বীরগঞ্জে গাছে বেঁধে মাদ্রাসাছাত্রকে নির্যাতন, গ্রেফতার ২

জাতীয় লীড

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: দিনাজপুরের বীরগঞ্জে মোঃ মিনহাজ (১৫) নামে এক মাদরাসা ছাত্রকে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনে গাছে বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ ঘটনায় ২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

শুক্রবার আটক দুই অভিযুক্তকে আদালতের মাধ্যমে দিনাজপুর কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।

জানা গেছে, উপজেলার পাল্টাপুর ইউনিয়নের ঘোড়াবান্দ কেরানী পাড়ার মোঃ ছইদুল ইসলামের ছেলে মোঃ মিনহাজ (১৫) দিনাজপুর জেলা সদরে অবস্থিত ফরিদপুর গোরস্তান মাদরাসা নাজেরা ক্লাসের ছাত্র। করোনা মহামারীর কারণে মাদরাসা বন্ধ থাকায় সে বাড়ীতে অবস্থানকালে প্রতিবেশি মোঃ আবু বক্কর সিদ্দিকের স্ত্রী কন্যা আবু বক্কর সিদ্দিকের স্ত্রী রমেনা বেগম, মেয়ে আফরোজা খাতুন (১০) এবং ছেলে রুহান ইসলাম (৮)কে সে আরবি পড়াতো।

এরই ধারাবাহিকতায় গত বুধবার (২৯ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৭টায় আরবী পড়ানোর সময় আবু সিদ্দিকের পরিবার মোঃ মিনহাজের বিরুদ্ধে তার মেয়েকে যৌন হয়রানির চেষ্টার অভিযোগ এনে মারধর শুরু করে। মিনহাজ এ সময় আত্মরক্ষার্থে পালিয়ে যায়। আত্মগোপনে থাকা মিনহাজকে দুপুরে তার নানার বাড়ী থেকে ধরে এনে মোঃ আবু বক্কর সিদ্দিক তার বাড়ীর সামনে সুপারী গাছে বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন চালায়। এ সময় তাকে উদ্ধার করতে আসা পরিবারের লোকজনের উপরও হামলা চালানোর অভিযোগ উঠে। পরে প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় পরিবারের লোকজন মিনহাজকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।

এ ব্যাপারে আহত মিনহাজ বলে, দীর্ঘ ছয় মাস ঐ পরিবারকে আরবী শিক্ষাদান দিয়ে আসছি। এ পর্যন্ত এক মাসে বেতন পেয়েছি। ঘটনার দিন মোছাঃ আফরোজা খাতুন পড়া ভুল করলে তাকে দুটি মার দেই। এতে সে ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে মার দেয় এবং আমার সাথে তর্কে জড়িয়ে যায়। পরে সে কাঁদতে কাঁদতে বিষয়টি সে তার মাকে গিয়ে বলার পর পরিবাবের লোকজন এসে আমাকে মারধর শুরু করে। আমি পালিয়ে গিয়ে আত্মরক্ষা করি। পরে দুপুরে আমাকে আবার ধরে নিয়ে এসে গাছে বেধে লাঠি দিয়ে মারধর করে।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত মোঃ আবু বক্কর সিদ্দিকের স্ত্রী মোছাঃ রমেনা বেগম জানান, আরবী পড়ার এক পর্যায়ে আমি বাড়ীর বাইরে যাই। এ সময় মিনহাজ আমার মেয়েকে আরবী বই শপথ করিয়ে না বলার শর্তে টিউবল পাড়ে নিয়ে যায়। সেখানে সে শরীরের কাপড় খোলার চেষ্টা এবং ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। মেয়ের চিৎকারে আমরা ছুটে এলে সে পালিয়ে যায়। পরে তাকে আটক করে শাসন করেছি। তাকে পুলিশে না দিয়ে নিজে শাসন করা ভুল হয়েছে বলে তিনি স্বীকার করেন।

মিহাজের বাবা মোঃ ছইদুল ইসলাম বলেন, এ ব্যাপারে আমি বৃহস্পতিবার বীরগঞ্জ থানায় হবিবর রহমানের ছেলে মোঃ আবু বক্কর সিদ্দিক (৪৫) তার স্ত্রী মোছাঃ রমেনা বেগম (৪০) এবং মোঃ রমজান আলীর ছেলে ও আবু বক্কর সিদ্দিকের শ্যালক মোঃ আশরাফুল ইসলামকে (২৫) আসামি করে মামলা দায়ের করেছি। এখন আসামি পরিবারের লোকজন আমার ছেলে এবং আমার পরিবারসহ যারা ভিডিও করেছে তাদের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন মামলা করা হবে বলে হুমকি দিয়ে আসছে। আমি পেশায় কৃষি শ্রমিক। আমার স্ত্রী মারা যাওয়ার পর অনেক কষ্টে জীবন চলে। মা মরা ছেলে নির্মমভাবে গাছে বেঁধে মেরেছে। আমি ছেলে নির্যাতনে অভিযুক্তদের বিচার দাবি করছি।

মামলার তদন্তকারী অফিসার এসআই আলন চন্দ্র রায় জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে নির্যাতনের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ অভিযান চালিয়ে মোঃ আবু বক্কর (৪৫) ও মোঃ আশরাফুল ইসলাম (২৫) নামে দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

বীরগঞ্জ থানার ওসি মোঃ আব্দুল মতিন প্রধান মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, মামলা তদন্ত চলছে। মামলার সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *