স্বদেশ বাণী ডেস্ক: বিএনপিকে রেখেই সংসদে যাচ্ছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম প্রধান শরিক দল গণফোরাম। এমনটিই ইঙ্গিত দিয়েছেন এই জোটের শীর্ষ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। শনিবার সংবাদ সম্মেলনে এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, শপথ গ্রহণের ক্ষেত্রে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবে গণফোরাম।
গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সাত আসনে জয় পায়। ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শরিক গণফোরাম দুই আসনে জয় পায়।
এর মধ্যে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহম্মেদ এবং গণফোরামের নিজস্ব প্রতীক উদীয়মান সূর্য নিয়ে মোকাব্বির খান নির্বাচিত হন।
এছাড়া বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলসহ দলটির পাঁচজন নির্বাচিত হন ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে। ভোটে ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ এনে নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করার পাশাপাশি শপথ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। অন্যদিকে ভোট প্রত্যাখ্যান করলেও বিএনপির পাঁচজনকে রেখেই গণফোরামের নবনির্বাচিত দুই সংসদ সদস্য শপথ নিচ্ছেন।
এক্ষেত্রে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরাম নেতাদের মতে, সংসদের বাইরে শুধু নয়, সংসদের ভেতরে থেকেও সরকারের সমালোচনা করা প্রয়োজন। এই যুক্তিতে শপথ নিতে চান তারা।
এর আগে বিষয়টি চূড়ান্ত করতে শনিবার দিনভর দলীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন ড. কামাল হোসেন।
বৈঠক শেষে বিকাল ৪টায় সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, গণফোরামের নবনির্বাচিত দুই সংসদ সদসস্যের শপথ নেয়ার বিষয়ে তারা ইতিবাচক।
তিনি বলেন, শপথ নেয়ার বিষয়টি তারা ‘ইতিবাচক’ দৃষ্টিতে দেখছেন এবং ‘ইতিবাচক’ সিদ্ধান্ত নেবেন।
তোপখানা রোডের শিশুকল্যাণ পরিষদের মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘দলের হয়ে নির্বাচিত দুজনের শপথ নেয়ার বিষয়ে আমরা ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করছি। যে দুজন প্রার্থী নির্বাচনে তীব্র প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। আমরা তাদের বিষয়ে ইতিবাচকভাবে সিদ্ধান্ত নেব।’
গণফোরাম থেকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে মৌলভীবাজার-২ আসনে জয়ী হয়েছেন সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা ও ডাকসু সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহম্মেদ। সিলেট-২ আসনে ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী হিসেবে জয়ী গণফোরামের স্থায়ী কমিটির সদস্য মুকাব্বির খান দলীয় প্রতীক উদীয়মান সূর্য নিয়ে ভোট করেন।
সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, বিএনপি যেহেতু শপথ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং তাদের প্রতীকে ভোট করে গণফোরাম সদস্য শপথ নিলে তা দুই দলের মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টি করবে কি না? জবাবে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘আমার মনে হয় না।’
শপথ নেয়ার পক্ষে যুক্তি দিয়ে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘আমরা এটা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব। সিদ্ধান্তের বিষয় আছে। এটা সিদ্ধান্ত সাপেক্ষ। আমার নিজের ধারণা আমরা ইতিবাচক সিদ্ধান্তই নেব। আমরা নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছি। কিন্তু আমাদের প্রার্থীরা তো বিরোধী দল থেকে বিজয়ী হয়েছেন। আমরা বলেছি, এটা তাদের অর্জন। তারা প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তাদের নির্বাচিত হওয়ার জন্য আমরা তাদেরকে অভিনন্দন জানিয়েছি। অংশগ্রহণ করার ক্ষেত্রে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট টিকে থাকবে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সিদ্ধান্ত ইতিবাচক হবে বলে আমি মনে করি। কারণ জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্য আমি কাজ করে আসছি এবং করছি। নীতিগতভাবে আমি মনে করি, ঐক্যকে রাখার জন্য আমরা নীতিগত সিদ্ধান্ত নেব। এ বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে’।
আন্দোলনে বিষয়ে জানতে চাইলে- গণফোরাম সভাপতি বলেন, আন্দোলন তো করেই যাচ্ছি। জনমত গঠন করাও আন্দোলন। আলোচনা করে নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করাও আন্দোলনের অংশ। আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে এবং আন্দোলন আরও তীব্র হতে পারে’।
জামায়াতের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ড. কামাল বলেন, ‘জায়ামাত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে নেই। জামায়াত ২০ দলীয় জোটে আছে’।
তিনি বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যদি কার্যকরভাবে কাজ করে তাহলে সরকারের ওপরে চাপ থাকবে আইন মেনে দায়িত্ব পালন করার। আর সরকারের ওপরে চাপ তৈরির করার ক্ষেত্রে আমাদের এই ঐক্যের চাপ কাজে লেগেছে। আরও লাগবে বলে আশা করি’।
ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘দুঃখ লাগে, বছরে শুরুতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন খেয়াল- খুশির ব্যাপার নয়। সংবিধানের তো একটা কর্তব্য রয়েছে। আমরা চেয়েছি, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, যেখানে জনগণের মালিকানা থাকবে। তারা মালিক হিসেবে তাদের প্রতিনিধিত্ব করবে। খুবই দুঃখজনক, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনকে আঘাত দেয়া হয়েছে। আর নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ না হলে সেখানে প্রতিনিধিত্বশীল গণতন্ত্র থাকে না। এটা সংবিধানের ওপরে আঘাত দেয়া’।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টু। সেখানে বলা হয়, তফসিল ঘোষণা থেকে শুরু করে প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে ঐক্যফ্রন্টসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে মাঠে নামতে দেয়নি ক্ষমতাসীনরা। সেনাবাহিনী নামার পর পরিবেশের উন্নতি হবে বলে মনে করেছিল গণফোরাম। কিন্তু তারা বলে, নির্বাচন কমিশন ও সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারা আইনের আবরণে সেনাবাহিনীর ভূমিকাকে নিয়ন্ত্রণ করে অকার্যকর করে রাখে।
নোয়াখালীর সুবর্ণচরে ধর্ষণের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে গণফোরাম বলেছে, এ ঘটনায় জনগণের সাংবিধানিক অধিকার, মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার ধর্ষিত হয়েছে। এছাড়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট জালিয়াতিসহ নানান অভিযোগ এনে নিরপেক্ষ সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানায় গণফোরাম।