সড়কে কাজের মান ও গতি দুটোই ঠিক রাখতে হবে: সেতুমন্ত্রী

জাতীয় লীড

স্বদেশবাণী ডেস্ক: আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সড়কে কাজের মান ও গতি দুটোই ঠিক রাখতে হবে। এখানে শৃঙ্খলা আনা আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ। এখন সংকট শৃঙ্খলা, পরিবহন ও সড়কের। এখানে ব্যর্থ হলে আমাদের উন্নয়ন ম্লান হয়ে যাবে।

শুক্রবার (২২ অক্টোবর) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে সড়ক ভবনে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবসের আলোচনায় মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশ্যে তিনি একথা বলেন। জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস উপলক্ষ্যে এবারের প্রতিপাদ্য ‘গতিসীমা মেনে চলি, সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করি’।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর বক্তব্যের আগে হাইওয়ে পুলিশের আইজিপি মল্লিক ফখরুল ইসলাম গত ৯ মাসের জরিমানার পরিসংখ্যান তুলে ধরেন।

এ প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কতটাকা জরিমানা তুলেছেন, এটার হিসেব দিয়ে কোনো লাভ নেই। এটা কোনো বিষয় নয়। আমার কাছে বিষয় সড়ক নিরাপদ আছে কী না। গাড়িগুলো নিয়ম অনুযায়ী চলছে কী না, গাড়ির ফিটনেস আছে কী না, চালকের ফিটনেস, গাড়ির চালক গাড়ি চালাবার যোগ্য কী না, গাড়ি ওভারলোডেড কী না, গাড়ি বেশি গতিতে চলছে কী না, এগুলো আমার কাছে বিবেচনার বিষয়। আমি এটাই দেখবো। আমার কাছে বিষয় দুর্ঘটনা কমেছে কী না।’

দুর্ঘটনা দুর্ভাবনার কারণ হয়ে আছে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঘটছে। পাখির মত মানুষ মরে, মাছির মত মানুষ মরে। এ মর্মান্তিক দৃশ্যপট মানুষ হিসেবে সইতে পারি না। অনেক কষ্ট হয়। সুন্দর সুন্দর ব্যানার পোস্টার করলেই আমাদের দায়িত্ব শেষ হয় না। নিরাপদ সড়ক দিবস করতে হবে প্রতিদিন।”

প্রতিদিন সড়কে মৃত্যু নিজেকে কষ্ট দেয় উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিদিন সকালটা আমার কাছে আসে ভিন্নভাবে, সবার দিন শুরু হয় একভাবে, আর আমার দিনটি শুরু হয় অন্যভাবে। কাগজের পাতায় অপ্রত্যাশিত মর্মান্তিক দুর্ঘটনা খবর পড়ে আমার দিন শুরু হয়। মন্ত্রী হলেও আমি তো মানুষ। আমারও কষ্ট হয়। আমিও দগ্ধ হই অদেখা দহনে। মনে হয় আমিও সেই অসহায় পরিবারের একজন। যে পরিবারের কয়েকজনও একসঙ্গে পথের বলি হয়। কখনো দুই পরিবহনের সংঘর্ষে। কখনো তিন চাকার গাড়ী ইজিবাইকে, নসিমন, করিমনে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘অবকাঠামোগতভাবে পরিবর্তন দৃশ্যমান। আগামী বছর সড়কে বৈপ্লবিক পরিবর্তন পুরোপুরি দৃশ্যমান হবে। পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ শেষ পর্য়ায়ে, মেগা প্রকল্পগুলো আগামী বছর উদ্বোধন হবে। সেগুলো হলো পদ্মা সেতু, এমআরটি লাইন-৬, মেট্রোরেল, বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ও চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু কর্ণফুলী টানেল।’

আগামীতে চট্টগ্রামের মিরসরাই থেকে আরেকটি মেরিনড্রাইভ উদ্বোধন করা হবে বলেও এ সময় জানান তিনি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আগামী ২৪ অক্টোবর পায়সা সেতুর উদ্বোধন হবে। আর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা ঢাকা-সিলেট ও সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের ভিত্তি প্রস্তর উদেদ্বাধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তাঁর মন্ত্রণালয়ে রাজনৈতিক তদবীর বন্ধ করেছেন উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘আমার মন্ত্রণালয়ে রাজনৈতিক তদবীর বন্ধ করে দিয়েছি। ইঞ্জিনিয়ার ট্রান্সফার, বিআরটিএ’র অফিসার ট্রান্সফার, এসব তদবীর শুরুতে আমার জন্য ছিল চ্যালেঞ্জিং। কিন্তু আমি কঠোর হয়েছি, প্রধানমন্ত্রী আমাকে সাপোর্ট দিয়েছেন, সচিবরা আমার সঙ্গে ছিল, যে কারণে আমি এসব প্র্যাকটিস বন্ধ করতে পেরেছি। মন্ত্রীকে কিছু দিয়ে চীফ ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার একটা প্র্যাকটিস মন্ত্রণালয়ে আগে ছিল। কিন্তু আমি আসার পর তা বন্ধ করেছি। সেই প্র্যাকটিস এখন আর নেই। আমাকে টাকা দিয়ে যদি চীফ ইঞ্জিনিয়ার হতে হয়, ওই টাকা সে উঠাবে যখন দায়িত্ব পাবে। এটাই তো স্বাভাবিক।’

এ সময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ইঞ্জিয়ারদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “অনেক ইঞ্জিনিয়ার ভাল কাজ করেন। কিন্তু কেউ কেউ যে কাজ করেন, এক পশলা বৃষ্টি হলেই সেই রাস্তা ভেসে যায়। এরকম রাস্তা করার কোনো দরকার নেই। কাজের মান ঠিক রাখুন। যারা ভাল কাজ করেন আমি তাদের প্রশংসা করবো।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের ইলিয়াস কাঞ্চন, সড়ক ও জনপদ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুস সবুর, হাইওয়ে পুলিশের আইজিপি মল্লিক ফখরুল ইসলাম।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *