খরার ধকল শেষ না হতেই সারে নাকাল কৃষক

জাতীয়

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: টানা তীব্র খরায় জয়পুরহাট জেলাজুড়ে লক্ষ্যমাত্রার আমন আবাদ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছিল। তবে মৌসুমের শেষে এসে গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে জেলায় আমন রোপণ প্রায় শেষ হয়েছে। এরই মধ্যে হঠাৎ করে ইউরিয়ার দামবৃদ্ধি ও সার সংকটে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। চাহিদামতো সার না পাওয়ায় ধান চাষ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তারা।

কৃষকদের অভিযোগ, জয়পুরহাটের খুচরা দোকানগুলোতে তারা ইউরিয়া সার পাচ্ছেন না। এছাড়া বিসিআইসির অনুমোদিত ডিলারদের দোকানে গেলেও চাহিদামতো সার দেওয়া হচ্ছে না। দোকানে দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর পাঁচ-দশ কেজি করে ইউরিয়া দেওয়া হচ্ছে।

টানা অনাবৃষ্টি আর তীব্র খরার পর কয়েকদিনের বৃষ্টিতে আমন রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন জয়পুরহাটের কৃষকরা। নিয়ম অনুযায়ী ধান রোপণের ২/৩ সপ্তাহ থেকে এক মাসের মধ্যে সার দিতে হয়। তাই এখন সার সংগ্রহে চাষিদের দৌড়াতে হচ্ছে ডিলার ও খুচরা বিক্রেতাদের দোকানে দোকানে। তবে তারা চাহিদামতো সার পাচ্ছেন না। ব্যবসায়ীরা চাহিদামতো সার দিচ্ছেন না।

আক্কেলপুরের কৃষক এনামুল হক বলেন, খুচরা দোকানে গিয়ে ইউরিয়া সার পাইনি। ডিলারের দোকানে এসেছি। আমাকে ১০ কেজি ইউরিয়া সার দিয়েছে। আমার এক বস্তা (৫০ কেজি) সারের দরকার। বাকি সার কোথায় পাই সেই চিন্তা করছি। এখন বেশি দামেই সার কিনতে হবে।

কালাইয়ের কৃষক আজমল হোসেন বলেন, আমার ২০ কেজি ইউরিয়া দরকার। আমাকে পাঁচ কেজি সার দিয়েছে। বাজারে খুচরা দোকানে সার নেই।

কৃষকদের অভিযোগ, কৃষি অফিস বলছে- সরকারের কাছে পর্যাপ্ত সার মজুত আছে। কিন্তু সার ব্যবসায়ীদের কাছে গেলে তারা সংকটের কথা বলছেন। তাই বাধ্য হয়ে তাদের বেশি দামে সার কিনতে হচ্ছে।

খুচরা সার ব্যবসায়ী সুজন কুমার মÐলের দাবি, বিসিআইসির অনুমোদিত ডিলাররা তাদের চাহিদা অনুযায়ী সার দিচ্ছেন না। আবার দামও বেশি নিচ্ছেন। তাই সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে তাদের বেশি দামে সার বিক্রি করতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, প্রশাসনের কড়া হুশিয়ারি ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের ভয়ে ডিলাররা দোকানে সার বিক্রি বন্ধ রেখেছেন। ডিলাররা নাকি এ মাসে সরকারিভাবেই সারের বরাদ্দ কম পেয়েছেন। তাই তারা চাহিদামতো সার সরবরাহ করতে পারছেন না।

আক্কেলপুর কলেজ বাজারের খুচরা সার (সাব-ডিলার) বিক্রেতা আব্দুর রাজ্জাক জানান, অনুমোদিত ডিলাররা তাদের সার দিচ্ছেন না। আবার সারের যে দাম নিচ্ছেন তাতে নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি না করলে লোকসান হবে। আবার বেশি দাম নিলে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা করা হচ্ছে। এসব কারণে তারা সার বিক্রি করছেন না।

আক্কেলপুরের বিসিআইসির ডিলার আমিনুল ইসলাম ও কালাইয়ে বিসিআইসির ডিলার হুমায়ন কবির তালুকদারের দাবি, সার নিতে এসে এ পর্যন্ত কোনো কৃষকই খালি হাতে ফেরত যাননি। পর্যাপ্ত সার না থাকায় কম-বেশি করে দেওয়া হচ্ছে। আর খুচরা ব্যবসায়ীদের দেওয়া হচ্ছে না। তবে বরাদ্দ বেশি পেলে অবশ্যই তাদেরও সার দেওয়া হবে।

আক্কেলপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরান হোসেন বলেন, সারের কোনো সংকট নেই। কৃষকেরা আমন মৌসুমে অযাচিতভাবে আগামী আলুর জন্য অগ্রিম সার মজুত করছেন। এ কারণে কৃষকদের কম পরিমাণে সার দেওয়া হচ্ছে।

দাম বেশি নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, কিছু কিছু দোকানে দাম বেশি নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে এসব দোকানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জরিমানা করা হয়েছে। তাছাড়া এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।

এদিকে, সার সংকটের অভিযোগ অস্বীকার করে জয়পুরহাট জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, জয়পুরহাটে এ মৌসুমে ৬৯ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের জন্য ৮ হাজার ৬৯৫ মেট্রিক টন ইউরিয়া মজুত আছে। এ মজুত পর্যাপ্ত, তাই সারের কৃত্রিম সংকট যাতে না তৈরি হয় সেজন্য নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে।

জয়পুরহাট জেলা প্রশাসক শরীফুল ইসলাম বলেন, আমার জানামতে সারের কোনো সংকট নেই। কৃষকেরা আলুর জন্য আগাম সার মজুত করছেন বলে জানতে পেরেছি। এরপরও যদি কেউ সারের দাম বেশি নেন তাহলে ওই দোকানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *