ঈদে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের স্মরণকালের ভয়াবহ সিডিউল বিপর্যয়

রাজশাহী লীড

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: ঈদ যাত্রার মতো ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফিরতেও ট্রেন যাত্রীদের ভোগান্তির শেষ নেই। রাতের ট্রেনে ঢাকায় ফিরে যারা সকালে অফিস বা ক্লাস ধরার পরিকল্পনা করেছিলেন তাদের হাজিরা খাতায় পড়ছে লাল দাগ। এছাড়া ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্টেশনে বসে মশার কামড় খাওয়া, বাচ্চা-বুড়োদের নির্ঘুম রাত যাপন, টিকেট কেটেও ভিড় ঠেলে ট্রেনে উঠতে না পারার মতো ভোগান্তি তো আছেই। এ অবস্থায় জানালা দিয়ে কোনোমতে ট্রেনের ভিতরে ঢোকার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন কেউ কেউ। আর চরম ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও জীবন বাজি রেখে ট্রেনের ছাদে চড়ে রাজধানীতে যাচ্ছেন অনেকে।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের স্মরণকালের ভয়াবহ সিডিউল বিপর্যয়ের পর এই হলো বর্তমান চিত্র। ঈদের আগে থেকে রেলপথে এই অচলাবস্থা চলছে। যার ধকল ঈদের পরও কাটেনি বরং বেড়েছে। ভয়াবহ শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে সকাল ৭টার সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনটি আজ ছেড়েছে দুপুর ১টা ৩৫ মিনিটে, গতকাল শনিবার (১৭ আগস্ট) রাতের ধুমকেতু ছেড়েছে রোববার (১৮ আগস্ট) সকাল সাড়ে ৭টায়। এর আগে গতকাল শনিবার বিকেল ৪টা ২০ মিনিটের আন্তঃনগর ট্রেন পদ্মা এক্সপ্রেস ছেড়েছে গতকাল রাত ১০টায়। রাজশাহী থেকে ঢাকামুখী ট্রেনগুলোর সিডিউলের এই অবস্থা।  প্রতিটি ট্রেনই প্রায় ৬ থেকে ১০ ঘণ্টা বিলম্বে চলছে!

রোববার সকালে সরেজমিন রাজশাহী স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, রাতের ধুমকেতু ট্রেনটি সকালে প্লাটফর্মে আসলে ট্রেনে কয়েকশ যাত্রী হুড়মুড়িয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন। ছোট-বড় ব্যাগ-বস্তা মালামাল নিয়ে নির্ঘুম যাত্রীদের চোখেমুখে রাজ্যের ক্লান্তির ছাপ ছিল। সারা রাত মশার কামড় ও গরমে নির্ঘুম রাত কেটেছে অনেকের।

ঈদের ছুটি শেষে রাজধানীতে যাচ্ছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মেঘলা রহমান। তিনি বলেন, শনিবার রাত ১১টা ২০ মিনিটে ধুমকেতু এক্সপ্রেসের ছাড়ার কথা ছিলো। কিন্তু ট্রেনটি পরদিন সকাল ৭টায় রাজশাহীতে এসে পৌঁছায়। দীর্ঘ আট ঘণ্টা স্টেশনে ভারি ব্যাগ নিয়ে রেলওয়ে স্টেশনের প্লাটফর্মেই অপেক্ষা করতে হয়।

পদ্মা এক্সপ্রেসে রওয়ানা দেওয়া এক যাত্রী জানান, পদ্মা এক্সপ্রেস ট্রেনটি রাজশাহী থেকে শনিবার বিকাল ৪টা ২০ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলেও সেটি ছাড়ে রাত ১০টায়। প্রতিটি স্টেশনে ট্রেনটি অতিরিক্ত সময় বিলম্ব করতে থাকে। অবশেষে ট্রেনটি রাজধানী কমলাপুরে পৌঁছায় ভোরে। তার পৌঁছানোর কথা ছিলো গতকাল রাত ১০টায়।

যাত্রীদের অভিযোগ, প্রতিটি বগিতে ৬০-৬২ জন যাত্রীর সিট থাকলেও বগিতে অন্তত দেড় থেকে ২ শতাধিক যাত্রী উঠে পড়ছে। যাদের অধিকাংশেরই টিকেট ছিল না। এ ভিড়ের সুযোগে পকেটমার-মলমপার্টিও তৎপর ছিল। অনেকের মানিব্যাগসহ মূল্যবান জিনিসপত্র হারিয়ে গেছে বলেও অভিযোগ করেন যাত্রীরা। এ সময় কোনো রেল পুলিশ বা চেকারের সহায়তা চেয়েও পাওয়া যায়নি। আবার কোনো কোনো রেল পুলিশ, আনসার বা চেকারকে টিকেটবিহীন যাত্রীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করতে দেখা যায় বলে অভিযোগ করেন অনেক যাত্রী। ট্রেনের ভেতরে দাঁড়াতে না পেরে ছাদে চড়েও অনেক যাত্রীকে কর্মস্থলে ফিরতে দেখা যায় রাজধানীতে।

রাজশাহী থেকে ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ের কারণ জানতে চাইলে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের চিফ কমার্সিয়াল ম্যানেজার এএএম শাহ নেওয়াজ জানান, ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে ছাড়তে হচ্ছে প্রতিটি ট্রেন। ট্রেনের ভেতর যাত্রী উপচে পড়ছে। ছাদও ফাঁকা নেই। তাই গতির চেয়ে এখন যাত্রীদের নিরাপত্তার কথাই আগে ভাবতে হচ্ছে। দুর্ঘটনা এড়াতে ট্রেনের গতি কমিয়ে আনা হয়েছে। তাই নির্ধারিত সময়ে ট্রেন গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছে না  আর নির্ধারিত সময়ে আসতেও পারছে না। তাই ভয়াবহ সিডিউল বিপর্যয় ঘটিছে।

তিনি নলেন, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের সিঙ্গেল লাইন যতদিন ডাবল না হবে ততদিন ট্রেনের শিডিউল ঠিক রাখা কঠিন। কেননা, একই লাইনে একাধিক ট্রেন চলাচল করে। তাছাড়া বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে একটি ট্রেন ধীরগতিতে চলে যাওয়ার পর অন্যটি সিগন্যাল পায়। এছাড়া রাজধানীতে ফেরার পথে যাত্রীদের অতিরিক্ত চাপে কোথাও কোথাও একেবারেই গতি কমিয়ে ট্রেন চালাতে হচ্ছে। সে কারণে ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় কাটছে না।

 

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *