রাজশাহীতে ওয়েল ফেয়ার সোসাইটির ফের প্রতারণার জাল

রাজশাহী লীড
তানোর প্রতিনিধি: রাজশাহী অঞ্চলে পল্লী চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের নামে একটি সংঘবদ্ধ  প্রতারক চক্র লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। কথিত ‘ওয়েল ফেয়ার সোসাইটি’ বেকার যুবকদের পল্লী চিকিৎসকের প্রশিক্ষণের নামে ফের প্রতারণার ফাঁদ পেতে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। স্থানীয়রা এই চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করেছেন। জানা গেছে, মাত্র সাড়ে ৭ হাজার টাকায় জেলা সিভিল সার্জন, সংশ্লিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তার (টিএইচও) অধীনে মাত্র ২১ দিন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দেয়া হচ্ছে পল্লী চিকিৎসকের সনদ। গ্রামের সাধারণ ও স্বল্প শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতীদের প্রলোভন দিয়ে এই সনদ বাণিজ্য করে চক্রটি লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। সরেজমিন দেখা গেছে, তানোর উপজেলা সদর ও বিভিন্ন এলাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে রীতিমত পোস্টারিং ও মাইকিংয়ের মাধ্যমে মাসব্যাপী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে গ্রাম্য চিকিৎসকের সনদ দেয়া হবে বলে প্রচার চলছে। ভর্তি ও প্রশিক্ষণের স্থান মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স,যোগাযোগের ঠিকানা নাজমুল চিকিৎসালয়,মোহনপুর উপজেলা হাসপাতাল গেট, ভর্তির শেষ তারিখ ১৫ ডিসেম্বর এবং প্রশিক্ষণের ক্লাশ শুরু ১৭ ডিসেম্বর বলা হয়েছে, তবে এখানো ভর্তি নেয়া হচ্ছে। সূত্র জানায়, এক মাস, ছয় মাস ও এক বছর মেয়াদে বিভিন্ন কোর্সে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে বলে বলা হয়েছে। আর প্রশিক্ষণের বিষয়গুলো হচ্ছে এনাটমি, ফিজিওলজি, ফার্মাকোলজী, গাইনি ও চক্ষুরোগের প্রাথমিক চিকিৎসা, দন্ত রোগের প্রাথমিক চিকিৎসা, মেডিশিন ও প্যাথলজী ক্লাশসহ বিভিন্ন রোগের প্রাথমিক চিকিৎসা এবং প্যাট্রিক্যাল ক্লাস নেয়া হবে। আরএমপি ‘গ্রাম ডাক্তার’ কোর্সের মেয়াদ ৬ মাস, যোগ্যতা এসএসসি বা দাখিল পাশ। শর্ট ডিপ্লোমা-ইন-মেডিসিন কোর্সের মেয়াদ এক বছর, যোগ্যতা এসএসসি বা দাখিল পাশ এ ছাড়াও এক মাসের বিশেষ কোর্স রয়েছে।
মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, ইতিমধ্যে চক্রটি উপজেলায় প্রশিক্ষণ আয়োজনের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তিনি বলেন, বিষয়টি জানাজানি হবার পরে কিছুদিন আড়ালে থেকে আবারো তারা রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলায় এই প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছেন। তিনি বলেন,যদি মাত্র ২১ দিনের প্রশিক্ষণে মানবদেহের চিকিৎসা করা সম্ভব হয়, তাহলে লাখ লাখ টাকা খরচ করে মেডিক্যাল কলেজ থেকে ডিগ্রী নেয়ার কি দরকার ? তিনি বলেন, চিকিৎসকের প্রলোভন দিয়ে বেকারদের প্রশিক্ষণের নামে প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার কৌশল মাত্র। কারণ এক  মাসের প্রশিক্ষণে দেশে যতো ওষুধ কোম্পানী রয়েছে সেসব কোম্পানীর ওষুধ সম্পর্কে সঠিক ধারণাই নিতে পারবে না এক জন মানুষ, চিকিৎসা দেয়া তো পরের কথা।
খোঁজ নিয়ে গেছে, রাজশাহী জেলা সিভিল সার্জন, সংশ্লিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তার সার্বিক তত্ত্বাবধানেএবং রুলার মেডিক্যাল প্রশিক্ষণ ‘আরএমপি’ এই প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছে। সংশ্লিষ্ট উপজেলা সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রের হলরুমে রবিবার ও সাপ্তাহিক সরকারি ছুুটি বাদে ওই এক মাসে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে মাত্র ২১ দিন এর বিনিময়ে প্রতিটি প্রশিক্ষণার্থীর কাছে থেকে নেয়া হবে ৭ হাজার পাঁচশ’ টাকা করে। স্থানীয় আব্দুল মালেক বলেন, প্রতিদিন এক ঘন্টা করে মাত্র ২১ দিন প্রশিক্ষণ নিয়ে তারা চিকিৎসা দেবে। এটা শুধুমাত্র প্রতারণা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার কৌশল মাত্র। এর আগেও এই চক্রটি তানোর উপজেলায় কয়েকবার প্রশিক্ষণের কথা বলে গ্রামের সহজ-সরল ও স্বল্প শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতিদের প্রলোভন দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আর এই প্রশিক্ষণ নিয়ে ডাক্তার সেজে বিভিন্ন গ্রামের হাট-বাজারে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে না বুঝে না জেনে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেয়ায় গ্রামের সাধারণ মানুষ ব্যাপক স্বাস্থ্য ঝুকিতে পড়ছে। পরিচয় গোপণ রেখে এই প্রতিবেদক প্রশিক্ষণের সঙ্গে সম্পৃক্ত ও সমন্বয়কারি নাজমুল চিকিৎসালয়ের স্বত্ত্বাধিকারী গ্রাম ডাক্তার ইব্রাহিম হোসাইনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ইতিমধ্যে প্রশিক্ষণার্থী ভর্তি সম্পন্ন ও ১৭ ডিসেম্বর থেকে প্রশিক্ষণের ক্লাশ শুরু হয়েছে। তবে বিশেষ ব্যবস্থায় প্রশিক্ষণ চলাকালীন যেকোনো সময়ে ভর্তি হওয়া যায়। তিনি বলেন,আমরা তাদের কাছে থেকে ৭ হাজার পাচশ’ টাকা করে নিচ্ছি। বিনিময়ে হাতে-কলমে তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।
প্রশিক্ষণ শেষে তারা যাতে মানুষের চিকিৎসা করতে পারে তার জন্য পৃথক দুটি সনদপত্র দেয়া হবে। এ বিষয়ে রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচও) বলেন, রাজশাহী জেলা সিভিল সার্জন তাদের এই প্রশিক্ষণের অনুমতি দিয়েছেন।
Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *