ডিসির সাথে অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িত ওই নারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে

জাতীয়

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: বৃহস্পতিবার রাত থেকে ভাইরাল হতে থাকে জামালপুরের ডিসি আহমেদ কবীর ও নারী সহকর্মী সানজিদা ইয়াসমিন সাধনার একটি আপত্তিকর ভিডিও। অনৈতিক কাজ করায় ডিসি আহমেদ কবীরকে ইতিমধ্যে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে।

ডিসিকে প্রত্যাহার করা হলেও নারী সহকর্মী সানজিদা ইয়াসমিন সাধনার বিষয়ে এখনো কোন পদক্ষেপ নেয়নি প্রশাসন। ভিডিও ভাইরালের পর শুক্র ও শনি সাপ্তাহিক ছুটি শেষে রবিবার অফিস খুললেও ওই দিন অফিস করেননি সানজিদা ইয়াসমিন সাধনা।

ওই ভিডিও ভাইরাল হওয়ার জেরে তিনি অফিসে অনুপুস্থিত রয়েছেন বলে জানাগেছে।

এদিকে তদন্ত করে আহমেদ কবীর ও নারী সহকর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। রোববার দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, জামারপুরের ডিসি অনৈতিক কাজ করেছে। প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। অধিকতর তদন্তের ভিত্তিতে পরবর্তীতে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

‘পাশাপাশি যে নারীর নাম এসেছে তাকেও তদন্তের আওতায় আনা হবে। এক্ষেত্রে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে তদন্ত কমিটি করে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, জেলায় একজন ডিসি অনুকরণীয় ব্যক্তি। তার কাছ থেকে এরকম অনৈতিক কর্মকাণ্ড কাম্য না। তার বিরুদ্ধে তদন্তের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ফরহাদ হোসেন বলেন, আহমেদ কবীরকে এর আগে শুদ্ধাচার পদক দেয়া হয়েছিল। সেটা ফিরিয়ে নেব। আগামীতে ডিসি নিয়োগের ক্ষেত্রে নৈতিকতা বিবেচনা করে নিয়োগ দেয়া হবে বলে জানান তিনি।

এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফাঁস হয়ে যাওয়া এক ভিডিওতে আহমেদ কবীরকে তার অফিস সহায়ক এক নারীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সময় কাটাতে দেখা যায়।

ইতিমধ্যেই আহমেদ কবীরের ‘অন্তরঙ্গ মুহূর্তের’ একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর তোলপাড় শুরু হয়েছে। ভিডিওটি প্রকাশের পর তা তদন্ত করছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

ওই ভিডিওটি সম্পর্কে শনিবার বিকেলে জানতে চাইলে ডিসি আহমেদ কবীর বলেন, তিনি ভিডিওটি দেখেছেন। একটি পক্ষ তার থেকে টাকা চেয়েছিল। তারাই ওই ভিডিও ছড়াতে পারে।

এদিকে জেলা প্রশাসক আহমেদ কবিরের নিজ কার্যালয়ে এক নারীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি এখন আন্তর্জাতিক একাধিক পর্ন সাইটে চলে গেছে।

ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি মিনিট পাঁচেকের হলেও পর্ন সাইটে পুরো ২৪ মিনিট ৫৮ সেকেন্ডের ভিডিও আপ হয়েছে। অর্থাৎ ফেসবুক বা ম্যাসেঞ্জারে কাটছাট করে ৪ মিনিট ৫১ সেকেন্ড ছাড়া হয়েছিল ভিডিওটির।

পুরো ভিডিওটিতে দেখা যায় আহমেদ কবির এক পর্যায়ে বিছানায় গিয়ে নিজের শরীরের সকল কাপড় খুলে ওই নারীর সাথে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়।

এ ঘটনায় রাজনৈতিক ও প্রশাসনিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের মাঝে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। ডিসি অস্বীকার করলেও ঘটনাটি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছে জামালপুরের সব স্তরের মানুষ।

এ নিয়ে তোলপাড় হয়েছে সচিবালয়েও। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব শফিউল আলম জানিয়েছেন, তারা বিষয়টি জেনেছেন। সচিব বলেন, ‘বিষয়টি আমরা দেখছি। দু-এক দিনের মধ্যে এটি সমাধান হবে।’

রবিবার খুললে বিষয়টি তদন্তের জন্য কমিটি গঠন করবে মাঠ প্রশাসনের দেখভালের দায়িত্ব থাকা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এদিকে জামালপুরের জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীর তার ওই বিশ্রাম কক্ষে নারী নিয়ে প্রবেশ করার সময় লাল বাতি জ্বালিয়ে রাখতেন।

বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখতেন একজন পিয়ন; যার কাজ ছিলো ওই সময় রুমে যাতে কেউ ঢুকতে না পারেন তা পাহারা দেয়া। আর রুমের বাইরে সবুজ বাতি জ্বালিয়ে দিয়ে তবেই রুমে কাউকে ঢুকতে দিতেন আদেশপ্রাপ্ত পিয়ন।

এমন তথ্য দিয়েছেন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের একাধিক কর্মী। বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) রাতে খন্দকার সোহেল আহমেদ নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে জেলা প্রশাসকের আপত্তিকর ভিডিওটি পোস্ট কর হয়।

তবে শুক্রবার সকাল থেকে ওই আইডিতে ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়নি। কিন্তু তার আগেই ফেসবুক এবং মেসেঞ্জারের বিভিন্ন গ্রুপে তা ছড়িয়ে পড়ে।

এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমগুলোতে খবর প্রকাশ হওয়ার পর ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। বিভিন্ন মিডিয়ার খবরে বলা হচ্ছিল, ভিডিওটি অফিসের ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় (সিসি) ধারণ করা।

প্রশ্ন ওঠে তবে কি ওই রুমে সিসি ক্যামেরার কথা জানতেন না ডিসি? এ বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে জানা গেলো ভিন্ন কথা। আসলে ওই রুমে কোনো সিসি ক্যামেরা ছিলোই না।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, অফিস কক্ষের পাশের ওই রুমটিতে আগে বিশেষ মিটিং করতেন ডিসি।

পরে টেবিল চেয়ার সরিয়ে সেখানে খাট বসানো হয়। বলা হয়, রুমে তিনি বিশ্রাম নিবেন। ডিসির রুমে যাওয়ার জন্য দুইটি রাস্তা ছিল। যার একটি বন্ধ করে দেয়া হয়।

অপর গেটটির উপরে আছে লাল এবং সবুজ বাতি। নারী নিয়ে ওই বিশ্রাম কক্ষে প্রবেশের সময় তিনি লাল বাতি জ্বালিয়ে দিতেন। পিয়নকে আগেই বলা থাকতো, সবুজ বাতি না জ্বলা পর্যন্ত কাউকে যেন ভেতরে ঢুকতে দেয়া না হয়।

এদিকে, ওই নারীর সঙ্গে ডিসির সম্পর্ক এতটাই ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠে যে, ‘অফিস সহায়ক’ হলেও তিনি খবরদারি চালাতো সবার সঙ্গে। তার ব্যবহারে অতিষ্ঠ হয়ে অফিসের কর্মীদের মধ্যে কেউ ওই রুমে গোপন ক্যামেরা সেট করেন।

আর তাতেই ধরা পড়ে বিশ্রাম রুমে ডিসির আপত্তিকর ভিডিও। ৪ মিনিট ৫৮ সেকেন্ডের ওই ভিডিওটিতে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ও ৩ আগস্ট জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীরকে তার কার্যালয়ের এক নারী কর্মীর সঙ্গে অফিস কক্ষের পাশের রুমে আপত্তিকর অবস্থায় দেখা যায়।

শুক্রবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীর সার্কিট হাউজে সাংবাদিকদেরকে বলেন, তিনি মানসিকভাবে খুবই বিপর্যস্ত অবস্থায় আছেন।

সাংবাদিকদের কাছে একটু সময় চান। প্রকৃত ঘটনা জানতে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে এসময় তিনি ঘটনাটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার আহবানও জানান।

ভিডিওটির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি একটি সাজানো ভিডিও। একটি হ্যাকার গ্রুপ দীর্ঘদিন ধরে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করলেও আমি বিষয়টি গুরুত্ব দেইনি। বানোয়াট ভিডিওটি একটি ফেক আইডি থেকে পোস্ট দেওয়া হয়।’

তবে ভিডিওটিতে দেখানো কক্ষটি তার অফিসের বিশ্রাম নেওয়ার কক্ষ এবং ভিডিওর ওই নারী তার কার্যালয়ের ‘অফিস সহায়ক’ হিসেবে কর্মরত বলে তিনি নিশ্চিত করেন।

এসময় জেলা প্রশাসক সাংবাদিকদের এ বিষয়ে সংবাদ পরিবেশন না করার জন্যও অনুরোধ করেন। এসময় জেলা প্রশাসনের লোকজন জোর করে উপস্থিত সাংবাদিকদের অনেকের ফোন থেকে আলোচিত ভিডিওটিও মুছে ফেলেন বলে অভিযোগ করেন সাংবাদিকরা।

জামালপুরের নারী নেত্রী এডভোকেট শামীম আরা বলেন, জেলার সরকারি শীর্ষ একজন কর্মকর্তার কাছে নানা সমস্যা নিয়ে নারীরা তার কার্যালয়ে যান। নিরাপত্তাও চান তার কাছে। কিন্তু রক্ষক যদি ভক্ষকের ভূমিকা পালন করেন তাহলে নারীরা কোথায় নিরাপদ। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান!

মানবাধিকার কর্মী জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত লজ্জাজনক। এ ঘটনায় জামালপুরের নারীরা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। তিনি তদন্ত সাপেক্ষে জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।

ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান এনডিসি সাংবাদিকদের বলেন, জামালপুরের জেলা প্রশাসকের একটি ভিডিও ভাইরালের খবর তিনি শুনেছেন। যদি ঘটনা সঠিক হয়, তবে সেটা ন্যাক্কারজনক। উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ঘটনাটি জানানো হয়েছে।সূত্র: কুমিল্লার বার্তা।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *