেলায় জ্বলছে সড়ক বাতি, কিন্তু রাতের বেলায় নেই। এমন দৃশ্য চোখে পড়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নতুন ওয়ার্ডগুলোতে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি না থাকায় এই অব্যবস্থাপনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। যেখানে সরকারিভাবে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, সেখানে ডেমরা ও আশপাশের এলাকায় যেন সড়ক বাতি জ্বলা-নেভার খেলা চলছে।

অভিযোগ, সড়ক বাতি নিয়ে নানা বিড়ম্বনায় বাসিন্দাদের ভোগান্তিও বাড়ছে প্রতিনিয়ত। ওয়ার্ডগুলোতে একের পর এক নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বাতিগুলো। কোথাও রাত ১২টার পরই সড়ক বাতির আলো কমতে থাকে, কোথাও আবার বাতিই জ্বলে না। কোথাও কোথাও আবার দিনের বেলাতেও জ্বলে থাকে সড়ক বাতি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ডিএসসিসির ডেমরা থানা এলাকাটি ছিল সাবেক মাতুয়াইল ইউনিয়নের কিছু অংশসহ সারুলিয়া ও ডেমরা ইউনিয়ন এলাকা নিয়ে। পরবর্তীতে এ তিনটি ইউনিয়নকে ডিএসসিসির সঙ্গে নতুনভাবে ওয়ার্ড পর্যায়ে যুক্ত করা হয়েছে। এখানে ইউনিয়ন পর্যায়ে সড়ক উন্নয়নের সময় এলাকাগুলোতে বেশ কিছু সড়ক বাতি স্থাপন করা হয়েছিল, যা এখনো চলমান। একইসঙ্গে ওয়ার্ড পর্যায়ে বেশ কিছু সৌরবিদ্যুৎসম্পন্ন সড়ক বাতিও স্থাপন করা হয়েছে, যেগুলো প্রায় সবই নষ্ট অবস্থায় রয়েছে। এক্ষেত্রে কোনো তদারকিও নেই এখানে। পর্যায়ক্রমে সুষ্ঠু ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ সড়ক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি রাস্তায় সড়ক বাতিও স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডেই ৭০০ থেকে ৯০০ সড়ক বাতি ইতোমধ্যে স্থাপন করা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ডেমরা থানা এলাকায় ডিএসসিসির প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডেই প্রতিনিয়ত সড়ক বাতির সার্ভিসে সমস্যা হচ্ছে। বিচ্ছিন্নভাবে প্রতিটি ওয়ার্ডেই প্রতিদিন একের পর এক সড়কবাতি নিভে যাচ্ছে। প্রতিটি ওয়ার্ডেই বিচ্ছিন্নভাবে কিছু এলাকায় দিনের বেলাতেও সড়ক বাতি জ্বলে থাকে, কোথাও আবার নিভু নিভু করে, কোথাও আবার জ্বলেই না। ডিএসসিসির ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডের বামৈল পূর্বপাড়া এলাকায় গত ২ মাস ধরে দিনের বেলায় অন্তত ২০টি খুঁটিতে সড়ক বাতি জ্বলে থাকে। তাছাড়া ওই ওয়ার্ডের ডগাইর, হাজী বাদশা মিয়া রোড, ভুট্টু চত্বর থেকে মিলন চত্বর, বাঁশেরপুল, ফার্মের মোড়, কোদালদোয়াসহ প্রতিটি এলাকাতেই সড়ক বাতি নষ্ট রয়েছে- যা পর্যায়ক্রমে অভিযোগের ভিত্তিতে ঠিক করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে কখনো ১ দিন সময় লাগে কখনো আবার সপ্তাহব্যাপী বন্ধ থাকে।

সরেজমিনে আরও দেখা গেছে, ডিএসসিসির ৬৪নং ওয়ার্ডের মান্নান স্কুল সংলগ্ন সড়ক বাতিগুলো দিনের বেলা জ্বলে থাকে। একই ওয়ার্ডের বাশেরপুল, নুর মহলের গলি দিয়ে দক্ষিণের এলাকায়, কোনাপাড়া আব্দুল বারিক মজুমদার (কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ) রোডের বাতিগুলো কিছুক্ষণ জ্বলে আবার কিছুক্ষণ বন্ধ থাকে। ৬৫নং ওয়াড মাতুয়াইল মুসলিম নগর শহীদ অলি রোডে কিছু লাইট গত ১-২ মাস ধরে জ্বলছে না। ৬৭ নম্বর ওয়ার্ডের তালেব আলি মসজিদ রোড ও লালশাহ মাজার এলাকার বেশ কিছু সড়ক বাতি প্রায়ই বন্ধ থাকে বা নষ্ট হয়ে থাকে যেগুলো কেউ ঠিক করতে আসে না বা আসলেও অনেক দিন পর। ৬৯ নম্বর ওয়ার্ডের কামারগোপ ৪নং গেট এলাকায় সড়কে কয়েকটি বাতি নিভে আছে। ৭০ নম্বর ওয়ার্ডের ধিৎপুর, নলছাটা, ঠুলঠুলিয়া, তাম্বুরাবাদ, কায়েতপাড়া, মেন্দিপুর, শুন্নাটেংরা ও পাইটিসহ প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে সড়ক বাতি বিচ্ছিন্নভাবে নষ্ট হয়ে আছে।

এদিকে ডেমরা-রামপুরা সড়কের আমুলিয়া মেন্দিপুর থেকে মোস্তমাঝির মোড় পর্যন্ত দিনের বেলা সব বাতি জ্বলে থাকে। এসব বাতি দ্রæত মেরামত হয় না, পরবর্তীতে হলেও আবার পরক্ষণেই নষ্ট হয়ে যায় বা বাতি জ্বলেই থাকে।

এ বিষয়ে বামৈল পূর্বপাড়া এলাকার বাসিন্দা নাসির মেম্বার বলেন, আমি এ পর্যন্ত বেশ কয়েক দফায় সড়ক বাতির সমস্যার কথা জানালেও কোনো কাজ হচ্ছে না। এখানে দিনের ২৪ ঘণ্টাই বাতি জ্বলে, কোথাও আবার জ্বলে না।

এ বিষয়ে কোনাপাড়া এলাকার বাসিন্দা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রায়ই দেহি দিনে ফকফকা বাত্তি জ্বলে, আর রাইতে আন্দার, রাস্তায় চলনই যায় না। এইডা আবার কোন নিয়ম? জীবন ভরা দেখতাছি রাইতে বাত্তি জ্বলে আর দিনে বন্ধ থাকে, কিন্তু আমগো এলাকায় কোনো কোনো হানে সারাদিনই বাত্তি জ্বলে, কোনো হানে আবার রাইতেও জ্বলে না।’

এ বিষয়ে ডিএসসিসির ৬৮, ৬৯ ও ৭০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাহমুদুল হাসান পলিন, সালাহ উদ্দিন আহম্মেদ ও আতিকুর রহমান আতিক জানান, ডেমরায় সড়ক বাতি সার্ভিসের ক্ষেত্রে স্থায়ী লোকবল নেই। ওয়ার্ড কার্যালয় থেকে সার্ভার রুমে ফোন করলে অনেক পরে এসে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এসে বন্ধ বাতি চালু করে।

এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৮ আঞ্চলিক কার্যালয়ের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, দিনের বেলা সড়ক বাতি জ্বলে থাকে এ বিষয়ে এখন জানলাম। এখন থেকে ব্যবস্থা নেব। আর সড়ক বাতি মেরামতে ডিএসসিসির কাজ চলমান রয়েছে।

এ ছাড়া ওয়ার্ড পর্যায়ে স্থায়ীভাবে লোক নিয়োগের বিষয়টি ও চাহিদার বাতিগুলো নিয়ে কর্তৃপক্ষ যথাসময়ে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

স্ব.বা/ রু

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *