স্টাফ রিপোর্টার: টাকার বিনিময়ে ইন্টারনেটে নগ্ন ভিডিও চ্যাটিং করে থাকেন এমন দুই নারীসহ তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। বুধবার দিবাগত রাত ১১টার দিকে রাজশাহীর গোদাগাড়ী পৌরসভার মেডিকেল মোড়ের একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। পুলিশ বলছে, এরা সবাই নগ্ন ভিডিও চক্রের সদস্য।
আটকরা হলেন- নাটোর সদর উপজেলার আলাইপুর এলাকার খলিলুর রহমানের ছেলে মেহেদী হাসান (২৫), চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের হযরত আলীর মেয়ে হাবিবা খাতুন (১৮) এবং একই উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের সুমন হোসেনের মেয়ে সুরভী বেগম (১৮)। তারা সবাই একটি বাড়িতেই থাকতেন।
পুলিশ বলছে, চক্রটি বিভিন্ন অপারেটরের ৩৫টি সিম ইন্টারনেট দুনিয়ায় ছড়িয়ে দিয়েছেন। সেখানে আগ্রহীদের কল করতে যৌন আবেদনময়ী ছবি ও ছোট ভিডিও টিজার পোস্ট করেন। বিকাশে টাকা দিলে তারা ভাইবার, ইমো, ম্যাসেঞ্জারসহ বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময় ভিডিও চ্যাটিং করেন। আর তাদের টার্গেটে থাকত প্রবাসী বাংলাদেশীরা। এছাড়া তারা বিদেশি বিভিন্ন সাইটে যুক্ত হয়েও নগ্ন ভিডিও চ্যাটিং করে আসছিলেন। তাদের বহরে লোক বাড়াতে মোটা অংকের বেতনে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিও ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করছিল এই চক্রটি। বিষয়টি জানতে পেরে অভিযান চালানো হয়।
পুলিশের গোদাগাড়ী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুর রাজ্জাক জানান, তিন মাস আগে মেহেদী হাসান এবং ওই দুই নারী গোদাগাড়ী উপজেলার মেডিকেল মোড় এলাকার মজিবুর রহমান মাস্টার নামে এক ব্যক্তির বাড়ির দুটি কক্ষ ভাড়া নেন। কিন্তু বাড়িতে ওঠার পর তারা বাইরে বের হতেন না। আশেপাশের মানুষের সঙ্গেও মিশতেন না। তবে তারা দুটি কক্ষে ওয়াইফাই নেট কানেকশন নিয়েছিলেন। সন্দেহ হওয়ায় এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা বিষয়টি পুলিশকে অবগত করে। খবর পেয়ে পুলিশ অভিযান চালায়।
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা সেখানে গিয়ে তাদেরকে অশ্লীল ভিডিও চ্যাটিং করা অবস্থায় হাতেনাতে ধরি। তাদের কাছে থাকা দুটি ল্যাপটপ, একটি কম্পিউটার, বিভিন্ন কোম্পানির ৩৫টি সিম কার্ড, ২৫টি ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র জব্দ করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তারা শুধু ভিডিওতে নয়, ইন্টারনেটে নম্বর ছড়িয়ে ফোনে অশ্লীল কথাবার্তা বলেও মানুষের কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে টাকা নিতেন। এছাড়া বিদেশি বিভিন্ন সাইটে তারা ঘণ্টা অনুযায়ী চুক্তিভিত্তিক নগ্নভাবে চ্যাটিং করতেন। মেহেদী হাসান দুই নারীকে দিয়ে এসব কাজ করাতেন। নতুন করে ‘চ্যাটিং জব’ এর জন্য সুন্দরী নারী খুঁজতে তিনি বিজ্ঞপ্তিও দিয়েছেন। এতে দিনে ১০ ঘণ্টা ভিডিও চ্যাটিংয়ের বিনিময়ে ২৩ হাজার ৮০০ টাকা বেতন দেওয়ার লোভনীয় অফার দেওয়া হয়েছে। এর কয়েক কপি ওই বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে তিনজনের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা করা হবে।
এ ব্যাপারে বাড়ির মালিক মজিবুর রহমান বলেন, প্রায় তিন মাস আগে মেহেদী বাসা ভাড়া নিতে আসেন। তখন মেহেদী জানিয়েছিলেন, তিনি, তার স্ত্রী ও স্ত্রীর বোন থাকবেন। আর পেশায় তিনি একজন ফ্রিল্যান্সার। ইন্টারনেটে কাজ করেন। মজিবুর বলেন, আমি বিষয়টি এতোটা বুঝি না। কোনো সন্দেহ না হওয়ায় তাদের ভাড়া দিয়েছিলাম। তারা এমন কুকর্মে জড়িত, তা আমার জানা ছিল না।