অসাংবিধানিকভাবে ৬৪৮ জন শপথবদ্ধ এমপি রয়েছেন: রিজভী

জাতীয় লীড

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: দেশে বর্তমানে অসাংবিধানিকভাবে ৬৪৮ জন সংসদ-সদস্য (এমপি) রয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। রাষ্ট্রপতি সংসদ অধিবেশন ডাকলেই দুই সংসদের সদস্যরা তাতে যোগ দিতে পারেন।

বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

এ সময় দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৮৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ২ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন রিজভী।

সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী বলেন, এ মুহূর্তে একাদশ সংসদের ৩৫০ জন আর ডামি দ্বাদশ সংসদের ২৯৮ জন মোট ৬৪৮ জন শপথবদ্ধ এমপি রয়েছেন। অথচ এটি সাংবিধানিকভাবে অবৈধ। ২৯ জানুয়ারি একাদশ সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়া অবধি এ অরাজকতা থাকবে। এটি একটি চরম সাংবিধানিক লঙ্ঘন। সংবিধান অনুসারে এটি রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ। এজন্য দায়ী প্রধানমন্ত্রী। রাষ্ট্রপতিও এ দায় থেকে মুক্ত নন। ফলে অবৈধ মন্ত্রিপরিষদের কোনো অন্যায্য আদেশ-নির্দেশ দেশের জনগণ মানতে বাধ্য নয়।

তিনি বলেন, সংবিধান, আইন, নিয়মনীতি সবকিছু সরকার পদপিষ্ট করে দেশে একচ্ছত্র শাসন কায়েম করেছে। তাড়াহুড়ো করে ক্ষমতা নবায়ন করার শপথ নিতে গিয়ে তারা আইন ও সংবিধানের কবর রচনা করেছেন।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, পূর্বনির্ধারিত ফলাফলের ভোট রঙ্গ ও ভোট গণনা শেষ না হতেই ডামি এমপিদের নামে গেজেট করা, শপথ গ্রহণ, মন্ত্রিপরিষদের নাম ঘোষণা, মন্ত্রীদের শপথ গ্রহণের মতো প্রক্রিয়া অভাবনীয় দ্রুততায় মাত্র ৪ দিনেই সম্পন্ন হয়েছে। একাদশ সংসদের মেয়াদ আছে ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত। সেই সংসদ ভেঙে না দিয়েই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দ্বাদশ সংসদের সদস্যরা অবৈধভাবে শপথ নিয়েছেন। ফলে দেশে এখন দুই সংসদের সংসদ-সদস্য রয়েছেন। তিনি আরও বলেন, সংবিধানের ৭২(৩) অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘রাষ্ট্রপতি আগে সংসদ ভেঙে না দিয়ে থাকলে প্রথম বৈঠকের তারিখ থেকে পাঁচ বছর অতিবাহিত হলে সংসদ ভেঙে যাবে।’ সংবিধানের বিধানমতে, ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি শুরু হওয়া একাদশ সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ২৯ জানুয়ারি। যেহেতু রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দেননি, সে কারণে ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত একাদশ সংসদের যারা সংসদ-সদস্য ছিলেন, তারা সংসদ-সদস্য হিসাবে বহাল আছেন।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, দেড় দশক ধরে দেশের ভোটবঞ্চিত মানুষের প্রাণের দাবি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। কিন্তু সরকার সংবিধানের দোহাই দিয়ে একটির পর একটি ‘বিনা ভোট’, ‘নিশি ভোট’, ‘ডামি নির্বাচন’ করে ক্ষমতা দখল করে দেশে একচ্ছত্র শাসন কায়েম করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যেমন খুশি তেমন শাসনের বাকশাল রাজ্যে বিচার বিভাগ, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা সব কিছুই তার অঙ্গুলি নির্দেশে পরিচালিত হচ্ছে। পেশিশক্তির বলে মানবাধিকার, সংবিধান ও গণতন্ত্রের জীবন্ত পোস্টমর্টেম করা হয়েছে। আইনকানুন নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে আওয়ামী গেস্টাপোদের হাতে।

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে রিজভী বলেন, আপনি যদি আবারও প্রমাণ চান ৩০০ সংসদীয় নির্বাচনি আসনে শুধু প্রার্থী আপনি এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। নির্বাচনে সারা দেশে তারেক রহমান যদি আপনার চেয়ে দ্বিগুণ ভোট বেশি না পান তাহলে কথা দিচ্ছি, আমি রাজনীতি ছেড়ে দেব। শেখ হাসিনাকে বলছি, সাহস থাকলে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করুন।

আওয়ামী সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ রাজবন্দির মুক্তির দাবিতে চলমান একদফার আন্দোলনে রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান রিজভী।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের ৮৮তম জন্মবার্ষিকী শুক্রবার। এ উপলক্ষ্যে ২ দিনের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে দলটি।

ঘোষণা অনুযায়ী আজ রাজধানীর রমনার ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ মিলনায়তনে আলোচনা সভা।

শুক্রবার কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়গুলোতে দলীয় পতাকা উত্তোলন। বেলা ১১টায় শেরেবাংলা নগরের চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়াউর রহমানের মাজারে ফাতিহা পাঠ ও পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন দলটির নেতাকর্র্মীরা।

দিবসটি উপলক্ষ্যে পোস্টার ও পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে বিএনপি। এছাড়া দলের অঙ্গ, সহযোগী ও বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন নিজ নিজ সুবিধা অনুযায়ী আলোচনা সভা ও শীতবস্ত্র বিতরণ করবে।

 

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *