তানোরে চেয়ারম্যান সচিব মিলেমিশে প্রকল্পের অর্থ হরিলুটের অভিযোগ

রাজশাহী
সারোয়ার হোসেন, তানোর: রাজশাহীর তানোর উপজেলার তালন্দ ইউপির বিদ্রোহী চেয়ারম্যান নাজিমুদ্দিন বাবু ও সচিব রাসেলের বিরুদ্ধে সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প নামমাত্র মানুষ দেখানো দায় সারা কাজ করে পুরো প্রকল্পের অর্থ হরিলুট করে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকি চেয়ারম্যান নাজিমুদ্দিন বাবুর কথা মতো কেউ প্রকল্পের কাজ করতে না চাইলে সেসব মেম্বারদের দেয়া হয়না প্রকল্প। আর সচিব সাহেব চেয়ারম্যানের অজুহাত দেখিয়ে থাকেন নির্বিকার হয়ে। ফলে দিন দিন বেপরোয়া ভাবে সরকারের অর্থ কাজ না করে আত্মসাৎ করার জন্য বাধ্য হয়ে চেয়ারম্যান নাজিমুদ্দিন বাবু ও সচিব রাসেলের সকল দূর্নীতির গোমর ফাঁস করছেন মেম্বাররা। শুধু তাই না চেয়ারম্যান নাজিমুদ্দিন বাবু এমনও প্রকল্প আছে যার কাজ না করে বিল উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন বলেও রয়েছে একাধিক অভিযোগ। এতে করে সচিব রাসেলের সহযোগিতায় চেয়ারম্যান নাজিমুদ্দিন বাবুর এসব কান্ডে ইউপিজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে তোলপাড়। সেই সাথে ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ সালের প্রকল্প গুলো সরেজমিনে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলেছেন তালন্দ ইউপিবাসী।
জানা গেছে,২০২১-২২ অর্থ বছরে কাবিখা দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রকল্পের আওতায় তালন্দ ইউপির মোহর গ্রামের মুন্নাপাড়া আনোয়ার হোসেনের বাড়ি থেকে ইদুলের বাড়ি পর্যন্ত মাটির রাস্তা সংস্কার ও প্রটেকশন ওয়াল নির্মাণ। কাজের ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার। প্রকল্প সভাপতি ইউপি সদস্য আব্দুল করিম। ইউপির দেউল আল ফালাহ দাখিল মাদ্রাসার উন্নয়ন কাজের জন্য ৬২ হাজার টাকা, প্রকল্প সভাপতি শরিফুল। এছাড়াও লালপুর পশ্চিম পাড়া ওয়াক্তিয়া মসজিদ উন্নয়নের জন্য ৬২ হাজার ৫০০ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার তালন্দ ইউপির মোহর মুন্নাপাড়া গ্রামে মাটির রাস্তায় কিছুই করা নাই, প্রটেকশন ওয়ালে যে মাটি দেওয়া হয়েছে তা পুকুর খননের ফ্রি মাটি। গ্রামের লোকজন জানান, মানুষের মুখে শোনা যেতো যে লংকায় যায় সে রাবন হয়ে যায়। ঠিক তাই হয়েছে চেয়ারম্যান নাজিমুদ্দিন বাবু।
ভোটের সময় ভোট পেতে এই নাজিমুদ্দিন বাবুর মুখের কথা ছিলো অন্য রকম। তার কথা এতোই মিষ্টি ছিলো, যা এখন চেয়ারম্যান হয়ে হয়েছে প্রচুর দাম্ভিকতা। ভোটের সময় বলেছিল পরিষদে যেই বরাদ্দ আসবে সবার মতামতের ভিত্তিতে কাজ করা হবে। কিন্তু ভোটের পরে থেকে প্রথম প্রথম দু একটি ওয়ার্ড সভা করেই শেষ। কথায় আছে দুষ্ট লোকের মিষ্টি কথা। তিনি এক সময় ছিলেন মেম্বার, আবার ইউপি যুবদলের সভাপতি সে তো লুটে খাবেই।
প্রকল্প সভাপতি ইউপি সদস্য আব্দুল করিম জানান কাজ নিয়ম মতই হয়েছে, পুরো বিল উত্তোলনও করা হয়েছে, প্রটেকশন ওয়ালে তো পুকুর খননের মাটি দেওয়া আছে জানতে চাইলে এড়িয়ে গিয়ে জানান সবকিছুই সঠিক আছে। আপনারা চেয়ারম্যানের সাথে যোগাযোগ করেন। রোববার সরেজমিনে ইউপির দেউল আল ফালাহ মাদ্রাসায় গিয়ে দেখা যায়, মাদ্রাসার সাইনবোর্ডটাও জর্জরিত, মাদ্রাসা বন্ধ কেউ ছিল না। মাদ্রাসার পাশে কিছু লোকজন জানান সেই ভাবে চলে না। মাঝেমধ্যে কিছু ছাত্র ও শিক্ষকদের দেখা যায়। দীর্ঘদিন ধরে মাদ্রাসার কোন উন্নয়ন হয় নি। প্রকল্প সভাপতি শরিফুলের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তার কোন খোজ খবর পাওয়া যায়নি। তবে কবির নামের এক মাদ্রাসা শিক্ষকের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও রিসিভ করেন নি। মাঠে বেশ কিছু  ছাগল ঘাস খাচ্ছিল। মেম্বার জামাল উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান আমি কোর্টে আছি পরে কথা বলবো। মেম্বার খলিলুর রহমান জানান, চেয়ারম্যান সাহেবিতো সব,আমরা নামে মেম্বার আর মানুষ দেখানো প্রকল্প সভাপতি। ইউপি পরিষদের সকল কাজ চেয়ারম্যান তার মনমতো লোক দিয়ে করান। চেয়ারম্যান এতো প্রকল্পের কাজ করেও মেম্বারদের বিল বেতন ভাতা দিতে পারেন না। কিন্তু তিনি ঠিকই বিলাসিতা জীবন উপভোগ করেন। ইউপি সচিব রাসেল কে কাজের বিষয়ে অবহিত করলে তিনি তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন,চেয়ারম্যান সাহেবের অনুমতি ছাড়া তিনি কোন তথ্য দিতে পারবেন না।
ইউপি চেয়ারম্যান নাজিমুদ্দিন বাবু জানান, বর্তমানে প্রকল্পের কাজ করায় দায় হয়ে পড়েছে।একটা প্রকল্পের কাজে অফিসকেই দিতে হয় ৪০℅ টাকা,তাহলে কাজ করবো কি ভাবে। তার পরেও কাজ করা হয়েছে। তানোর প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা পিআইও তারিকুল ইসলাম জানান,এমন হয়ে থাকলে অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং কাজগুলো সরেজমিনে তদন্ত করে দেখা হয়।

স্ব.বা/বা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *