রাজশাহী-১ আসনে রাব্বানীর ফেসবুক স্ট্যাটাস নিয়ে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া

রাজশাহী
তানোর প্রতিনিধি: রাজশাহীর তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি গোলাম রাব্বানীর একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস রাজনৈতিক অঙ্গনে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে, উঠেছে সমালোচনার ঝড়, বইছে মুখরুচোক নানা গুঞ্জন।
সম্প্রতি ডালিয়ার ফেসবুক আইডি থেকে
‘শুকুর আলহামদুলিল্লাহ। এইমাত্র প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিশেষ সূত্রে জানা গেল সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে  মনোনয়নের চূড়ান্ত তালিকায় আমার  চাচা মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী সাবেক তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও দুই বারের সাবেক সফল মুন্ডুমালা পৌরসভার মেয়র ও দুই বারের সফল তিন নম্বর পছন্দ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তালিকাভুক্ত হয়েছে ইনশাল্লাহ। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু।
আলহামদুলিল্লাহ’ এমন স্ট্যাটাস দেয়া হয়েছে।
স্থানীয়রা বলছে, এই স্ট্যাটাস তিনি কাদের উদ্দেশ্যে দিয়েছেন বা কি বোঝাতে চাইছেন। এমন স্ট্যাটাস দিয়ে তিনি তো প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে আওয়ামী লীগের অত্যন্ত সম্ভবনাময় ভোটের গোছানো মাঠ নষ্ট করছেন। আসলেই তিনি কি নির্বাচন করতে চান ? না প্রার্থী হবার ঘোষণা দিয়ে প্রচারণার নামে আওয়ামী লীগে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে নৌকার পরাজয় নিশ্চিত করতে চান সেটাই এখন ভাবনার বিষয়।
জানা গেছে, এখানো দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়নি। আদৌ নির্বাচন হবে কি হবে না, বা হলেও কবে নাগাদ হবে সেই সম্পর্কে তেমন কোনো স্পট বক্তব্য আসেনি। আবার বড় রাজনৈতিক দলগুলো এখানো তাদের প্রার্থী তালিকা চুড়ান্ত করেনি।
স্থানীয় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের প্রশ্ন গোলাম রাব্বানী দুবার উপজেলা নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নে নির্বাচন করে  বিএনপির দুর্বল প্রার্থীর কাছে পরাজিত হয়েছেন। তাহলে তার মতো ব্যক্তি কি ভাবে তার এমপি প্রার্থীর মনোনয়ন নিয়ে এতোটা নিশ্চিত হলেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কোন বিশেষ সুত্র তাকে এমন তথ্য নিশ্চিত করলো, তার কথা সত্যি হলে বুঝতে হবে  প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কোনো গোপনীয়তা নাই ? আবার যেখানে দলের নীতিনির্ধারণী মহলের দায়িত্বশীল কোনো নেতা বা এমপি দলীয় মনোনয়নের বিষয়ে পরিস্কার কোনো তথ্য জানাতে ব্যর্থ, সেখানে উপজেলা নির্বাচনে দুবার পরাজিত ও দলীয় সভাপতির পদ
হারানো নেতার মনোনয়ন নিশ্চিতের আগাম বার্তা হাল্কা বিনোদনের খোরাক বৈ কিছু না ?
জানা গেছে, রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) সংসদীয় আসন আয়তনের দিক থেকে দেশের ৮তম স্থানে রয়েছে। এখানে অনেক দুর্গম ও প্রত্যন্ত পল্লী এলাকা রয়েছে।ফলে একজন মানুষের পক্ষে এখানকার মানুষের সঙ্গে পরিচিত হতে গেলেও কমপক্ষে ১০ বছর সময় প্রয়োজন। সেখানে রাব্বানীর মনোনয়ন প্রত্যাশার আশা করা কতটা যুক্তি সঙ্গত ?
তৃণমূলের ভাষ্য, ধুমকেতুর মতো মাঝে মধ্যে নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন প্রান্তে তার বিচরণ লক্ষ্য করা যায়। কিন্ত একজন এমপি মনোনয়ন প্রত্যাশীর  ভাল যে দিক বা গুন থাকলে এমন বিচরণ লক্ষ্য করা যায়। তিনি সেই গুনের অধিকারী নন।  তার সঙ্গে আওয়ামী লীগ বা সহযোগী সংগঠনের দায়িত্বশীল কোনো সাংগঠনিক নেতাকর্মী নাই। আবার যেকজন আছেন তারা সবাই বিপদগামী, এরা জাতীয় সংসদ, জেলা পরিষদ, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে সরাসরি নৌকার বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে পদপদবী হারিয়ে জনবিচ্ছিন্ন হয়েছেন। অথচ তিনি এসব বিপদগামীদের সঙ্গে ফটোসেশান করে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী ও দোয়া চেয়ে ফেসবুকে ফটো আপলোড দিচ্ছেন। আবার কখানো তিনি বলছেন তানোর-গোদাগাড়ীর কাঙ্ক্ষিত  উন্নয়ন হয়নি  তিনি উন্নয়নের লক্ষ্য এই আসনে নৌকার মনোনয়নে নির্বাচন করতে চান। যা সরাসরি স্ববিরোধী কথা। তার মানে কি আওয়ামী লীগ সরকার তানোর-গোদাগাড়ী কোনো উন্নয়ন করতে পারেনি। তাহলে একজন এমপি একটানা ১৫ বছরেও যেখানে কাঙ্ক্ষিত  উন্নয়ন করতে পারেনি, সেখানে তিনি কিভাবে উন্নয়ন করবেন ?
স্থানীয়দের অভিমত, রাজশাহী-১ এই ভিআইপি সংসদীয় আসনে নির্বাচন করতে গেলে একজন  প্রার্থীর যেই সামাজিক মর্যাদা, পারিবারিক ঐতিহ্য, আর্থিক স্বচ্ছলতা, সাংগঠনিক দক্ষতা, রাজনৈতিক দুরদর্শিতা, কর্মী বাহিনী ইত্যাদি প্রয়োজন গোলাম রাব্বানির মধ্যে কি সব রয়েছে। যদি থাকতো তাহলে তো তিনি পর পর দুবার দলীয় মনোনয়নে উপজেলা নির্বাচনে পরাজিত হতেন না। এসব বিবেচনায় তাদের কাছে মনে হয়েছে গোলাম রাব্বানী ফেসবুকে এমন পোষ্ট দিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপপ্রয়াস ব্যতিত কিছু নই। আবার তিনি যদি সত্যিই এমপি প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করতে চান। তাহলে বর্তমান সাংসদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে একই সঙ্গে একই মঞ্চে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন ও অর্জনের চিত্র তুলে ধরে নির্বাচনী প্রচারণা করুক। নৌকা যিনি পাবেন তিনি প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করবেন। তিনি যদি নৌকা পান তাহলে কি বর্তমান সাংসদের প্রয়োজন হবে না। যদি হয় তাহলে নির্বাচনের অন্তিম মুহুর্তে কেনো এমপির বিরোধীতা। এমপিরা তো প্রধানমন্ত্রীরই প্রতিনিধি, তাহলে এমপির বিরোধিতা মানে তো প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ প্রধানমন্ত্রীরই বিরোধিতা করা বোঝায়।
এবিষয়ে একাধিকবার যোগাযোগের চেস্টা করা হলেও মুঠোফোনে কল গ্রহণ না করায় গোলাম রাব্বানীর কোনো বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *