আল্লাহর ওয়াস্তে ছবি তুইলেন না, আমাকে বেইজ্জতি কইরেন না: শামীম

জাতীয়

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজির সুনির্দিষ্ট অভিযোগে যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা জিকে শামীমকে আটক করেছে র‌্যাব। শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুর ২টার দিকে রাজধানীর নিকেতনে তার ব্যবসায়িক কার্যালয় জিকে বিল্ডার্স থেকে শামীমকে আটক করা হয়।

এর আগে বেলা ১২টা থেকে তার কার্যালয়টি ঘিরে রাখেন র‌্যাব সদস্যরা। এর পর ভেতরে অভিযান চালান তারা।

অভিযানের পর শামীমের কার্যালয়ে টাকার পাহাড় খুঁজে পান র‌্যাব সদস্যরা।

র‌্যাবের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, অভিযানে শামীমের কার্যালয় থেকে আগ্নেয়াস্ত্রসহ নগদ ১০ কোটি টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া ১৬৫ কোটি ৮০ লাখ টাকার এফডিআর (ফিক্সড ডিপোজিট রেট) জব্দ করা হয়েছে। এছাড়াও ৭টি শর্টগান, বিদেশি মূদ্রা ও মাদক উদ্ধার করা হয়েছে।

র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম তার কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে এসব উদ্ধার করেন।

অভিযান চলাকালে সাংবাদিকদের জব্দ নগদ অর্থ বান্ডিল ও এফডিআর দেখার সুযোগ দেয়া হয়।

এ সময় ছবি তুলতে থাকেন সাংবাদিকরা।

বিষয়টি দেখে হতভম্ব হয়ে যান শামীম।

তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আল্লাহর ওয়াস্তে ছবি তুইলেন না, আমাকে বেইজ্জতি কইরেন না। আমার একটা সম্মান আছে। এখানে যা হচ্ছে, আপনারা দেখছেন। কিন্তু আমাকেও আত্মপক্ষ সমর্থন করতে দিতে হবে।’

তার এ কথা শুনে র‍্যাবের এক কর্মকর্তা শামীমকে বলেন, ‘আপনি আমাদের সহযোগিতা করেন। আমাদের সহযোগিতার জন্য ও অভিযানের সচ্ছতার জন্য মিডিয়া আমাদের সহযোগিতা করছে।’

তবুও র‌্যাবের সে কথা শামীমকে সাংবাদিকদের বাঁধা দানে নিবৃত করার চেষ্টা থেকে বিরত রাখতে পারেনি।

সাংবাদিকরা যখন তার ছবি তুলছিল তিনি হাত দিয়ে মুখ ঢাকছিলেন। ছবিতে চেহারা না দেখাতে দীর্ঘক্ষণ টেবিলের নিচে মাথা ঢুকিয়েও রাখেন।

সম্প্রতি ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কয়েকজন নেতার বিষয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার পরই ছাত্রলীগের পদ হারান শোভন-রাব্বানী।

বুধবার অবৈধ জুয়া ও ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগে র‌্যাবের হাতে আটক হয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ মহানগর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া।

গুঞ্জন চলছিল বৃহস্পতিবার রাতেই যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সমবায় বিষয়ক সম্পাদক জিকে শামীমকে আটক হবেন।

তবে সূত্র জানায়, আজ শুক্রবার ভোর সাড়ে ৬টার দিকে শামীমের ৭ দেহরক্ষীকে নিজেদের হেফাজতে নেয় র‌্যাব।

জিকে বিল্ডার্সের কর্মচারী দিদারুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, শুক্রবার ভোর সাড়ে ৬টার দিকে রাজধানীর নিকেতনে শামীমের ব্যবসায়িক কার্যালয় জিকে বিল্ডার্সে র‌্যাবের একটি দল এসে তার ৭ বডিগার্ডকে তুলে নিয়ে যায়।

এদিকে শামীরের সঙ্গে তার ৭ দেহরক্ষীকেও আটক করা হয়েছে বলে সত্যতা নিশ্চিত করেছে র‌্যাব সদর দফতরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম।

তিনি বলেন, শামীমের কাছ থেকে অত্যাধুনিক একটি আগ্নেয়াস্ত্র ও তার সাত দেহরক্ষীর কাছ থেকে আরও সাতটি আগ্নেয়াস্ত্রও উদ্ধার করা হয়েছে।

কে এই শামীম?

জানা গেছে, রাজধানীর প্রভাবশালী ঠিকাদার হিসেবেই পরিচিত এসএম গোলাম কিবরিয়া শামীম। রাজধানীর সবুজবাগ, বাসাবো, মতিঝিলসহ বিভিন্ন এলাকায় তিনি একজন প্রভাবশালী ঠিকাদার।

তবে তিনি এখন যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সমবায়বিষয়ক সম্পাদক।

তার বাড়ি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার সন্মানদী ইউনিয়নের দক্ষিণপাড়া গ্রামে। তার বাবার নাম মো. আফসার উদ্দিন মাস্টার।

নিম্ম মধ্যবিত্ত ঘর থেকে উঠে এসে এখন কোটি কোটি টাকার মালিক তিনি। বনানীর ডিওএইচএসে বিলাশবহুল বাড়িতে থাকেন শামীম।

আর গুলশান নিকেতনে ৫ নম্বর সড়কের ১৪৪ নম্বর ভবনটি অফিস হিসেবে ব্যবহার করেন শামীম।

জিকেবি অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন তিনি।

সাধারণ জনগণের কাছে অতেটা পরিচিতি না থাকলেও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরিচিতি পান শামীম।

সেই নির্বাচনে শামীম আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কা নিয়ে প্রচারণাও চালিয়েছিলেন।

তবে যুবলীগের কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ইকবাল মাহমুদ বাবলু বলছেন ভিন্ন কথা। যুবলীগের নন, জি কে শামীম যুবদলের সাবেক সহ-সম্পাদক বলে দাবি করেন তিনি।

তিনি বলেন, যুবলীগে শামীমের কোনো পদ নেই। তিনি নিজেই নিজেকে সমবায়বিষয়ক সম্পাদক বলে বেড়ান। এ নিয়ে যুবলীগে কয়েকবার আলোচনাও হয়েছে। তাকে কয়েকবার এমন মিথ্যা প্রচারণা থেকে বিরত থাকতে বলাও হয়েছে।

বিএনপি থেকে ভোল পাল্টিয়ে তিনি বর্তমানে যুবলীগ নেতা হয়েছেন বলে জানান তিনি। সূত্র: যুগান্তর।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *