বাঘা প্রতিনিধি: রাজশাহীর বাঘায় তফশিল ঘোষনার পর এলাকা ঘুরে ‘আশীর্বাদ র্যালি’ করেছেন, বাঘা পৌর নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশী আ’লীগের তিন মেয়র প্রার্থী। এরা হলেন-সাবেক মেয়র ও জেলা আ’লীগের সদস্য আক্কাছ আলী, পৌর আ’লীগের সাধারন সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মামুন হোসেন, উপজেলা যুবলীগের যুগ্ন সাধারন সম্পাদক ও পৌরসভার প্যানেল মেয়র শাহিনুর রহমান পিন্টু। তাঁদের কর্মসূচিতে ভিড় হয়েছিল নজর কাড়ার মতো। প্রার্থীদের বিপুল পরিমানের মোটরসাইকেলের র্যালি ‘ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তনের ইঙ্গিতবাহী’ বলেই সাধারন মানুষের দাবি। প্রার্থীদের দাবি, পালাবদলের ঢেউয়ে ভর করে এবার পৌর সভার মেয়র পদ দখল করবেন।
আক্কাছ আলীর দাবি, দীর্ঘ দিনের রাজনৈতিক প্রবণতা অতিক্রম করে এবার আবারো ক্ষমতায় ফিরবেন তিনি। এর আগে নির্বাচিত হয়ে পৌর সভার ভৌগলিক অবস্থার পরিবর্তনসসহ এলাকার উন্নয়ন ও পৌরসভাকে প্রথম শ্রেণীতে উন্নীত করেছেন বলে দাবি তার। এবার দলীয় মনোনয়ন পেলে ভোটাররা তাকে মূল্যায়ন করবে বলে আশা তার ।
মামুন হোসেন বলেন, দলীয় পদে দায়িত্ব পালনকালে মানুষের পাশে রয়েছি। এবার মনোনয়ন পেলে জনপ্রতিনিধি হিসেবে পৌরসভার উন্নয়নে ভ’মিকা রাখবো।
শাহিনুর রহমান পিন্টু বলেন, যুবলীগের নেতৃত্বের পাশাপাশি পৌরসভার প্যানেল মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে মানুষের পাশে থেকে পৌরসভার উন্নয়নে কাজ করেছি। আগামীতেও পৌরসভার উন্নয়নে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশা করছি।
তাদের মতো মনোনয়ন প্রত্যাশায় করছেন,জেলা আ’লীগের ১ নম্বর সহ সভাপতি আমানুল হাসান দুদু,উপজেলা আ’লীগের সাধারন সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল,উপজেলা মহিলা আ’লীগের সভাপতি ও সাবেক ভাইস চেয়ার ফাতেমা খাতুন লতা,সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সানোয়ার হোসেন সুরুজ। এদের অনেকেই ফেসবুক আইডি থেকে পোষ্ট দিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাশা করেছেন।
বিএনপি ও জামায়াত শিবিরেও চলছে প্রচারনা। দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হওয়ায় সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীরা যোগাযোগ করছেন জেলা ও কেন্দ্রের নেতাদের সাথে। নির্বাচন ঘিরে চাঙ্গা হচ্ছে আ’লীগ- বিএনপি ও জামায়াতের রাজনীতি।
গনসংযোগ করছেন, পৌর বিএনপির সভাপতি কামাল হোসেন ও যুবদলের সাবেক নেতা ও সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মামুন। তারা জানান, দলীয় সিদ্ধান্ত মেনেই নির্বাচনে অংশ নিবেন। এবার প্রার্থী দিবে জামায়াত। পৌর জামায়াতের আমির সহকারি অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম নিজেই প্রার্থী হবেন বলে জানিয়েছেন।
এবারও নির্বাচনে অংশ নিবেন বর্তমান মেয়র আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, নির্বাচিত হয়ে উন্নয়নসহ সাধারন মানুষের পাশে থেকে কাজ করছেন। এবারেও মানুষ ভোট দিয়ে বিজয়ী করবেন বলে আশা তার।
ঘোষিত তফশিল অনুযায়ী, আগামী ২৯ ডিসেম্বর ভোট গ্রহণ হবে। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ১ ডিসেম্বর, যাচাই-বাছাই ৩ ডিসেম্বর, প্রার্থীতা প্রত্যাহার ১০ ডিসেম্বর। এবার ভোট হবে ইভিএমে। সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছে ২০১৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর। সেই নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ছিল ২৭ হাজার ৭৮৯ জন।
এবার ভোট বেড়েছে ৩হাজার ৮৪৭। এবার ভোটার সংখ্যা ৩১ হাজার ৬৩৬। এর মধ্যে- পুরুষ ভোটার ১৫ হাজার ৮০০জন ও নারী ভোটার ১৫ হাজার ৮৩৬ জন। উপজেলা নির্বাচন অফিসার ও পৌর নির্বাচনে সহকারি রির্টানিং অফিসার মুজিবুল আলম জানান, ভোটার হালনাগাদে এর সংখ্যা বাড়তে পারে ।
জানা গেছে,২০১৭ সালের নির্বাচনে আ’লীগ দলীয় প্রার্থী আক্কাছ আলীকে পরাজিত করে ধানের শীষ প্রতীকে ১২ হাজার ২২৮ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপির দলীয় প্রার্থী আব্দুর রাজ্জাক। আওয়ামীলীগ দলীয় প্রার্থী সাবেক মেয়র আক্কাছ আলী নৌকা প্রতীকে পেয়েছিলেন ১০ হাজার ৭০২ ভোট। যদিও ২০০৬ সালের ২৬ জুন অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আক্কাছ আলী তথা সাবেক মেয়র স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রাজ্জাককে পরাজিত করে পৌরসভার মেয়র পদে বসেছিলেন। ওই সময় বিএনপির দলীয় প্রার্থী ছিলেন বাবুল ইসলাম।
১৯৯৯ সালের ২৪ জুন পৌরসভা প্রতিষ্ঠার পর, ২০০০ (দুই হাজার) সালের ২৬ সেপ্টেম্বর পৌর সভার প্রথম নির্বাচনে আক্কাছ আলীকে পরাজিত করে সে সময় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন বিএনপির আব্দুর রাজ্জাক।
এদিকে, ভোটাররা নীরব থাকলেও নিজেদের সমর্থন আদায়ে মেয়র প্রার্থীর পাশাপাশি মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সদস্য পদে নির্বাচনে আগ্রহীরা।
ভোটারদের ভাষ্য মতে, পৌরসভায় আধিপত্য বিস্তার না করে জনসেবায় নিজেকে বিলিয়ে দেন, এমন প্রার্থী চান তারা। বিশেষ করে মেয়র পদে ব্যক্তিত্ব সম্পূর্ন শিক্ষিত যোগ্য একজন প্রার্থী আশা করছেন ভোটাররা। তাদের মতে, জনপ্রিয়তার সমর্থনে এবার জয় পরাজয় নির্ভর করবে ।
তবে, যোগ্য ও ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন কেউ কেউ।
উপজেলা বিএনপির আহহŸায়ক ফকরুল হাসান বাবলু জানান, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে প্রার্থী দেওয়ার সুযোগ নাই। দলের সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রার্থী বাছাই করে মনোনয়ন দেওয়া হবে।
স্ব.বা/রু