বাঘায় বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারে অভিযোগ,স্থানীয়দের বাঁধায় কাজ বন্ধ

রাজশাহী

বাঘা প্রতিনিধি: রাজশাহীর বাঘা উপজেলার মীরগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণে নি¤œমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। অধিক লাভের আশায় সংশ্লিষ্ট এস্টিমেট ডিজাইন অনুযায়ী কাজ না করে সিংহভাগ টাকা আত্মসাতের পাঁয়তারা চালাচ্ছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। স্থানীয়দের অভিযোগ প্রয়োজনীয় তদারকির অভাবেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে অন্যান্য কাজ করছেন।

জানা গেছে, বিদ্যালয়টির চারতলা বিশিষ্ট ভবনের প্রথম তলা নির্মাণের কাজ চলছে। সেখানে একতলার ছাদ ঢালাই এর জন্য নিম্ন মানের ইটের খোয়া ও অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে কাজের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। বিষয়টি নজরে এলে কাজ বন্ধ করে দেন বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও স্থানীয়রা। তারা জানায়, বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে ময়লাযুক্ত নিম্নমানের বালু, ইট, সিমেন্ট ও রড। কোনো প্রকৌশলী কিংবা কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত না থাকায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের কাজের সুযোগ পাচ্ছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

নিম্নমানের কাজের বিষয়টি অবগত করালে গত বুধবার (৬ মে) শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী সুমন রানা ও উপসহকারী প্রকৌশলী উজ্জল রায় সরেজমিন পরিদর্শন করে বেশকিছু অনিয়মের চিত্র দেখতে পান। কাজ বন্ধ রাখতেও নির্দেশ দেন তারা। এসময় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে সিডিউল মোতাবেক নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করে কাজ করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।

সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, রাজশাহীর শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের অক্টোবর মাসে মীরগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪র্থ তলা একডেমিক ভবন নির্মানের জন্য দরপত্র আহŸান করা হয়। পরবর্তীতে লটারীর মাধ্যমে ২০১৮ সালে ৬ নভেম্বর ৫% কমিশনে ২ কোটি ৮৮ লাখ ৩২ হাজার ২৬৫ টাকা ব্যয়ে প্রতিষ্ঠানের চরতলা ভবন নির্মাণের কাজ পান মেসার্স আব্দুল গনি কনষ্ট্রাকসন এর স্বাত্বাধিকারী আব্দুল গনি । একই বছরের ১৩ অক্টোবর যার ভিত্তি প্রস্তর করেণ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব শাহরিয়ার আলম এমপি(বাঘা-চারঘাট)। চলমান কাজটি শেষ হওয়ার কথা ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুন মাসে। কিন্তু নীচ তলার ছাদের ঢালাই বাদেই সাটারিং পর্যন্ত কাজ শেষ করেছেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ।

সরেজমিন শুক্রবার (৮-০৫-২০২০) কথা হলে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বকুল বলেন, ভবণের নির্মাণ কাজ শুরুর কয়েকদিন পরে এস্টিমেট হাতে পেয়েছি। কাজ শুরু থেকেই ঠিকাদার তাঁর পছন্দমতো কাজ করছেন এতে কোনো সন্দেহ নেই। সিডিউল মোতাবেক কাজ করার জন্য ইতিপুর্বে একাধিকবার অনুরোধ করা হলেও আমাদের কোনো কথাই শুনছেন না তিনি। আমরা তাকে বললে তিনি তর্কে জড়িয়ে উল্টো কাজ বন্ধ করার হুমকি ধামকি দেন।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এসএমসি কমিটির সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বলেন, বিদ্যালয়টির ভবন নির্মাণকাজের অনিয়মের বিষয়ে অনেক ব্যক্তি অভিযোগ করেছে। একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে ভবন নির্মাণের কাজ করা হলে অল্প দিনেই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়বে। ভবনধসে যেকোনো ধরনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে। তিনি নির্মাণাধীন ভবনটির কাজ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের তদারকি করা উচিত বলে মত প্রকাশ করেন। নিম্নমানের ইট ভেঙ্গে খোয়া শুরু করলে স্থানীয় সচেতন ব্যক্তিবর্গদের নিয়ে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
রাজশাহীর শিক্ষা প্রকৌশলী অধিদপ্তর নির্বাহী প্রকৌশলী রেজাউল ইসলাম বলেন, কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মানে নিম্নমানের কোন সামগ্রী দিয়ে কাজ করতে দেয়া হবে না। এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

ঠিকাদার বাচচুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন ইট নিম্নমানের নয়, ইটে রেইন স্পট রয়েছে, আমি রডসহ অন্যান্য সামগ্রী সিডিউল মোতাবেক ব্যবহার করেছি। কিন্তু ইট গুলো একটু খারাপ হয়ে গিয়েছে। তর্কে জড়িয়ে কথা কাটাকাটি হয়েছে তবে হুমকি ধামকির কথাটি সঠিক নয়।

স্ব.বা/বা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *