খুলনায় বাস-লঞ্চ ধর্মঘট, পথে পথে যাত্রীদের ভোগান্তি

জাতীয়

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: খুলনায় দুই দিনের পরিবহন ধর্মঘট চলছে। চলবে আগামীকাল শনিবার পর্যন্ত। একইসঙ্গে ৪৮ ঘণ্টার লঞ্চ ধর্মঘটও চলছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ মানুষ। শুক্রবার (২১ অক্টোবর) সকাল থেকে অনেক যাত্রী সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনালে এসে বাস না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে ফিরে যান। অনেকেই ইজিবাইক ও সিএনজিতে গন্তব্যে রওনা দিচ্ছেন।

বাস টার্মিনাল এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রী মো. কাইয়ুম শিকদার দিপু ঢাকা পোস্টকে বলেন, ধর্মঘট থাকার কারণে মানুষ এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যেতে পারছে না। অনেকে জানেও না ধর্মঘট চলছে। রাস্তায় কোনো গাড়ি নেই, মানুষ যাতায়াত করবে কীভাবে। আমি আসছিলাম গোপালগঞ্জ যাবে। কিন্তু গাড়ি নেই।

সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে যানবাহনের জন্য অপেক্ষমাণ খান আব্দুল মোতা‌লিব বলেন, বা‌গেরহা‌টের মোরেলগঞ্জ থে‌কে জ‌মির কাগজ উঠাতে এসে‌ছি‌। কাজ শেষ এখন বাড়ি যাব। শুনেছিলাম ধর্মঘট চল‌ছে, এসে দেখি বাস চলছে না। ইজিবাইক বা সিএনজিতে যাওয়া যায় কিনা সে জন্য দাঁড়িয়ে আছি।

অপর এক যাত্রী সাইফুল ইসলাম জরুরি কাজে ঢাকায় যাবেন। সোনাড‌ঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে এসে দে‌খেন কোনো গা‌ড়ি খুলনা থে‌কে ছেড়ে যাচ্ছে না। তিনি  বলেন, খুলনা থেকে জরুরি প্রয়োজনে ঢাকায় যাব। আমি বুঝতে পারিনি যে ধর্মঘট এতোটা কড়াকড়ি হবে। এখানে এসে দেখি বাস চলছে না। তবুও দাঁড়িয়ে আছি, যদি কোনোভাবে যাওয়া যায়। না হলে শনিবার যেতে হবে।

রিকশাচালক রবিউল ইসলাম বলেন, গাড়ি বন্ধ, যাত্রী নেই। এখন খাবো কী, কীভাবে সংসার চলবে? সেই চিন্তাই রয়েছি। জিনিসপত্রের অনেক দাম। শুনেছি শনিবার থেকে অবরোধ হবে। আজ হবে জানতাম না। যাত্রী মোটেও নেই।

বাসচালক আব্দুর রব বলেন, বাস বন্ধ থাকায় যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েছেন। সকাল থেকে বাস নেই, মাইক্রোও নেই। যাত্রীরা এসে ফিরে যাচ্ছে। অনেকে মোটরসাইকেল, ইজিবাইক ও সিএনজিতে চলাচল করছেন।

খুলনা-মোংলা রুটের অনন্যা পরিবহনের শ্রমিক মো. জনি  বলেন, নসিমন, করিমন বন্ধের দাবিতে ধর্মঘট চলছে। তাই আমরা অবসর সময় কাটাচ্ছি।

পরিবহন শ্রমিক হানিফ মৃধা বলেন, আজ সকাল থেকে বাস চলাচল বন্ধ। শনিবারও বন্ধ থাকবে। শ্রমিকরা অনেকেই স্ট্যান্ডে খেলাধুলা করছে। খুলনা, পাইকগাছা, সাতক্ষীরা, ঢাকা, যশোরসহ সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।

বাংলাদেশ লঞ্চ লেবার অ্যাসোসিয়েশনের খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন  বলেন, শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধিসহ ১০ দফা দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট আহ্বান করা হয়েছে। দাবি মেনে নেওয়া হলে যে কোনো মুহূর্তে ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হবে। এর সঙ্গে বিএনপির সমাবেশের কোনো সম্পর্ক নেই। খুলনা থেকে দক্ষিণাঞ্চলে ছয়টি লঞ্চ ছেড়ে যায় বলে তিনি জানান।

লঞ্চযাত্রী অনুপ মন্ডল বলেন, সমাজসেবা অধিদপ্তরের সমাজকর্মী নিয়োগ পরীক্ষা দিতে রাতেই কয়রা থেকে খুলনায় এসেছি। রাতে ছিলাম এক আত্মীয়ের বাসায়। পরীক্ষা দিয়ে চলে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল, কিন্তু বাস চলাচল না করাই লঞ্চে কয়রায় ফিরে যাওয়া যাবে কিনা সেজন্য লঞ্চঘাটে এসেছি। এসে দেখি লঞ্চও বন্ধ।

এদিকে বাস ও লঞ্চ ধর্মঘটের বিষয়ে বিএনপি নেতারা বলছেন, বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে এই ধর্মঘট পালন করা হচ্ছে।

খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা বলেন, শনিবার (২২ অক্টোবর) খুলনার সোনালী ব্যাংক চত্বরে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ। এই গণসমাবেশে নেতা-কর্মীদের আসা ঠেকাতে সরকারের নির্দেশে বাস মালিক সমিতি এই ধর্মঘট ডেকেছে। এখন নৌপথও বন্ধ করে দিয়েছে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, কোনো কিছুতেই বিএনপির গণসমাবেশ ঠেকানো যাবে না। আমরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে চাই। খুলনার গণসমাবেশে হবে জনস্রোত। সমাবেশ সফল হবে।

প্রসঙ্গত, বুধবার (১৯ অক্টোবর) খুলনা জেলা বাস-মিনিবাস কোচ মালিক সমিতির জরুরি সভায় পরিবহন দুই দিন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সমিতির কর্মকর্তা, শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ ও মালিকদের উপস্থিতিতে সভায় বলা হয়, হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত অমান্য করে সড়ক-মহাসড়কে নসিমন-করিমন, মাহেন্দ্র, ইজিবাইক ও বিআরটিসি গাড়ি চলাচল করছে। অবৈধ নছিমন-করিমন, মাহেন্দ্র, ইজিবাইক ও বিআরটিসির যত্রতত্র কাউন্টার বন্ধের দাবিতে ২১-২২ অক্টোবর দুই দিন মালিক সমিতির সব গাড়ি বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়।

স্ব.বা/বা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *