মানসিক সমস্যায় ভুগছে দেশের ৩ কোটি মানুষ

জাতীয় বিশেষ সংবাদ লীড

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: দেশে মোট জনগোষ্ঠির ১৮ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ৩ কোটি মানুষ মানসিক সমস্যায় ভুগছেন, যাদের উন্নত চিকিৎসা জরুরি। ফলে মানসিক স্বাস্থ্যকে হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

বুধবার রাজধানীর এক হোটেলে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য রিপোর্ট ও জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য কর্মকৌশল পরিকল্পনা ২০২০-৩০ এর অবহিতকরণ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা জানি মানসিক সমস্যায় বিশ্বে বহু লোকের প্রাণহানি ঘটে। প্রতিবছর প্রায় ১০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। বাংলাদেশের ১৮ ভাগ প্রাপ্তবয়স্ক বা তিন কোটি মানুষ কোনো না কোনোভাবে এই সমস্যায় ভুগছে। অন্যান্য অনেক রোগেও এমনটা হয় না। মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত এসব রোগীর বড় একটি অংশ শিশু।

জাহিদ মালেক বলেন, মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নে সরকার নানামুখী ব্যবস্থা নিয়েছে। আমরা বলছি না যে অনেক কিছু করেছি, কিন্তু আমরা উপলব্ধি করছি। পাবনা মানসিক হাসপাতালকে আরও উন্নত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় কাউন্সিলিং করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রায় ২০০ উপজেলায় এনসিডি কর্নারে কাউন্সিলিং করার ব্যবস্থা থাকছে। এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সচেতনতায়ও এখনো নানা গ্যাপ (ঘাটতি) রয়েছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, মানসিক স্বাস্থ্যে বাজেটেও এখনো ঘাটতি রয়েছে। এটি কিভাবে বাড়ানো যায় চেষ্টা করা হবে। একইসঙ্গে দক্ষ জনবল বাড়ানোর বিষয়টিও গুরুত্ব দেওয়া হবে। কারণ এই সমস্যার কারণে অনেকে চাকরি হারান, দেশের উৎপাদন কমে যায়, অপরাধের মাত্রা বাড়ে। এমনকি উচ্চ রক্তচাপসহ বিভিন্ন রোগের প্রকোপ বাড়ে এই মানসিক স্বাস্থ্যের কারণে।

তিনি বলেন, মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির পেছনে সায়মা ওয়াজেদের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। তার কারণেই অনেক গবেষণা হয়েছে। আইনি কাঠামো তৈরি হয়েছে। যা অনেক দেশেই নেই। এগুলো বাস্তবায়নের এখনই সময়।

সভায় মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নে পরিবার থেকেই পরিবর্তন আনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন সূচনা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীকন্যা সায়মা ওয়াজেদ। তিনি বলেন, আমাদের শারীরিক চিকিৎসার নানা কর্মকৌশল থাকলেও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ছিল না। আমরা এ জন্য নানা পরিকল্পনা করেছি। মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য একটা উন্নত পরিবেশ দরকার। শুধু স্বাস্থ্য অধিদপ্তর চাইলেই হবে না, সবার এগিয়ে আসতে হবে। পরিবার থেকে চালু করতে হবে। পরিবারেই তাকে যেন দুর্বল করে দেখা না হয়।

সায়মা ওয়াজেদ বলেন, মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে বাংলাদেশের একটি কর্মকৌশল আছে, একটি আইন আছে। কিন্তু সবাই এগিয়ে না আসলে, কাজ না করলে এগোবে না। সবার আগে নিজেদের পরিবর্তন করতে হবে। জাতি হিসেবে আমরা অনেক কিছু হারিয়েছি। সেখান থেকে উন্নত দেশের কাতারে এসেছি, তাহলে কেন আমরা মানসিক স্বাস্থ্যের মতো জায়গায় এগোতে পারব না?

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে উন্নতি করতে চাইলে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। এ খাতে ৫ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দের ৬০ ভাগই খরচ হচ্ছে প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য কাজে। তাই বরাদ্দ বাড়ানো খুবই জরুরি।

এ সময় জাতীয় মানসিক ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, এই কর্মকৌশল বাস্তবায়নে একটা বডির প্রয়োজন। যেটি বিএমডিসির মাধ্যমে হবে। মানসিক স্বাস্থ্য শুধু স্বাস্থ্যকর্মীদের কাজ নয়, স্কুল-কলেজের শিক্ষকদেরও অনেক দায়িত্ব রয়েছে। আমাদের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ দরকার। এগুলোতে এখনো ঘাটতি রয়েছে। গত দুই বছরের আত্মহত্যা বেড়েছে। কিভাবে এটি রোধ করা যায় সেই কৌশল এতে রয়েছে।

তিনি বলেন, বাবা-মা ও সবার সচেতনতা দরকার। আমাদের মনের যতœ নিতে হবে। কুসংস্কার থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। যারা চিকিৎসা দিচ্ছেন তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় এটি যুক্ত করতে হবে।

স্ব.বা/বা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *