করোনা ওয়ার্ডে ঠাঁই নেই, অন্য ওয়ার্ড ফাঁকা

রাজশাহী লীড

স্টাফ রিপোর্টারঃ উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল সব সময় রোগী এবং স্বজনদের সমাগমে পরিপূর্ণ থাকে। কিন্তু এখন চিত্র ভিন্ন। করোনা মহামারিতে পাল্টে গেছে পরিস্থিতি। ভয়ে এ প্রতিষ্ঠানটিতে রোগীরা ভর্তি হতে চাইছেন না। অনেকেই এ হাসপাতালে চিকিৎসা না নিয়ে বেসরকারি হাসপাতাল এবং ক্লিনিকগুলোতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

স্বাভাবিক সময়ে রামেক হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলোর বেডে সাধারণ রোগীদের স্থান সংকুলান হতো না। জায়গা না পেয়ে ওয়ার্ডের মেঝে এবং বারান্দাতে অবস্থান নিতেন রোগীরা। রোগীদের সঙ্গে থাকতেন তাদের স্বজনরা। তাই হাসপাতালে এক ধরনের ঠাসাঠাসি অবস্থা বিরাজ করত। কিন্তু করোনার ভয়ে গত ৩ মাস ধরে রামেক হাসপাতালে জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন ছাড়া রোগী ভর্তি হচ্ছে না।

সংশ্লিষ্টরা জানান, রামেক হাসপাতালে বর্তমানে ৫৬টি ওয়ার্ড রয়েছে। বেডের সংখ্যা ১২শ। চিকিৎসক আছেন ৩০২ জন। নার্সের সংখ্যা ১২শ। প্রতিষ্ঠানটিদে ১২শ বেড থাকলেও সবসময় আড়াই থেকে তিন হাজার রোগী চিকিৎসাধীন থাকেন। কিন্তু বর্তমানে (বৃহস্পতিবার) ভর্তি আছেন মাত্র এক হাজার ১৮৯ জন।

এ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস জানান, হাসপাতালের ৫৬টি ওয়ার্ডের মধ্যে এখন ১৩টিই করোনা ডেটিকেটেড ওয়ার্ড। এছাড়া ১৫টি কেবিন এবং ২০টি আইসিইউ বেডে সংকটাপন্ন করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। করোনা রোগীদের জন্য মোট ডেটিকেটেড বেডের সংখ্যা ৪০৫টি। বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ৪৬২ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। আর জুন ৩৭৪ জন মারা গেছেন।

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে এক হাজার ১৮৯ জন রোগীর মধ্যে ৪৬২ জনই করোনা রোগী। বাকি ৭২৭ জন রোগী বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন। হাসপাতালে এখন খুব কম রোগী ভর্তি আছেন। করোনা রোগী বৃদ্ধি পাওয়ায় রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি হতে ভয় পাচ্ছেন।’

রামেক হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, ওয়ার্ডগুলোতে রোগী এবং স্বজনদের আগের সেই কোলাহল নেই। অনেক বেড ফাঁকা পড়ে আছে। ওয়ার্ডের মেঝে এবং বারান্দাতে অন্য সময়ে রোগী এবং তাদের স্বজনরা থাকলেও এখন সে পরিস্থিতি নেই।

করোনার ভয় ও আতঙ্কে রামেক হাসপাতালে ভর্তি হননি নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলা সদরের বাসিন্দা আকবর আলী (৬২)। ২১ জুন তিনি সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হন। তার বাম পায়ে আঘাত লাগে। এরপর তিনি রাজশাহী মহানগরীর বেসরকারি চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠান রয়েল হাসপাতালে ভর্তি হন।

আকবর আলীর ছেলে রফিকুল ইসলাম বলেন, বাবাকে আমরা রামেক হাসপাতালে ভর্তি করাতে সাহস পাইনি। কারণ হাসপাতালটিতে এখন করোনা রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। এছাড়া করোনা রোগীর স্বজনরা হাসপাতালে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। বাবার বয়স হয়েছে। তিনি সেখানে ভর্তি হলে করোনা সংক্রমণের ভয় ছিল। পাশাপাশি আমাদেরও সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে। তাই খরচ বেশি হলেও আমরা বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছি।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বসন্তপুর এলাকার আবদুল হালিম। স্ত্রীর প্রসব বেদনা শুরু হলে তাকে ২৯ জুন রাজশাহী মহানগরীর মাইক্রোপ্যাথ ক্লিনিকে ভর্তি করান। আবদুল হালিম বলেন, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এখন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন ১৫-২০ জন করে করোনা রোগী মারা যাচ্ছেন। বর্তমানে অনেক করোনা রোগী হাসাপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কায় আমার স্ত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করাইনি।

জানতে চাইলে রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানি জানান, খুব জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন ছাড়া এবং সংকটাপন্ন না হলে হাসপাতালে রোগীরা ভর্তি হচ্ছেন না। ১ হাজার ২০০ বেডের রামেক হাসপাতালে স্বাভাবিক সময়ে আড়াই থেকে তিন হাজার রোগী চিকিৎসাধীন থাকেন। কিন্তু এখন তিন ভাগের এক ভাগ রোগী ভর্তি আছেন। ভর্তি না হওয়ার অন্যতম কারণ করোনা আতঙ্ক। তাই সিংহভাগ রোগী বাইরের বেসরকারি হাসপাতাল এবং ক্লিনিকগুলোতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে হাসপাতালে আগের মতো রোগীর সমাগম হবে বলে আশা করছি।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *