সুরমা ভ্যালি পার্ক যেনো প্রেমিক-প্রেমিকার অসামাজিক কর্মকাণ্ডের আখড়া

জাতীয়

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: সুনামগঞ্জ পৌরসভা ও শহরতলীর মানুষের বিনোদন ও অবসর সময় কাটানোর জন্য সদর উপজেলার কুরবানগরে নির্মাণ করা হয় সুরমা ভ্যালি পার্ক। তবে সুরমার নদীর তীরবর্তী পার্কটি ভ্রমনপিয়াসিদের কাছে কদর পাওয়ার পাশাপাশি অসামাজিক কর্মকাণ্ডের আখড়াতেও পরিণত হয়েছে।

প্রকাশ্যে প্রেমিক-প্রেমিকার অনৈতিক কর্মকাণ্ড চলে এ পার্কে।

জানা যায়, সুনামগঞ্জের সাধারণ মানুষের বিনোদনের জন্য ২০১৩ সালে সুরমা ভ্যালি পার্কের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন সাবেক জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী। কিন্তু এরই মধ্যে এ পার্কে তরুণ-তরুণী ও প্রেমিক-প্রেমিকার অবৈধ মেলামেশার পাশাপাশি রাতে বহিরাগতদের মাদকের আড্ডা বসে। বিষয়টি সবার জানা থাকলেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৩ সালের ৫ জুলাই ধারারগাঁও গ্রামের সুরমা নদী তীরবর্তী তিন একর জায়গায় সুরমা ভ্যালি পার্ক নির্মাণ করা হয়। আধুনিকতার ছোঁয়া থাকার কথা থাকলেও পার্কের কয়েকটি স্থানে বসার জায়গা ছাড়া কিছুই নেই। শিশুদের জন্য দুটি খেলনা রাখা হলেও এখন তা নষ্ট হয়ে গেছে।

সুরমা ভ্যালি পার্ক ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পার্কে বসে থাকে তরুণ-তরুণীরা। কেউ কেউ প্রকাশ্যে অনৈতিক সম্পর্কে লিপ্ত। এর মধ্যে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রয়েছে। স্কুল চলাকালীন কিংবা বিকেলে প্রাইভেট পড়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে প্রেমিকার সঙ্গে পার্কে বসে আড্ডা দেয় প্রেমিকরা। অনৈতিক কাজের জন্য পার্কের নদীর পাড় কিংবা পার্কের মাঠকে ব্যবহার করছে তারা।

নিয়ন্ত্রণহীন অসংযত কার্যকলাপে একদিকে যেমন তরুণ-তরুণীদের নৈতিক অবক্ষয় ঘটছে অন্যদিকে নষ্ট হচ্ছে জেলা শহরের ভাবমূর্তি। ঘটছে নানা অপ্রীতিকর ঘটনা। তাছাড়া পার্কে ঘুরতে আসা সাধারণ মানুষরা পড়ছেন বিব্রতকর অবস্থায়। লোকলজ্জার ভয়ে তাদের থাকতে হচ্ছে কোনঠাসা হয়ে। শহরতলীর এমন একটি স্থানে পার্কের সামাজিক পরিবেশ রক্ষা প্রশাসনের নজরদারির উপর গুরুত্বারোপ করেছেন স্থানীয়রা।

এছাড়া সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে অপরাধের মাত্রা। গভীর রাতে বহিরাগতদের মাদকের আড্ডা বসে পার্কে। রাতে মানুষজন না থাকার সুযোগে সহজেই পার্কে বসে চলে মাদক সেবন ও বিক্রি।

পার্কে বসে এমন অসামাজিক কর্মকাণ্ডের কারণে অতিষ্ঠ স্থানীয়রা। তরুণ-তরুণীকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে বিপাকে পড়েন বিকেলে পার্কে ঘুরতে আসা মানুষ। সবার চোখের সামনে এসব হলেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের সমালোচনা করেছেন কেউ কেউ।

ধারারগাঁও এলাকার বাসিন্দা ফিরোজ আলী বলেন, সুরমা ভ্যালি পার্কের অবস্থা খুবই খারাপ। পার্কে বসে অনৈতিক কাজ করে তরুণ-তরুণীরা। রাতে মাদক সেবন করে বহিরাগতরা। পার্কে বসে ছাতার ভেতর লুকিয়ে খারাপ কাজ করে প্রেমিক যুগল। সবচেয়ে লজ্জার বিদ্যালয়ের ইউনিফর্ম পরে আপত্তিকর কাজ করে ছাত্র-ছাত্রীরা। কিন্তু এ নিয়ে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না পুলিশ প্রশাসন। জেলা প্রশাসন থেকে পার্কে নিরাপত্তাপ্রহরী দেয়া প্রয়োজন।

হালুয়ার ঘাট এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল মালেক বলেন, সুরমা ভ্যালি পার্ক যেনো প্রেমখানা। এখানে স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েরা প্রতিদিন ছুটে আসে। প্রকাশ্যে চলে বেহায়াপনা, দেখার কেউ নেই। আমরা স্থানীয়রা মানসম্মান নিয়ে থাকা দায় হয়ে পড়েছে।

পার্কে বেড়াতে আশা এক দম্পতি বলেন, একটু অবসর সময় কাটাতে পরিবার নিয়ে পার্কে আসলে বিপাকে পড়তে হয়। যে দিকেই চোখ যায় উঠতি বয়সি ছেলেমেয়েদের অসংযত কার্যকলা দেখতে হয়।

স্থানীয় আরেক বাসিন্দা রবিউল ইসলাম বলেন, এখানে অসামাজিক কাজের পাশাপাশি মাদক চলে। সন্ধ্যা হলেই বহিরাগতরা মাদক সেবন করে। পার্কে বসেই মাদক কেনাবেচা হয়।

এ বিষয়ে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল আহাদ বলেন, স্কুল চলাকালীন কোনো শিক্ষার্থী পার্কে বসতে পারবে না, এটার জন্য আমরা এখন থেকে অভিযান অব্যাহত রাখব। পার্কে কোনো ধরনের অনৈতিক কাজ করতে দেয়া হবে না। কেউ যেন পার্কে মাদক সেবন করতে না পারে সেজন্য অভিযান চালানো হবে। সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *