গাঙ্গপাড়ার বাড়ি-ঘর ও স্থাপনা উচ্ছেদের আগে পুনর্বাসনের দাবি এমপি বাদশার

রাজশাহী লীড

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহী মহানগরীর পবা নতুনপাড়া এলাকার গাঙ্গপাড়া খালের দুই পাশের বাড়ি-ঘর ও স্থাপনা উচ্ছেদের আগে পুনর্বাসনের দাবি তুলেছেন সদর আসনের এমপি ফজলে হোসেন বাদশা। এ দাবিতে উচ্ছেদের দিন রোববার ওই এলাকায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন তিনি। এ ছাড়া উচ্ছেদের আগে মানবিক কারণে এলাকার বাসিন্দাদের সময় দেয়ার কথা বলেছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির এই সাধারণ সম্পাদক।

তিনি বলেন, এই শীতের মধ্যে ঘরবাড়ি সরাতে তিন দিন সময় বেঁধে দেওয়াটা অন্যায়। তাঁরা এই শীতে কোথায় যাবে। এই কাণ্ডজ্ঞানহীন সিদ্ধান্ত বাদ দিয়ে তাঁদেরকে সময় দেওয়া উচিত। এ ছাড়া দেখা দরকার, পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা কতটুকু। তারা যে সার্ভে করবে সেটা নির্ভুল হতে হবে, নিরপেক্ষ হতে হবে। আমরা এখানকার জনপ্রতিনিধি হিসেবে সেটা আমাদেরকে অবগত করা হয়নি। সরকারি যেকোন উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমরা সহযোগিতা করে থাকি এবং আগেও করেছি।

তিনি আরও বলেন, এখানে তাঁরা নিজেরা একটা সার্ভে করেছে, সেটা ত্রুটিপূর্ণ। এবং সেই ত্রুটিপূর্ণ সার্ভে দ্বারা এখানে হাজার হাজার মানুষকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। এই তীব্র শীতে বাড়িঘর ছাড়া করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তাঁদেরকে অবশ্যই পুনর্বাসন করে এখান থেকে উচ্ছেদ করতে হবে। বাদশার অভিযোগ শনিবার তাঁর সুপারিশকৃত স্মারকলিপি জেলা প্রশাসক পেলেন কিনা সেটাও তিনি জানেন না। তাঁর ফোন জেলা প্রশাসক ধরেননি। এমন জেলা প্রশাসক তিনি তার ৫০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে দেখেননি বলে জানান।

বাদশা বলেন, শহরের মধ্যে পদ্মা নদী দখল করে বালু তোলা হচ্ছে। যেটা বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসেছে। সেখানে জেলা প্রশাসকের কোন ভূমিকা নেই। কারণ এই সব ব্যবসার সঙ্গে কোটি কোটি টাকা জড়িত। এই কারণে কি আমাদের জেলা প্রশাসকরা দুর্বল হয়ে পড়েছে, এটা আমার প্রশ্ন।

রোববার গাঙপাড়ায় অবস্থানকালে মুঠোফোনে হুমকি পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন বাদশা। তিনি বলেন, এখানে অবস্থানকালে তাকে হুমকি দিয়ে বলা হয়েছে ‘আপনার বিপদ আছে।’ বাদশা বলেন, সাধারণ মানুষের সঙ্গে আছি, থাকবো। কারও হুমকিতে কিছু যায় আসে না। তিনি নিরাপত্তার জন্য থানায় সাধারণ ডায়েরি করবেন বলে জানান।

১৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলন শহিদুল ইসলাম বলেন, গাঙপাড়া ওই খালপাড়ে স্বাধীনতার আগে থেকে প্রায় ২৫০টি পরিবার বসবাস করছে। প্রতিটি বাড়ির হোল্ডিং নম্বর রয়েছে। বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের সংযোগও রয়েছে। প্রায় তিন হাজার মানুষের মধ্যে ৫০ এর বেশি এবার এসএসসি পরীক্ষার্থীও রয়েছে।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে মাইকে ঘোষণা দিয়ে রোববারের মধ্যে স্থাপনা নিজ দায়িত্বে নিয়ে সরে যেতে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড। পরে গত শুক্রবার রাতে পুলিশ গিয়ে হুমকি-ধামকি দিয়ে বাসিন্দাদের সরে যেতে বলে। এতে বাসিন্দারা ভয় পেয়ে শনিবার সকালের দিকে কেউ কেউ বাড়িঘর ভাঙা শুরু করে দেয়। কেউ কেউ অন্যত্র বাসা ভাড়া খুঁজতেও যায়। অবশ্য এর আগে বৃহস্পতিবার উচ্ছেদের ঘোষণা শুনে শুক্রবার বাসিন্দারা মানববন্ধন করে উচ্ছেদের আগে পুনর্বাসনের দাবি জানান।

পরে শনিবার সকালে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির রাজশাহী মহানগর কার্যালয়ে গিয়ে গাঙপাড়া এলাকার বাসিন্দারা সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশাকে বিষয়টি অবহিত করে এই শীতে তাদের ঘরবাড়ি রক্ষার অনুরোধ করেন। এ সময় জেলা প্রশাসক বরাবর লেখা এলাকাবাসীর সময় বৃদ্ধি ও পুনর্বাসনের একটি আবেদনপত্রে এ ব্যাপারে সুপারিশ করেন সংসদ সদস্য ফজলের হোসেন বাদশা।

তিনি সুপারিশপত্রে লেখেন, শীতের সময় উচ্ছেদ অভিযান চালানো উচিত হবে বলে মনে করি না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উচ্ছেদের বিষয়ে সতর্ক পদক্ষেপ নেয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন। অতএব বিষয়টি বিবেচনার জন্য সুপারিশ করছি। কিন্তু এই স্মারকলিপি জেলা প্রশাসক পেয়েছেন কিনা তা জানতে বার বার ফোন দিয়েও সংসদ সদস্য জেলা প্রশাসকের বক্তব্য পাননি।

শনিবার রাতে তিনি গাঙ্গপাড়া এলাকা পরিদর্শন করেন। এ সময় তাকে ঘিরে ধরেন এলাকার সহস্রাধিক বাসিন্দা। তারা এই শীতে তাদের ঘরবাড়ি রক্ষার জন্য সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশার হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এ সময় সংসদ সদস্য বাদশা বলেন, শীতের মধ্যে তিন দিনের নোটিশ দিয়ে উচ্ছেদ করা অমানবিক। আর উচ্ছেদ করতে হলে অবশ্যই পুনর্বাসন করতে হবে।

পুনর্বাসন ছাড়া কোনোভাবেই উচ্ছেদ করা যাবে না। মানবিক কারণে তিনি এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানিয়েছিলেন। পরে উচ্ছেদের দিন সকাল থেকে তিনি গাঙপাড়ায় অবস্থান শুরু করেন।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক হামিদুল হককে একাধিকবার ফোন করেও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবার্হী প্রকৌশলী মো. কহিনুর আলম বলেন, জেলা প্রশাসকের সহযোগিতায় সরকারি নিয়ম মোতাবেক খাল খনন করা হবে। এ বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে আগে থেকেই অবহিত করা হয়েছে বলে তিনি জানান। তাদের উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। এটা চলবে।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *