জনবলের অভাবে ২ বছরেও চালু হয়নি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র

রাজশাহী লীড

মোঃ রওশন আলম, নওগাঁ: নওগাঁর মান্দায় কালিকাপুর (হাট-চকগৌরী) এলাকায় প্রায় ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র উদ্বোধন করা হলেও প্রায় ২ বছর ধরে জনবলের অভাবে বন্ধ রয়েছে স্বাস্থ্য সেবা।

এ অঞ্চলের শিশুসহ সকল শ্রেণীর মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। ফলে সেবার অভাবে নিম্ন আয়ের মানুষ রোগীদের নিয়ে পড়েন মহাবিপদে।
উপজেলা থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে কালিকাপুর ও নুরল্যাবাদ ইউনিয়নের ৫৫ হাজার জনগণের সেবা প্রদানের জন্য কল্যাণ কেন্দ্রটি স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু কবে কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা মিলবে সেই অপেক্ষার দিন গুনছে এ অঞ্চলের সকল পেশার মানুষ।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের হাট-চকগৌরী এলাকার রাস্তার পাশে ৩ বিঘা জমির উপর নির্মাণ করা হয়েছে ১০ শয্যার তিন তলা বিশিষ্ট মা ও শিশু হাসপাতালটি।
হাসপাতালের পরিবেশ খুব সুন্দর, পরিপাটি। তার পাশে রয়েছে ডরমিটরি ভবন। চারিদিকে দেয়াল দিয়ে ঘেরা রয়েছে দুটি প্রবেশ পথ ও একটি পাম্প হাউজ। ভিতরে রয়েছে আল্ট্রসনো, ডক্টর’স ও বেস্টফডিং রুম। তবে এই কক্ষগুলো তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখা যায়। এছাড়া ১ জন ফার্মাসিস্ট, রোগীদের সাধারণ চিকিৎসা সেবা দিতে দেখা যায়। কেউ কেউ এই হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসার পর মূলকার্যক্রম না থাকায় রোগীদের নিয়ে অন্যত্র ফেরত যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায় , ২০২১ সালের ৩১ডিসেম্বর উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের (হাট-চকগৌরী) এলাকায় তিন তলা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটির উদ্বোধন করেছিলেন, বর্তমান জাতীয় সংসদ সদস্য মুহাঃ ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক এমপি।
 পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের অর্থায়ন ও স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটির নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৬ কোটি টাকা। এ কেন্দ্রটিতে ২ জন চিকিৎসক, ১ জন মেডিকেল টেকনোলজি, ২ জন নার্স, ৪ জন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা, ১ জন ফার্মাসিষ্ট, ১ জন অফিস সহকারী, ১ জন আয়া, ১ জন পিয়ন ও ১ জন নিরাপত্তা প্রহরী থাকার কথা। কিন্তু পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরাধীন মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের জন্য অস্থায়ীভাবে উপরোক্ত স্টাফ নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেন। এখনো সুপারিশকৃত পদগুলো পুরণ হয়নি। ফলে প্রায় ২ বছর ধরে চিকিৎসার আশায় শুধু ভবন দেখছে সেবা গ্রহিতারা।
তবে বর্তমানে ১ জন ফার্মাসিস্ট, ২ জন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা ও ডেপুটেশনে ১ জন অফিস সহায়ক দিয়ে সপ্তাহে ৬ দিন খোলা রাখা হয় হাসপাতালটি।
এ বিষয়ে দাতা উত্তরসূরী সাইফুল ইসলাম বলেন, এই হাসপাতালে জনগণের চিকিৎসার জন্য আমরা জমি দান করেছি। প্রায় ২ বছর পার হয়ে গেল এখন পর্যন্ত এই হাসপাতালটি উদ্বোধনের পর চালু করা হয়নি। অনেকে সেবা না পেয়ে অন্যত্র ফেরত যায়। চিকিৎসার জন্য রোগীর যদি সেবা না পায়। তাহলে এতোগুলো জমি দিয়ে আমাদের কি লাভ হলো। এ জন্য সরকারের কাছে আমার দাবি হাসপাতালটির সকল কার্যক্রম চালু করে যেন সেবা দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে হাট-চকগৌরী গ্রামের পল্লী চিকিৎসক আব্দুস সাত্তার বলেন, এখানকার মানুষগুলো অসহায় এবং অবহেলিত অবস্থায় বসবাস করে থাকেন। এই হাসপাতালটি চালু হলে তারা বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা করতে পারবেন। তাদের দূরের হাসপাতাল গুলোতে আর যেতে হবে না। কিন্তু দুঃখের বিষয় উদ্বোধনের ২ বছর পার হলেও এখন পর্যন্ত চিকিৎসার সেবা চালু করা যায়নি।
এ বিষয়ে একই গ্রামের শারমিন আক্তার বলেন, এই হাসপাতালটি চালু হলে আমাদের সিজারের জন্য দূরে বিভাগীয় শহরে আর যেতে হবে না। ফলে অনেক টায় আমাদের দুর্ভোগ কমবে। কিন্তু হাসপাতালটিতে দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের সেবা পাচ্ছি না। আমরা চাই এ হাসপাতালটিতে চিকিৎসার জন্য সুযোগ সুবিধা দেওয়া হলে, আমাদের আর কষ্ট থাকবে না।
এ ব্যাপারে মান্দা উপজেলার মেডিকেল অফিসার (এমসিএইচ-এফপি) মুশফিকুর রহমান বলেন, চিকিৎসকসহ প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ না দেওয়ায় মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটি চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে সপ্তাহে ৬ দিন, ১ জন ফার্মাসিস্ট ও ২ জন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা দ্বারা সাধারণ সেবা চলমান রয়েছে । নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হলে পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা সেবা চালু করা হবে।
Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *