তিন যুগের ধরে গাছ লাগাচ্ছেন শাহজাহান

কৃষি জাতীয়

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: কৌড়ি গ্রামের একটি সড়কের দুই পাশে গাছের সারি মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার কৌড়ি গ্রাম। পুরো গ্রামজুড়ে রাস্তার দু’পাশে গাছের সারি। প্রতিটি বাড়িতেই সুশৃঙ্খল বৃক্ষরাজি। গাঁয়ের আঁকাবাঁকা পথের দু’পাশে বনজ ,ফলদ ও ওষুধি গাছে সবুজের সমাহার। নজরকাড়া হাজারও বৃক্ষের সাজে সজ্জিত গ্রাম।

এ কারণে মানিকগঞ্জসহ আশপাশের মানুষের কাছে গ্রামটি দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এই গ্রামের বাসিন্দা শাহজাহান বিশ্বাসের শখ গাছ লাগানো। গাছের সঙ্গে তার শখ্যতা তিন যুগের। এলাকায় তিনি ‘বৃক্ষ প্রেমিক শাহজাহান’ নামেই পরিচিত। কৌড়ি গ্রামে তিনি নিজ খরচে ৬০ থেকে ৭০ হাজার গাছ লাগিয়েছেন।

এ বিষয়ে স্থানীয় এম এ রউফ ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, কৌড়ি গ্রামের প্রত্যেকটি রাস্তায় হাঁটলে দেখা যাবে দু’ পাশে গাছের সারি। সবুজ গাছে ঘেরা গ্রামটি। শাহজাহান বিশ্বাস নিঃস্বার্থভাবে গাছগুলো রোপণ করেছেন। এসব গাছের কারণে গ্রামের সৌর্ন্দয অনেক বেড়েছে।

একই কলেজের আরেক সহকারী অধ্যাপক ডি এম নাসিম জানান, শাহজাহান বিশ্বাসের গাছ লাগানো দেখে এলাকার অনেকেই উদ্বুদ্ধ হয়ে গাছ লাগাচ্ছেন। গ্রামটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা।

গ্রামের মনোমুগ্ধকর সবুজ গাছগাছালি দেখতে গিয়ে কথা হয় বৃক্ষপ্রেমী শাহজাহান বিশ্বাসের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এইচএসসি পাসের পর ১৯৭৬ সালে বিদেশে চলে যাই। বিভিন্ন দেশের বনাঞ্চল আর বৃক্ষরোপণ দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে বছর পাঁচেক পর দেশে ফিরে গড়ে তুলি নার্সারি। সেখানে চারা উৎপাদন করে রাস্তার দুই পাশে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি অফিসের ক্যাম্পাসে নিজের খরচে গাছ লাগাতে শুরু করি।’

শাহজাহান বিশ্বাস কেন গাছ লাগান জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার জন্য গাছ লাগাতে হয়। জীবনের নানা প্রয়োজনে, নানা সংকটে এই গাছ যে কতভাবে উপকারে আসে তা বলে শেষ করা যাবে না।’ গাছ লাগানোর সুফল জানাতে প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে মানুষকে গাছ লাগাতে অনুপ্রাণিত করেন তিনি। কৌড়ি এলাকার পুরো গ্রামজুড়ে রাস্তার দু’পাশে গাছ লাগানোর কারণে মানিকগঞ্জসহ আশপাশের মানুষের কাছে গ্রামটি দর্শনীয় এই স্থান হিসেবে পরিচিত লাভ করেছে।

শাহজাহান বিশ্বাসের এমন উদ্যোগের প্রশংসা করে স্থানীয় বন বিভাগ জানায়, বৃক্ষরোপণে তাকে নানা পরামর্শ দেওয়া হয়। তাকে দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে হরিরামপুর উপজেলার কৌড়ি গ্রামের আশেপাশের লোকজনও কয়েক লাখ গাছ লাগিয়েছেন।

কৌড়ি গ্রামের তাহেজ মিয়া বলেন, ‘রাস্তার ধারে আমার ১১ শতাংশ জায়গা আছে। সেখানে শাহজাহান বিশ্বাস ১০ বছর আগে ১৪টি গাছ রোপণ করেছিলেন। গত বছর সেই ১৪টি গাছ বিক্রি করে আমি একটি জায়গা কিনে বাড়ি করেছি। মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। আমার মতো আরও অনেকে শাহজাহান বিশ্বাসের রোপণ করা গাছ বেচে নিজেদের অনেক প্রয়োজন মিটিয়েছে। ৬০ বছর বয়সী চিরকুমার শাহজাহান বিশ্বাস মৃত্যুর আগ পর্যন্ত গাছ লাগিয়ে যেতে চান।

নিজ হাতে ৬০ থেকে ৭০ হাজার গাছ লাগিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘উদ্ভিদ আর প্রাণী এমন নিবিড়ভাবে জড়িত যে একটি ছাড়া অপরটি নিরুপায়। মানুষ তো প্রতিনিয়ত বাড়ছে। আমাদের বেঁচে থাকার জন্য যে পরিমাণ উদ্ভিদ দরকার সেই পরিমাণ গাছপালা বাড়ছে না। এমন চললে এই দেশ এক সময় মরুভূমি হয়ে যাবে।’

শাহজাহান বিশ্বাস বলেন, গাছও একটা ইন্ডাস্ট্রিজ। সারাদেশে যদি পরিকল্পনা অনুযায়ী গাছ রোপণ করা যায় তাহলে কোনও অভাব থাকবে না।

দেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্যও নষ্ট হতো না। আমি যখন আমার গ্রামের মেঠোপথ দিয়ে হাঁটি তখন দেখতে পাই গাছের ছায়ার নিচে বসে অনেক কৃষক বিশ্রাম নিচ্ছেন। এ দৃশ্য আমার অনেক ভালোলাগে।সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *