প্রধানমন্ত্রীকে খোলা চিঠি : রাবি ছাত্রলীগে ভাইরাস ঢুকেছে, ভ্যাকসিন দিয়ে এদের থামিয়ে দিন!

রাজশাহী লীড শিক্ষা

বরাবর,
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।

আমার বাবা একজন দিনমজুর, কৃষক। অনেক কষ্টে বাবা আমার পড়ালেখার খরচ চালিয়েছেন।২০১৪ -১৫ সেশনে আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হই। আর্থিক সমস্যা থাকায় ডিপার্টমেন্টের এক বড় ভাই (ছাত্রলীগের) প্রথম বর্ষ থেকেই হলে থাকার ব্যবস্থা করে দেন। ৪ সিটের একটা রুমে কিছুদিন ছিলাম।

একদিন রাবি মেডিকেলে ঠাণ্ডার ঔষধ নিতে যাই ,সেখানে ভুল চিকিৎসায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ি। শুরু হয় শ্বাসকষ্ট ও এলার্জি সমস্যা। এলার্জির সমস্যা থেকে সুস্থ থাকতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতেই হয়, তাই সিঙ্গেল রুমে যেতে চাই। তখন ছাত্রলীগের আরেক নেতা আমার কাছে থেকে ২ হাজার টাকা নেয় (যদিও সোহরাওয়ার্দী হলে একটি রুমের জন্য ৫ হাজার টাকা করে নিতো ছাত্রনেতারা)।

আমি বাধ্য হয়ে টাকা দেই কারণ মেসে থাকতে গেলে আমার এর থেকেও বেশি খরচ হয়ে যাবে। কিন্তু সে রুমটা আমি পাইনি, কারণ ছাত্রলীগের এক নেতা অন্য একজন ছাত্রের থেকে এর থেকেও বেশি টাকা নিয়ে রুমটা তাকে দিয়ে দেয় ।

আমাকে থাকতে বলে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের ২৬৪ নম্বর রুমে। যেহেতু আমাকে সাপোর্ট দেয়ার মতো রাজশাহীতে কেউ ছিলোনা তাই বাধ্য হয়ে ঐ রুমেই থাকা শুরু করি।

রুমে ওঠার কয়েকদিনের মধ্যেই বুঝতে পারলাম আমার রুমমেট মাদকাসক্ত। বিশ্ববিদ্যালয় ও স্থানীয় অনেক লোকের মাদক সেবনের নিরাপদ জোন হিসেবে ব্যবহার হয় রুমটি। রুমের ভিতরেই চলতো গাজা, ইয়াবা, হিরোইন, মদের আসর ও রমরমা জুয়া খেলা।

আমার এলার্জির সমস্যা থাকায় ওসব নেশার ধোয়ায় খুব সমস্যা হতো ,রাতেও ঘুমাতে পারতাম না। অনেকবার রুম পরিবর্তনের চেষ্টা করেও পারিনি। হল শাখা ছাত্রলীগের নেতার রুম হওয়ার কারণে ছাত্রলীগের ছেলেরাই সেখানে নেশা করতো।

এক অক্ষর পড়ালেখা করতে পারতামনা। এমনকি আমার পরীক্ষার রাতেও চলতো রাতভর নেশার আসর ও জুয়াখেলা।

এরপর শুরু করলো আমার বই বিক্রি করে, ফ্যান বন্ধক রেখে নেশার টাকা জোগাড় করা। ম্যানিব্যাগ থেকে টাকা হারানো ছিলো প্রতিদিনের কমন বিষয়।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি ছাত্রলীগের কিছু মাদকাসক্ত ও গুন্ডা দ্বারা আবরার ফাহাদের মৃত্যু দেখেছেন কিন্তু আমার মতো হাজারো দিনমজুরের ছেলের স্বপ্নের মৃত্যু দেখেননি।

অনেক স্বপ্ন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলাম কিন্তু কিছু সন্ত্রাসী ও কুলাঙ্গার আমার স্বপ্নগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে। যদি কোন দিন প্রতিবাদ করতাম তাহলে হয়তো আমার লাশটাও বাবা মা দেখতে পেতোনা ,তাদের অত্যাচার, মাইর নিরবে সয়ে গেছি। তাই হয়তো জীবিত শরীরে বাবা মায়ের কাছে একটা সার্টিফিকেট নিয়ে ফিরে আসতে পেরেছি।

আমার চৌদ্দগুষ্ঠির সবাই আওয়ামীলিগের সমর্থক। তারপরো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্রলীগের প্রতি নেগেটিভ ধারনা নিয়ে এসেছি, যারা সাধারণ ছাত্র তাদের কি অবস্থা একটু ভাবুন।

মাননীয় দেশরত্ন, ছাত্রলীগের মধ্যে ভাইরাস ডুকেছে। দয়াকরে ভ্যাকসিন দিয়ে এদের থামিয়ে দেন, শেষ করে দেন নয়তো দল থেকে বের করে দেন। মীরজাফর ও খন্দকার মোস্তাকরা প্রতিনিয়ত দুনিয়াতে আসে, ওদেরকে চিনতে হবে।

আপনার সকল ভালো কাজের সুনাম নষ্ট করার জন্য ভাইরাসযুক্ত এই ছাত্রলীগই যথেষ্ট। সূত্র: দৈনিক আলোকিত ভোর।

ইতি
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স, মাস্টার্স শেষ করা এক কৃষকের ছেলে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *