বাঘায় ভাঙন ঝুঁকিতে চকরাজাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

রাজশাহী

আব্দুল হামিদ মিঞা,বাঘা: ভাঙন থেকে মাত্র ১০ মিটার দূরে রয়েছে চকরাজাপুর সরকারি প্রাাথমিক বিদ্যালয় ভবনটি। স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে আশি লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিত টিনসেডের আঁধা পাঁকা স্কুলভবনটি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। সরকারের দেওয়া ভ’মিহীন বাহের আলী তার পাঁকা বাড়িটি অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন। ভাঙন কবলিত এলাকা থেকে বিদ্যুতের ২টা পুল তুলে নেওয়া হয়েছে। বিদ্যালয়টির দক্ষিনে এক কিলোমিটার পাঁকা রাস্তার ৩ভাগের ২ভাগই চলে গেছে নদীতে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মজিবর রহমান জানান, ৫ বছর আগে ভাঙনের কবলে পড়ে.বিদ্যালয়টি। সেখান থেকে দুই কিলোমিটার দূরে কালিদাশখালি -দাদপুর এলাকায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এবছর আবার ভাঙনের কবলে পড়েছে । ভাঙন থেকে মাত্র ১০ মিটার দূরে রয়েছে স্কুলভবনটি।

ভাঙনে পাল্টে যাওয়া চকরাজাপুরের মানচিত্রে আবারো আঘাত হেনেছে প্রমত্তা পদ্মা। হঠাৎ করেই পানি বৃদ্ধির সাথে নতুন করে পদ্মায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। ‘নদীর একূল-ওকূল ভাঙা গড়ার আচরণগত এই নিষ্ঠুরতায় ভাঙনের কবলে পড়ে বিলিন হচ্ছে ফসলি জমি-পাছপালা। বাঘা উপজেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার দুরে চকরাজাপুর ইউনিয়ন।

ভাঙনের কবলে পড়ে মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে উপজেলার পদ্মার চরাঞ্চলের চকরাজাপুর গ্রাম। এই গ্রামের নামেই নামকরণ করা হয়েছে চকরাজাপুর ইউনিয়নের। গত বছরের ভাঙনে ইউনিয়নটির ৯টি ওয়ার্ড়েও মধ্যে ৩, ৫, ৬ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ড়ের বেশির ভাগ এলাকা নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। আর ৪ নম্বর চক রাজাপুর ওয়ার্ডের পুরোটি গিলে নিয়েছে পদ্মা।

নাটোর পল্লী বিদুৎ সমিতি-২ এর বাঘা জোনাল অফিসের ডিজিএম সুবির কুমার জানান,ভাঙনের কবলে পড়ায়, এবছর চর বিদ্যুতের ২টা পুল তোলা হয়েছে। গত বছর এলাকার বিদ্যুতের পুল তোলা হয়েছিল ১১৫টি। ৫৪ কিলোমিটার এলাকার ২ হাজার ৪৮৬ জন গ্রাহকের বিদুৎতের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

বুধবার(০৬-০৭-২০২২) সরেজমিন ভাঙন কবলিত এলাকায় গিয়ে কথা হলে স্থানীয়রা জানান, পদ্মার চরাঞ্চলে ভাঙন কম বেশি লেগেই আছে। দীর্ঘদিনের ভাঙ্গনে ইউনিয়়নের ৩ ভাগের একভাগ চলে গেছে নদীগর্ভে । এভাবে ভাঙতে থাকলে উপজেলার মানচিত্র থেকে হারিয়ে় যাবে চকরাজাপুর ইউনিয়়ন।

ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আজিজুল আযম বলেন, গত তিন দশকের ভাঙ্গনে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে, চকরাজাপুরসহ পাকুড়িয়া ও মনিগ্রাম ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী এলাকার হাজার হাজার বিঘা ফসলি জমি, বসত ভিটা,রাস্তা-ঘাট,হাট-বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ মসজিদ ও কবরস্থান। ওই সময় থেকে নদী ভাঙ্গনে সর্বস্ব হারিয়েছে, স্বচ্ছল-কৃষি নির্ভর প্রায় সহস্রাধিক পরিবার। এদের অনেকেই বিভিন্ন স্থানে গিয়ে বসত বাড়ী গড়ে তুলে বসবাস করছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাট-বাজার অন্য জায়গায় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

বর্তমান চেয়ারম্যান ডিএম বাবুল মনোয়ার বলেন, ইউনিয়নে পাঁকা রাস্তা,বিদুৎসহ সার্বিকভাবে উন্নত হয়েছে। কিন্তু পদ্মার ভাঙনে সেগুলো রক্ষা করা যাচ্ছেনা। উপজেলার পাকুড়িয়া ইউনিয়নের আলাইপুর নাপিতপাড়া থেকে চকরাজাপুর ইউনিয়নের লক্ষীনগরের শেষ মাথা পর্যন্ত নদী শাসনের আওতায় প্রকল্পের যে কাজ শুরু হয়েছে, সেটি শেষ হলে পদ্মার প্রান্ত নদী ভাঙনের হাত হতে রক্ষা পাবে। বাঁচবে চকরাজাপুর ইউনিয়নসহ পাকুড়িয়া ও মনিগ্রাম ইউনিয়নের পদ্মা পাড়ের লোকজন।

উপজেলা নির্বাহি অফিসার শারমিন সুলতানা বলেন,বিদ্যালয়টি পুণঃস্থাপনের জন্য জায়গা দেখা হয়েছে। সেখানে স্থানান্তর করার জন্য প্রধান শিক্ষককে বলা হয়েছে। এছাড়াও আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে ভাঙন কবলিত এলাকার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব। রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম শেখ বলেন, নদী শাসনের জন্য চারঘাট-বাঘার পয়েন্টে, কাজ চলছে। ৩০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের মধ্যে বাঘার ১৩ কি. মি. নদী ড্রেজিং রয়েছে।

স্ব.বা/বা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *