কবে ও কীভাবে মৃত্যু ঘটবে সূর্যের, জানালেন গবেষকরা

আন্তর্জাতিক লীড

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পৃথিবীর জলবায়ু, সমুদ্রস্রোত, ঋতু, গাছপালার সালোক সংশ্লেষণসহ ভৌগোলিক প্রকৃতি ও জীবমন্ডল— উভয়ই শাসন করে সূর্য। কোনো কারণে যদি এই নক্ষত্রের মৃত্যু ঘটে, তাহলে চরম বিপর্যয় নেমে আসবে সৌরজগতের এই বিশেষ গ্রহটিতে, যেখানে প্রাণের বিকাশ ঘটেছে।

সৌরমন্ডলের প্রাণকেন্দ্র সূর্যের উদ্ভব, শক্তির উৎস ও সম্ভাব্য মৃত্যু সম্পর্কে জানতে বহু বছর ধরে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছেন গবেষকরা। যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানভিত্তিক সাময়িকী ন্যাশনাল জিওগ্রাফিতে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে বলা হয়েছে, বর্তমানে সৌরজগতের যে স্থানে সূর্যের অবস্থান, একসময় তার কাছাকাছি একটি বড় উজ্জল নক্ষত্রের (সুপারনোভা) অস্তিত্ব ছিল। আজ থেকে ৫০০ কোটি বা তার কিছু বেশি সময় আগে সেই নক্ষত্রটির অভ্যন্তরে প্রকান্ড বিস্ফোরণ ঘটে। এতে নক্ষত্রটি ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় এবং অন্তর্গত বস্তুকণা ও গ্যাসীয় পদার্থ মহাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।

বস্তুকণা ও গ্যাসীয় উপাদানের অণুগুলোর অন্তর্গত অভিকর্ষ বলের প্রভাবে সেসব পরস্পরের কাছাকাছি আসতে থাকে, সৃষ্টি হয় মহাজাগতিক এক মেঘের। এই প্রক্রিয়াটি শেষ হতে সময় লেগেছিল কয়েক কোটি বছর।

তারও কয়েক কোটি বছর পর ওইসব উপাদান পরস্পরের সঙ্গে আরও কাছাকাছি আসে এবং গ্যাসীয়, বিশেষ করে হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম অণুগুলো আলাদা হয়ে এক জায়গায় জড়ো হয়ে সূর্যের আকৃতি নেওয়া শুরু করে। অন্যান্য যেসব বস্তুকণা ও গ্যাসীয় উপাদান ছিল, সেসব থেকে জন্ম হয় পৃথিবীসহ সৌরমন্ডলের অন্যান্য গ্রহের। এই গোটা প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়েছিল আজ থেকে ৪৫০ কোটি বছর আগে।

বাস্তবে সৌরমন্ডলের প্রাণ মাঝারি আকৃতির এই নক্ষত্রটির পুরোটাই গ্যাসীয় তরল।

সায়েন্স অ্যালার্ট নামের একটি মার্কিন সাময়িকীতে প্রকাশিত প্রবন্ধে বলা হয়েছে, আজ থেকে আরও ৫০০ কোটি বছর পর সূর্য পরিণত হবে একটি বিশাল লাল রঙের দানব নক্ষত্রে। সেটি হবে সূর্যের মৃত্যুর প্রাথমিক স্তর। এই স্তরে সূর্যের মধ্যভাগের অংশটি সংকুচিত হয়ে পড়বে এবং বাইরের অংশটি অভিকর্ষবল হারিয়ে দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করবে।

তরল সেই আগ্নেয় পদার্থের স্রোত পৌঁছাবে মঙ্গল গ্রহ পর্যন্ত। এদিক থেকে বলা যায়, সূর্যের মৃত্যুর প্রাথমিক স্তরেই ধ্বংস হয়ে যাবে অন্তত ৪টি গ্রহ— বুধ, শুক্র, পৃথিবী ও মঙ্গল।

যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টার সূর্যের উদ্ভব ও পরিণতি সম্পর্কিত একটি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করেছিল ২০১৮ সালে। সেই গবেষক দলের অন্যতম সদস্য ও জ্যোতিপদার্থবিদ অ্যালবার্ট জিজলস্ট্রা এ সম্পর্কে সায়েন্স অ্যালার্টকে বলেন, ‘যখন একটি তারার মৃত্যু ঘটতে থাকে, সে সময় সেটি থেকে বিপুল পরিমাণ গ্যাস ও বস্তুকণা নির্গত হয়ে মহাজগতে ছড়িয়ে পড়ে। এই ব্যাপারটিকে আমরা বলি খাম (এনভেলপ)।’

‘এই এনভেলপের ভর ওই নক্ষত্রের ভরের অর্ধেকও হয় অনেক ক্ষেত্রে। (এনভেলপ) নির্গত হওয়ার মাধ্যমে নক্ষত্রের অন্তর্গত মূল অংশটি প্রকাশ্যে আসে, যেটি মূলত সেই নক্ষত্রের শক্তির উৎস।’

‘একটি নক্ষত্রের মৃত্যুর অর্থ হলো, তার জ্বালানির মজুত শেষ হয়ে গেছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই তার ক্ষয় হতে থাকে এবং এই পথ ধরেই একসময় তার চূড়ান্ত মৃত্যু হয়।’

স্ব.বা/রু

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *