কাশ্মির নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে পাকিস্তান, দাবি ভারতীয় ওয়েবসাইটের

আন্তর্জাতিক লীড

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিমের একটি অঞ্চল কাশ্মির। ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত ভূখন্ডটি একক নিয়ন্ত্রণে থাকলেও এরপর এটি প্রাথমিকভাবে দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এরপর ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট সংবিধানের ৩৭০ ধারা রদ করে ভারতশাসিত কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে দেশটির মোদি সরকার।

সেসময় এর বিরুদ্ধে কাশ্মির উপত্যকায় ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। নয়াদিল্লির এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে জাতিসংঘসহ বৈশ্বিকভাবে ব্যাপক সক্রিয় হয় পাকিস্তান। সেটি কার্যত এখনও অব্যাহত আছে। তবে এবার কাশ্মির নিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের অভিযোগ এনেছে ভারতীয় একটি ফ্যাক্টচেকিং ওয়েবসাইট।

ডিএফআরএসি নামের হিন্দি ও ইংরেজি ভাষার ওই ফ্যাক্ট চেক নিউজ পাকিস্তানি অপপ্রচারের বেশ কিছু তথ্য প্রমাণও তুলে ধরার চেষ্টা করেছে। মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) ওয়েবসাইটটিতে প্রকাশিত একটি বিশেষ প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ১৯৪৭ সালের অক্টোবরে পাকিস্তানের নর্থ ওয়েস্ট ফ্রন্টিয়ার প্রভিন্স (এনডব্লিউএফপি) থেকে বহিরাগত পশতুন উপজাতিরা কাশ্মির অঞ্চলে আক্রমণ করে। সেসময় হাজার হাজার লোককে সেখানে ‘হত্যা করা’ হয়।

এরপর গোটা উপত্যকায় পরিস্থিতি অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যায়। এরই ধারাবাহিকতায় একপর্যায়ে (বর্তমান ভারতশাসিত কাশ্মিরের) বারামুল্লায় হানাদারদের হাতে ‘১১ হাজার মানুষ গণহত্যার শিকার’ হয়। তবে জম্মু ও কাশ্মিরের তৎকালীন মহারাজা শাসক হরি সিং ভারত সরকারের কাছে কাশ্মিরকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন।

মূলত ১৯৪৭ সালের অক্টোবরে পাকিস্তানের পশতুন উপজাতীয় বাহিনীগুলোর আক্রমণের মুখে হরি সিং ভারতে যোগ দেবার চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন এবং ভারতের সামরিক সহায়তা পান। পরিণামে ১৯৪৭ সালেই শুরু হয় ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ – যা চলেছিল প্রায় দু’বছর ধরে।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ১৯৪৮ সালে কাশ্মির প্রসঙ্গ উত্থাপন করে ভারত। এরপর জাতিসংঘের ৪৭ নম্বর প্রস্তাবে কাশ্মিরে গণভোট, পাকিস্তানের সেনা প্রত্যাহার এবং ভারতের সামরিক উপস্থিতি ন্যূনতম পর্যায়ে কমিয়ে আনতে আহŸান জানানো হয়।

কাশ্মিরে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয় ১৯৪৮ সালে, তবে পাকিস্তান সেনা প্রত্যাহার করতে অস্বীকার করে। তখন থেকেই কাশ্মির কার্যত পাকিস্তান ও ভারত নিয়ন্ত্রিত দুই অংশে ভাগ হয়ে যায়।

অন্যদিকে ১৯৬২ সালের চীন-ভারত যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে চীন কাশ্মিরের আকসাই-চিন অংশটিতে নিয়ন্ত্রণ কায়েম করে। আর তারপরের বছর পাকিস্তান – কাশ্মিরের ট্রান্স-কারাকোরাম অঞ্চলটি চীনের হাতে ছেড়ে দেয়। সেই থেকে কাশ্মিরের নিয়ন্ত্রণ পাকিস্তান, ভারত ও চীন – এই তিন দেশের মধ্যে ভাগ হয়ে আছে।

এরপর ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট ভারতশাসিত কাশ্মিরের বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা বাতিল করা হয়। ওই পদক্ষেপের মাধ্যমে পূর্বতন জম্মু ও কাশ্মির রাজ্য পুরোপুরি মুছে ফেলে উপত্যকাটিকে লাদাখ এবং জম্মু-কাশ্মির নামে দুটি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে রূপান্তরিত করা হয়।

মূলত এরপরই কাশ্মির ইস্যুতে পাকিস্তান এবং ভারতের মধ্যে দ্ব›দ্ব নতুন গতি পায়। এমনকি সেই ঘটনার তিন বছর পরেও পাকিস্তান এই বিষয়ে প্রতারণামূলক তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ ভারতীয় এই ফ্যাক্টচেকিং ওয়েবসাইটের।

ডিএফআরএসি’র এই এক্সক্লুসিভ রিপোর্টটিতে বিশ্লেষণ করা হয়েছে যে, কীভাবে পাকিস্তান কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের বিষয়ে ভারতের বিরুদ্ধে বিদ্বেষপূর্ণ ভুল তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। সেই ধারাবাহিকতায় গত ৫ আগস্ট সারা বিশ্বে পাকিস্তান দূতাবাসগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে ইয়ুম-ই-ইস্তেহসাল (শোষণ দিবস) পালনের বিষয়টি টুইট করেছে।

এছাড়া পাকিস্তানি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা ভারতকে লক্ষ্য করে পোস্ট দেওয়ার পাশাপাশি ভুল তথ্য দিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছে বলেও দাবি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ভারত ৬০ লাখ হিন্দুকে কাশ্মিরের বাসিন্দা বানিয়েছে বলে পাকিস্তানিদের অনেককে বলতে শোনা যায়।

তবে ডিএফআরএসি’র দাবি, ভারতশাসিত জম্মু ও কাশ্মির নতুন ছন্দে অগ্রসর হচ্ছে। যেসব মানুষ এখানে আবাসনের সুবিধা পাচ্ছে তাদের মধ্যে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মিরের এবং ছাম্বের বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের প্রায় ৪২ হাজার পরিবারও রয়েছে।

এছাড়া পশ্চিম পাকিস্তানি উদ্বাস্তুদের ৫ হাজার ৭৬৪ পরিবার, সীমান্ত এলাকার সাড়ে ৩ লাখ বাসিন্দা এবং কাশ্মিরি অভিবাসীদের ৪৪ হাজার পরিবারও রয়েছে বলে ডিএফআরএসি’র এই এক্সক্লুসিভ রিপোর্টটিতে দাবি করা হয়েছে।

পাকিস্তানি অপপ্রচারের দ্বিতীয় বিষয় হিসেবে বলা হয়েছে, জম্মু ও কাশ্মিরে মুসলমানদের সংখ্যালঘুতে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে ২০১৯ সালের ৫ আগস্টের পদক্ষেপটি নিয়েছিল মোদি সরকার। তবে বাস্তবতা হিসেবে ভারতীয় ওয়েবসাইট দাবি করেছে, কাশ্মির অঞ্চলে ‘জনসংখ্যার কোনো পরিবর্তন নেই’। বিশেষ মর্যাদা বাতিলের তিন বছর পরেও কাশ্মির উপত্যকা একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্য।

এতে আরও বলা হয়েছে, ৯০ সদস্য বিশিষ্ট বিধানসভার মধ্যে কাশ্মিরে ৪৭টি আসন এবং জম্মু অঞ্চলে রয়েছে ৪৩টি আসন। কাশ্মির হলো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকা যেখানে ২০১৪ সালের হিসাবে ৯৭.১৬ শতাংশ মুসলমান রয়েছে। কাশ্মিরের প্রতিনিধিত্ব বেশি মানে এই অঞ্চলে মুসলিম প্রতিনিধিত্বও বেশি।

আর তাই মোদি সরকার কাশ্মিরের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলকে মুসলিম সংখ্যালঘুতে পরিণত করার চেষ্টা করছে এমন কথা বলা ঠিক নয় বলেও দাবি করেছে ডিএফআরএসি।

স্ব.বা/রু

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *