ভেঙে দেয়া হবে একযুগ আগের তৃণমূল কমিটি

জাতীয়

দলের কেউ দুর্নীতি করলে ব্যবস্থা নেবে দুদক -কাদের

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় কাউন্সিল সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করতে ১২টি উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। এসব উপকমিটির নেতৃত্বে আছেন একজন করে প্রেসিডিয়াম সদস্য।

এছাড়া ২১ সেপ্টেম্বর থেকে (পূজার ছুটি বাদে) বিভাগ ও জেলা সফরে নামছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। তারা ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত সফর করবেন। এ সময় একযুগ আগে যেসব কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, সেগুলো পুনর্গঠনে কাজ করবেন তারা। এক্ষেত্রে কোনো কোনো স্থানে কাউন্সিল ও বর্ধিত সভার আয়োজন করা হবে।

জেলা সফর ও জাতীয় কাউন্সিলের যাবতীয় প্রস্তুতির দেখভাল করবেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

বুধবার বিকালে ধানমণ্ডির আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সম্পাদকমণ্ডলীর সভা শেষে একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে এসব তথ্য। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ সভায় সভাপতিত্ব করেন।

ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ২০ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠেয় জাতীয় কাউন্সিল উদ্বোধন হবে বেলা সাড়ে ৩টায়, পরের দিন ২১ তারিখও কাউন্সিল অধিবেশন চলবে। শনিবার থেকে জেলা-বিভাগগুলোতে বর্ধিত সভার মধ্যদিয়ে সম্মেলনের প্রস্তুতি শুরু হবে বলে জানান মন্ত্রী। দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকরা তৃণমূল সফর করবেন।

বিভিন্ন ইউনিটের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির বিষয়ে কাদের বলেন, মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলো নিয়ে আমাদের যারা বিভাগীয় পর্যায়ে সমন্ব^য় করছেন, তারা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেসব ইউনিটে সম্মেলনের দিন-তারিখ ঠিক করবেন। ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলোর সম্মেলন শেষের সার্কুলার ইতিমধ্যে আমরা জেলায় পাঠিয়ে দিয়েছি।

এত স্বল্প সময়ে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সম্মেলনের আয়োজন সম্ভব কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ৩ বছরে অনেক কমিটি হয়েছে। এ সময়ে সেগুলোর কাউন্সিল অনেক আগে হয়েছিল। আমরা কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের কমিটি ২২ বছর পরে দিয়েছি, নারায়ণগঞ্জের কমিটি ১৭ বছর পর দিয়েছি, ময়মনসিংহের কমিটিও হয়েছে অনেক দিন পরে। আওয়ামী লীগ ইচ্ছে করলে পারে। আমাদের ‘টিমওয়ার্ক’ আছে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ বা দলটির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কোনো নেতা দুর্নীতি করলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ব্যবস্থা নেবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগে অপকর্ম হয়নি, কেউ করেনি এটা বলি না। অপকর্ম হলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেই। এটা অন্তত আওয়ামী লীগে হয়, অন্য কোনো দল ব্যবস্থা নেয় না। বিএনপিও ব্যবস্থা নেয় না।

কাদের বলেন, আওয়ামী লীগে এ ‘পলিটিক্যাল কনসার্ন’ আছে, কাজেই কেউ অনিয়ম-দুর্নীতি করলে শাস্তি আছে, দুদককে বলা আছে আওয়ামী লীগের কেউ দুর্নীতি, অপকর্ম করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে।

ছাত্রলীগ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের উত্তরে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমি ছাত্রলীগ নিয়ে কোনো কথাই বলব না। আমি একটি শব্দও বলব না। প্রতিদিন আপনারা এ প্রশ্নটা কেন করেন। এ নিয়ে তো আমি বলে দিয়েছি। এটা প্রধানমন্ত্রী নিজেই দেখছেন। দায়িত্বপ্রাপ্তদের গাইডলাইন দিচ্ছেন। এ বিষয়ে আমি আর কিছু বলতে চাই না।

২০ ও ২১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলের দিনক্ষণ নির্ধারণ হয় শনিবার অনুষ্ঠিত দলটির কার্যনির্বাহী সংসদের সভায়। আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কাউন্সিল হয় ২০১৬ সালের ২১ ও ২২ অক্টোবর।

দীর্ঘ বছর পেরিয়ে গেলেও আওয়ামী লীগের ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে মাত্র একটি জেলায় (মৌলভীবাজার) সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদের এ ব্যর্থতায় ক্ষোভ প্রকাশ করে শনিবারের বৈঠকে তাদের ভর্ৎসনা করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পরদিন রোববার ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে সব জেলা-উপজেলা, পৌরসভা, মহানগর পর্যায়ে কাউন্সিল করার নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠান ওবায়দুল কাদের।

এদিকে নানা জটিলতার সারা দেশে পাঁচ শতাধিক ইউনিটের কমিটি গঠন দুরূহ মনে করছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের অনেক নেতা। সম্পাদকমণ্ডলীর সভায় সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে শনিবার থেকে যেসব কমিটির মেয়াদ একযুগ বা তার বেশি সেসব ইউনিটে কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় দলটি।

বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা যুগান্তরকে জানান, একসঙ্গে সব জেলা-উপজেলায় কাউন্সিল না করতে আলোচনা হয়েছে। বেশি পুরনো বিশেষ করে একযুগ আগের এমন কমিটিগুলো ভেঙে নতুন কমিটি কিভাবে গঠন করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করে সংশ্লিষ্ট জেলা-উপজেলায় কাউন্সিল করার সিদ্ধান্তও হয়।

তারা আরও জানান, আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে সদস্য সচিব করে কাউন্সিল প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়েছে। দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সব সদস্যকে এ কমিটির সদস্য করা হয়েছে।

কাউন্সিল সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করতে যে ১২টি উপকমিটি গঠন করা হয়েছে, সেগুলো হল- অভ্যর্থনা উপকমিটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ নাসিম; সদস্য সচিব দীপু মনি, অর্থ উপকমিটির আহ্বায়ক কাজী জাফরউল্লাহ; সদস্য সচিব এইচএন আশিকুর রহমান, ঘোষণাপত্র উপকমিটির আহ্বায়ক শেখ ফজলুল করিম সেলিম; সদস্য সচিব আবদুর রহমান, দফতর উপকমিটির আহ্বায়ক পীযুষ ভট্টাচার্য; সদস্য সচিব আবদুস সোবহান গোলাপ, মঞ্চ ও সাজসজ্জা কমিটির আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর কবির নানক; মির্জা আজম, প্রচার ও প্রকাশনা কমিটির আহ্বায়ক এইচটি ইমাম; সদস্য সচিব হাছান মাহমুদ, শৃঙ্খলা উপকমিটির আহ্বায়ক আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ; সদস্য সচিব আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, গঠনতন্ত্র সংশোধন উপকমিটির আহ্বায়ক আবদুর রাজ্জাক; সদস্য সচিব আফজাল হোসেন, স্বাস্থ্য উপকমিটির আহ্বায়ক মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন; সদস্য সচিব রোকেয়া সুলতানা, সাংস্কৃতিক উপকমিটির আহ্বায়ক আতাউর রহমান; সদস্য সচিব অসীম কুমার উকিল, খাদ্য উপকমিটির আহ্বায়ক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। এছাড়া কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সংশ্লিষ্ট উপকমিটির সদস্যরা আছেন এসব কমিটিতে।

খসড়া উপকমিটির এ তালিকা বুধবার রাতেই আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গণভবনে দলের সভাপতির কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। অনুমোদনের পরপরই তা গণমাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হবে বলেও জানান বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা।

সম্পাদকমণ্ডলীর সভায় উপস্থিত ছিলেন- আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, একেএম এনামুল হক শামীম, ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, মিজবাহ উদ্দিন সিরাজ, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সবুর, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলি প্রমুখ। সূত্র: যুগান্তর।

স্ব.বা/শা 

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *