বাঘা প্রতিনিধি:
বাঘা উপজেলায় পুলিশের বিশেষ অভিযানের নামে মানুষকে হয়রানি ও আটক বাণিজ্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগিদের অভিযোগ প্রতিনিয়ত থানা পুলিশ মাদক সেবনের অভিযোগে মানুষকে আটকিয়ে বাণিজ্য করে পুলিশ। পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে এমন অভিযোগ সত্য নয়। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে নেতাদের তদবিরে কোন টাকা না নিয়েই ছেড়ে দেওয়ার কথা স্বিকার করেছে পুলিশ।
জানা যায়, ২৮ এপ্রিল ডিবি পুলিশ পরিচযে চাঁদাবাজির সময় হামিদকুড়া গ্রামের আসাদুলের ছেলে বর্ধন (১৪)কে আটক করা হয় । এসআই মানকি তাকে আটক করেন বলে জানা গেছে। পরে অর্থের বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ার কথা শোনা গেলেও তা অস্বিকার করেন মানিক। ২৫ এপ্রিল বাউসা এলাকা থেকে ১ছেলে ও১মেয়েকে আট করেন এসআই মুনজুরুল। বাঘার ইদগাহ মাঠে এনে রাতে ছেড়ে দেন। একই দিন বিকেলে বাঘা পৌর এলকার চকছাতারি গ্রামের সুলতানকে আটক করে পুলিশ। এসআই রেজাউল করিম ১’শ গ্রাম হিরোইন উদ্ধার দেখিয়ে মামলা দায়ের করেন। তবে সুলতানের স্ত্রী রানু ও তার মা বেলেজান বেওয়া জানান সাদা পোষাকধারি ২জন সুলতানকে আটক করে। তাদের দাবি ওই সময় তার কাছে কোন ধরনের মাদক ছিলনা। তবে আগে এই ব্যবসার সাথে জড়িত ছিল বলে স্বিকার করেন তারা।
প্রতিবেশি কহিনুর জানান, বাগান দেখে যাওয়ার সময় তার সাথে কথা বলছিল। এসময় তাকে আটক করা হয়েছে। এর দুইদিন পরে বেল্লালের মোড় এলাকার সাবেদের ছেলে সাদেককে আটক করা হয়। ওই সময় বাড়িতে রাখা টাকাও নিয়ে আসে পুলিশ। সাবেক পৌর মেয়র আক্কাস জানান,আটকের পর আলতাফ কাউন্সিলরের মাধ্যমে কিছু টাকা রেখে ফেরত দিয়েছে। তবে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে আগেও একাধিক মামলা আছে বলে দাবি পুলিশের।
১৯ এপ্রিল লালপুরের মহারাজপুর গ্রামের বাসিন্দা ও কারা পুলিশ সদস্য জহুরুল ইসলাম নামের একজনকে বাঘা পৌর এলাকার মশিদপুর গ্রামের কাজিপাড়া এলাকা থেকে ৫পিচ ইয়াবাসহ আটক করেন এসআই সইবর। জহুরুলের বিস্বস্ত একজন জানান পরে ব্যাপক অর্থ বাণিজ্যের মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে এসআই সইবর জানান তার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা,তাই কোন অর্থ ছাড়াই তাকে ছেড়ে দিয়েছেন। জহুরুল জানান,তিনি নারায়নপুরের রাব্বির বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। এর দুইদিন পরে চন্ডিপুর এলাকায় ঢাকাগামি যাত্রীবাহি বাস থেকে ফেনসিডিল উদ্ধার করে এসআই সইবর। জব্দকরা ওই ফেনসিডিলগুলো থানায় জমা দেওয়া হয়নি।
মাদক সেবনের অভিযোগে উপজেলার জোতনশি এলাকা থেকে বাবুলের ছেলে সহিদ,জামালের ছেলে রুবেল ও শফিকুলের ছেলে নাহিদকে মাদক সেবনের অভিযোগে আটক করে পুলিশ। মঙ্গলবার (৯-৪-১৯) দুপুরে আটকের পর রাতে তাদের অর্থের বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। এসআই সইবুরের বিরুদ্ধে অর্থ বাণিজ্যের এ অভিযোগ পাওয়া যায়। তবে তিনি দাবি করেন আওয়ামীলীগ নেতার তদবিরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে নেতার তদবিরে রুবেল নামের একজনকে ছেড়ে দেওয়া হলেও উনত্রিশ হাজার টাকা গুনতে হয়েছে অপর দুইজনকে। সহিদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করলে টাকা দেওয়া নেওয়ার কথা শিকার করেন তারা। এর কয়েকদিন আগে আলাইপুর হাজামপাড়া এলাকার আজাহারের ছেলে আয়নালকে আটক করা হয়। এএসআই একরামুল তাকে আটক করেন। পরে বিশ হাজার টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। দুই সপ্তাহ আগে একইভাবে তল্লাশি চালানো হয় ওই গ্রামের সুদি আকরামের বাড়িতে। এ সময় আকরামের স্ত্রী ছাড়া অন্য সদস্যরা বাড়িতে ছিলেননা।
বাড়িতে গিয়ে কথা হলে তার ছেলে রায়হান জানান,প্রথমে তার বাড়িতে কিছু পাইনি। পরে এলাকার মোস্তফার ছেলে লিটনকে সাথে নিয়ে আবারো তল্লাশি চালিয়ে ৪ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার দেখিয়ে তার মা (আকরামের স্ত্রী) সাইদাকে আটক করে থানায় নেওয়ার কথা বলে সাদা পোষাকধারি দুইব্যক্তি। পরে ত্রিশ হাজার টাকা দিয়ে আপোশ রফা করা হয়। এর মধ্যে পাশের এক আতœীয়র কাছ থেকে পঁচিশ হাজার টাকা ধারে নিয়ে পুলিশকে ওই টাকা দিয়েছেন। রায়হানের দাবি বাড়িতে ফেনসিডিল ছিলনা । স্থানীয় অনেকেই বলেছেন ত্রিশ হাজার টাকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়ার কথা। রায়হানের দেওয়া তথ্যমতে ওই দুইজনের একজন এসআই মানিক ও অপরজন এএসআই জহুরুল। তবে দুইজনের একজনও ওই বাড়িতে অভিযানের কথা স্বীকার করেননি। অন্য কেউ থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন তারা।
গত ১৬ মার্চ পৌর সভার চকছাতারি গ্রামের চিকু মহাজনের বাড়ি সংলগ্ন এলাকার লিটনের স্ত্রী হালিমাকে আটক করা হয়। পরে শি হাজার টাকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়াও আলাইপুর হাজামপাড়ার আনিসুরের বাড়ি সংলগ্ন হেমাতের ছেলে শফিকুলকে আটক করা হয়। এএসআই রেজাইলের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনিও টাকা নেওয়ার কথা সত্য নয় বলে দাবি করেছেন। ২৪ মার্চ মাজার দিঘির পাড় থেকে রবির ছেলে রাব্বিকে আটক করেন এসআই মানিক ও এএসআই মাসুদ ইকবাল। তার অভিভাবকের কাছ থেকে পনের হাজার টাকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।
অভিযোগ রয়েছে টাকা নিয়েও দায়ভার এড়াতে ৩৪ ধারায় মামলা দেওয়া হয়। অফিসার ইনচার্জ মহসীন আলী বলেন, ছোট খাটো ঘটনা কিছু থেকে থাকলেও আমার জানা নেই। তবে যাদের আটক করা হয় তাদের কেউ মাদক ব্যবসায়ী কেউ সেবনকারি।