রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরী দিতে সক্রিয় প্রতারক চক্র, আটক-৪

রাজশাহী

নিজস্ব প্রতিনিধি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) প্রহরী পদে চাকরি দেওয়াসহ বিভিন্ন প্রকল্পে লোভনীয় সুযোগ সৃষ্টি’র নামে অসহায় বেকার যুবকের সঙ্গে প্রতারণা করছেন একদল প্রতারক। দীর্ঘদিন যাবৎ এই চক্রটি সক্রিয় ভূমিকায় আছেন মাঠে। এমন এক ঘটনায় ভুক্তভোগী এক ব্যক্তির অভিযোগে চার জনকে আটক করেছে আইন- শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ রাসেল স্কুল মাঠ থেকে তাদের আটক করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পরে তাদের প্রক্টর অফিসে নিয়ে আসা হয়।

সুত্র বলছে, একাধিক ব্যক্তিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন পদে চাকরি দেওয়ার নামে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে তাদের বিরুদ্ধে। বিশ্ববিদ্যালয়ে কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারী এদের সঙ্গে জড়িত আছে বলে সুত্র নিশ্চিত করেছেন।প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগী সিরাজগঞ্জ উল্লাপাড়ার মৃত আফসার আলীর ছেলে ওমর ফারুক (২৫)।

আটক অভিযুক্তরা হলেন, রাজশাহীর বানেশ্বর কুটিপাড়ার মো. বেলালের ছেলে শিমুল আলী (২০), রাজশাহীর দূর্গাপুর এলাকার শাহংস চৌবাড়ীয়ার বদরুদ্দীনের ছেলে রাসেল মাহমুদ (২২), একই এলাকার সাবের ছেলে কদর আলী (২৮), রাজশাহীর কাকনহাটের নান্টু রহমানের ছেলে মো. সিজান (২২)।

প্রক্টর দফতর ও গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রহরী পদে চাকরি দেওয়ার নাম করে এক ব্যক্তির সাথে প্রতারণা করছিলেন কয়েকজন প্রতারক সদস্য। আজকে ভুক্তভোগী ব্যক্তিকে নিয়োগ দেবে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন শেখ রাসেল স্কুল মাঠে ডাকেন তারা। এসময় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সদস্যরা খবর পেয়ে চার প্রতারক সদস্যকে আটক করেন।

বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন পদে চাকরি দেওয়ার নাম করে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেন বলেও তথ্য পাওয়া গেছে তাদের বিরুদ্ধে। চারজন নয়, এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ব্যক্তি জড়িত থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রতারক সদস্যের মূলহোতা হলেন এনামুল নামের এক ব্যক্তি। যিনি সব ডিল করে থাকেন বলে আটক সদস্যরা জানান।

অপরদিকে অনুসন্ধানে আরও কিছু ভুক্তভোগী জানান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের জালাল উদ্দীন চাকুরী প্রলোভন দিয়ে বিভিন্ন জনের নিকট থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এক ভুক্তভোগী জানায়, রাজশাহী মহানগরীর টুলটুলি পাড়া এলাকার জালাল উদ্দীন ও তার প্রতারক চক্রের সঙ্গি আপেল ডেকোরেটর মোড়ে নুর হোসেনের জামাই বকুল এবং এক নারী এই প্রতারক চক্রের সদস্য। তারা কয়েকজনের নিকট চাকরি দেওয়ার কথা বলে টাকা চায়।

ভুক্তভোগী ওমর ফারুক জানান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রহরী পদে চাকুরি দিবে বলে ২ লক্ষ টাকা চায় তারা। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নেয়। বাড়িতে গিয়ে ভেরিফিকেশন করে আসে। সে সময় তারা খরচ বাবদ ৬ হাজার টাকাও নেন।

আজকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে চাকরি দেবে বলে ডাকে। আমি যথা সময়ে চলে আসি। এদিকে গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে জানতে পারি তারা সবাই প্রতারক।এদিকে চাকুরী প্রত্যাশি’র ভাই পরিচয়ে

কথা বললে প্রতারক চক্রের সক্রিয় নারী সদস্য আপেল ডেকোরেটর মোড়ের রানী বলেন, আমিও জালাল উদ্দীন স্যারের মাধ্যমে আমার বোন ও আমি চাকুরী নিচ্ছি। তিনি খুব ভালো মানুষ। আপনাদের কোনো সমস্যা হবে না। তাঁর অনেক কোটা আছে। তিনি ইচ্ছে করলেই চাকুরী’র ব্যবস্থা করতে পারবেন। তিনি বাহিরে কথা বলেন না। আপনারা তার টুলটুলি পাড়ার বাসায় গিয়ে টাকা দিয়ে সরাসরি কথা বলে আসেন। তিনি চাকুরী না হওয়া পযর্ন্ত চেক দিবে গ্যারান্টি স্বরুপ। তিনি আরেক প্রতারক চক্র একই এলাকার বকুলের সঙ্গে পরামর্শ করতেও বলেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন আমার বোনের জন্যও তিন লাখ টাকা দিয়েছি তাঁকে।

বকুল প্রতারকের নাম বললেও প্রতারকের মোবাইল নম্বর সার্চ দিলে বিপুল রাজ নাম ভেসে উঠে। অপরদিকে রানির নাম সার্চ দিলে ফা রানি আলমগীর ভেসে উঠে। রাবি’র বিজ্ঞান অনুষদে কর্মরত জালাল উদ্দীন উদ্দিন ফোনে চাকরি প্রত্যাশি হিসেবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চাকুরি কোটা পূর্ণ হয়ে গেছে। এখন নতুন কাউকে নেওয়ার সুযোগ নাই। নিয়োগ হলে আমরা যাদের নাম দিয়েছি তাদের চাকুরি হবে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. আসাবুল হক বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি দেওয়ার কথা বলে চার প্রতারক সদস্যকে আটক করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এরইমধ্যে তারা এ বিষয়ে স্বীকারও করছেন এবং আমরা তাদের কাছ থেকে প্রতারণার অনেক তথ্যও পেয়েছি। এর সাথে জড়িতদের বের করতে আমরা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশনা দিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।’

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *