দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষ, চলছে গণনা

জাতীয় লীড

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: সারা দেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। আজ রোববার সকাল ৮টা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়ে শেষ হয় বিকেল ৪টায়। এরই মধ্যে ভোট গণনা শুরু হয়েছে। ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার পর অনেকটা নির্বিঘ্নেই ভোটাররা ভোট দিয়েছেন। তবে বেশির ভাগ কেন্দ্রে নৌকা ছাড়া অন্য দলের এজেন্ট না থাকার খবর সকাল থেকেই পাওয়া গেছে।

সারা দেশে বেলা ৩টা পর্যন্ত, অর্থাৎ ৭ ঘণ্টায় ভোট পড়েছে ২৭ শতাংশ। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানের মোট সাতটি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ বাতিল করা হয়েছে। সারা দেশের ভোটের পরিস্থিতি জানাতে দ্বিতীয় দফায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি এ তথ্য জানান নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম।

এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৯টিতে ভোট গ্রহণ হয়। একজন প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে নওগাঁ-২ আসনের ভোট গ্রহণ বাতিল করা হয়। রাতের মধ্যে এসব আসনে ভোটের ফলাফল আসতে শুরু করবে। প্রায় দুই হাজার প্রার্থী এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী আছেন ২৬৫টি আসনে। দলটির ব্যানারে না থাকলেও দলটির ২৬৯ জন নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। ইসির হিসাবে, সব দল ও স্বতন্ত্র মিলিয়ে মোট প্রার্থী আছেন ১ হাজার ৯৬৯ জন। অবশ্য এর মধ্যে কেউ কেউ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সারা দেশে ভোটকেন্দ্রগুলোতে ১ লাখ ৭৪ হাজার ৭৬৭ জন পুলিশ সদস্য নিয়োজিত থাকার কথা জানিয়েছে ইসি। এ ছাড়া আনসার সদস্য ছিল ৫ লাখ ১৪ হাজার ২৮৮ জন। এর বাইরে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিজিবি, কোস্ট গার্ড, র‍্যাব, পুলিশ ও আনসারের আরও সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেছেন। সব মিলিয়ে ভোটের মাঠে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য প্রায় আট লাখ। নির্বাচনী এলাকায় সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, অপরাধ প্রতিরোধ, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা ও স্ট্রাইকিং ফোর্সের সঙ্গে মোট ২ হাজার ৭৬ জন ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করেছেন। এর বাইরে ৬৫৩ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট ভোটে দায়িত্ব পালন করেছেন।

সারা দেশে বিভাগগুলো থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী বেলা ৩টা পর্যন্ত গড় ভোট পড়েছে ২৭ ভাগ। বিষয়টি উল্লেখ করে ইসি সচিব বলেন, ‘(৩টার সময়) আমাদের গড় ভোট কাস্টিংয়ের পরিমাণ ছিল ২৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ। এখন যেহেতু একটু বেড়েছে আমরা ২৭ শতাংশ প্লাস বলতে পারি।’

সারা দেশে অন্তত ৩৫টি জায়গায় ভোটকেন্দ্রের বাইরে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে বলে জানান মো. জাহাংগীর আলম। তিনি বলেন, ‘ছোটখাটো ৩০ থেকে ৩৫ জায়গায় ভোটকেন্দ্রের বাইরে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। কোথাও আমাদের পুলিশ অফিসারের গাড়িতে ইট মেরে গাড়ির গ্লাস ভেঙে দেওয়া হয়েছে। কোথাও ভোটকেন্দ্রের বাইরে ককটেল বিস্ফোরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া দুজন সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা দায়িত্ব পালনকালে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। একজন গত রাতে, আরেক আজ মারা গেছেন।’

উল্লেখ্য, নতুনভাবে ভোট গ্রহণ বাতিল করা হয়েছে নরসিংদীর দুটি এবং কক্সবাজারের দুটি কেন্দ্রে। এ ছাড়া প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে চট্টগ্রাম-১৬ আসনের নৌকার প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমানের। এ ছাড়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী সারা দেশ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ৮টি বিভাগে মধ্যে ঢাকা বিভাগে ২৫ শতাংশ, চট্টগ্রামে ২৬, সিলেটে ২২, বরিশালে ৩১, খুলনায় ৩২, রাজশাহীতে ২৬, ময়মনসিংহে ২৯ এবং রংপুর বিভাগে ২৬ শতাংশ ভোট পড়েছে।

ইসি সূত্র জানায়, এবারের নির্বাচনে ২০ হাজারের বেশি দেশি পর্যবেক্ষককে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বিদেশি পর্যবেক্ষক নিজ উদ্যোগে এসেছেন ১১৭ জন, আমন্ত্রিত ৩২ জন। বিভিন্ন দেশের নির্বাচন কমিশনার ও তাঁদের প্রতিনিধি এসেছেন ১৮ জন। এবারের নির্বাচন অনুষ্ঠানে খরচ হচ্ছে দুই হাজার কোটি টাকার বেশি।

গত বছরের ১৫ নভেম্বর সন্ধ্যা ৭টায় আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবন থেকে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন সিইসি। ঘোষণা অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র জমা, প্রার্থিতা প্রত্যাহার, প্রতীক বরাদ্দের পর প্রচার-প্রচারণা শেষে আজ সকাল ৮টায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে।

তফসিল অনুযায়ী, প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দের মধ্য দিয়ে গত ১৮ ডিসেম্বর শুরু হওয়া নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা দ্বন্দ্ব-সংঘাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) সকাল ৮টায়। এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে মূলত আওয়ামী লীগ ও দলটির স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে। নির্বাচনে থাকা জাতীয় পার্টি ও বাম দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতা হলেও আসনগুলোতে আছে স্বতন্ত্র প্রার্থী। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের সঙ্গে স্বতন্ত্রের সংঘাত হচ্ছে বেশি। এরই মধ্যে হতাহত হয়েছে অনেকে।

মোট ভোটার ১১ কোটি ৯৩ লাখ ৩৩ হাজার ১৫৭। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৫ লাখ ৯২ হাজার ১৬৯। আর নারী ভোটার ৫ কোটি ৮৭ লাখ ৪০ হাজার ১৪০। হিজড়া ভোটারের সংখ্যা ৮৪৮। নির্বাচন কমিশনের মোট নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৪৪। এর মধ্যে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে ২৮টি রাজনৈতিক দল। বিএনপিসহ নিবন্ধিত বাকি দল এবং আরও কিছু বিরোধী দল নির্বাচন বর্জন করেছে।

 

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *