তানোরে পরকিয়ার মিথ্যা অপবাদে আত্মহত্যার ঘটনায় দেড় বিঘা জমি দিয়ে রফাদফা 

রাজশাহী
তানোর প্রতিনিধি: রাজশাহীর তানোরে পরকিয়ার অপবাদ সইতে না পেরে বিষপানে আত্মহত্যার ঘটনায় দেড় বিঘা জমি দেয়ার নামে রফাদফা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
 জানা গেছে, গৃহবধুর মরদেহ হাসপাতালে রেখেই ক্ষমতাসীন দলের ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা ইউপি সদস্যসহ  অনেকেই হাসপাতালে লাশ রেখে চলে রফাদফা। মিমাংসায় নিহত শাকিলার জীবনের মূল্য হিসেবে তার ছেলের নামে দেয়া হবে দেড় বিঘা জমি। আবার সেই দেড় বিঘা জমি রেজিস্ট্রির জন্য ইউপি সদস্য ও ওয়ার্ড নেতারা ৩০০ শত টাকার স্ট্যাম্পে লিখাপাড়া করেছেন বলে জানান বিচারক ইউপি সদস্য শরিফুল ইসলাম রাজা ও শিমুল,আলমগীর।
সম্প্রীতি,চলতি মাসের (৩০ জানুয়ারি) রোববার দিবাগত রাত ৮টার দিকে উপজেলার কামারগাঁ ইউপির দমদমা গ্রামে ঘটে এ বিষপানের ঘটনা।বিষপানের পর পরিবারের লোকজন জানতে পেরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এলে অবস্থা বেগতিক দেখে রামেক হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত্রি প্রায় ১২ টার দিকে মারা যান নিহত গৃহবধূ শাকিলা বেগম। নিহত শাকিলা বেগমের একটা চার বছরের সন্তান রয়েছে।
এদিকে সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান জামায়াত নেতা আব্দুর রহিমের নেতৃত্বে ইউপি সদস্য শরিফুল  ইসলাম রাজা ও নামধারী নেতা শিমুলসহ বেশকিছু নামধারী নেতারা লাশ হাসপাতালে রেখে রফাদফা শুরু করেন।অবশেষে শাকিলার জীবনের মুল্য নির্ধারন করেন দেড় বিঘা জমি। শিমুল জানান, বাড়ির পার্শের বাশঝাড়ে বিষপান করেন গৃহবধূ শাকিলা। তিনি যারতার সাথে ঝগড়া বিবাদে জড়িয়ে পড়ত। কিন্তু পরকিয়ার কথা কেউ কোনদিন শোনেনি। রাজা জানান, বেশ কয়েকদিন ধরে নিহত গৃহবধূ শাকিলাকে একই বাড়িতে থাকা তার স্বামীর চাচাতো ভাই বুলবুলের সাথে পরকিয়া আছে এমন কথা গ্রামের মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেয় বুলবুল। এই অপবাদ সহ্য করতে পারেন নি গৃহবধু শাকিলা। শাকিলার বিষপানের খবর জানতে পেরে গা ঢাকা দেন বুলবুল ও তার পরিবারের সদস্যরা।
ইউপি  সদস্য  আরো জানান, গ্রামের মোড়ল আমি ও শিমুলসহ অনেকেই চিন্তা করে দেখেছি গৃহবধূ মারা গেল কিন্তু তার চার বছরের সন্তানের কি হবে। এজন্য  বুলবুলের পরিবার অপরাধী তারা নিজেরাই  দেড় বিঘা জমি রেজিস্ট্রি করে দিবেন এমন শর্তে ৩০০ শত টাকার স্ট্যাম্পে লিখাপড়া করা হয়েছে এবং সেই কপি আমার কাছেই রয়েছে। আপনি এসব ঘটনার বিচার করতে পারেন কিনা  এবং নাবালক ছেলেকে কিভাবে জমি রেজিস্ট্রি করে দিবেন জানতে চাইলে ওই একই কথা আমরা সামাজিক ভাবে কাজ করেছি।
ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম জানান, আমি বিচারে ছিলাম না। আ”লীগের নেতা শিমুল,ইউপি সদস্য রাজাসহ অনেকেই বিচার করেছেন।
সুত্রে জানা গেছে, নাবালকের নামে জমি রেজিস্ট্রি করতে হলে পিতা কে পক্ষে থকতে হবে । তাও খুব কার্যকর হয়না বলেও অনেকে জানান।
গ্রামের একাধিক ব্যক্তিরা জানান, আসলে কিছু ক্ষমতাসীন দলের নেতা বা শিমুল  যে কোন বিষয় রফাদফা করে দিতে পারেন। ন্যায় অন্যায় দেখার সময় নেই। নিজেদের পকেট ভরলেই হল। অকারনে একটা জীবন চলে গেল আর জমি দিয়ে মিমাংসা করছে এটা কেমন সালিশ বুঝিনা। মানে এসব কাজকে উৎসাহিত করা।
 নাবালকের জমি রেজিস্ট্রি কিভাবে হবে। মেয়ের পিতা মাতাকে বুঝ দিয়ে অপরাধীদের আড়াল করতে পারলেই নারায়ন।তাছাড়া এরা এসব বিচার করার কে। দেশে আইন আদালত থানা পুলিশ সবই আছে, কিন্তু কিন্তু।
জানা গেছে, উপজেলার কামারগাঁ ইউপির দমদমা গ্রামের রফিক মন্ডলের পুত্র মাসুদ রানা একই এলাকার আব্দুলাহ পুর মহাদেব পুর গ্রামে পচন আলীর মেয়ের সাথে  বিয়ে হয় শাকিলার। তাদের সংসারে সাড়ে চার বছরের পুত্র সন্তান রয়েছে। এঅবস্হায় একই বাড়িতে বসবাস করেন মাসুদের চাচা শাহাবুল ও তার পরিবার।শাহাবুলের পুত্র বুলবুলের সাথে মাসুদ রানার স্ত্রী শাকিলাকে মাঝেমধ্যে পরকিয়ার মিথ্যা অপবাদ দেন বুলবুলের পিতা মাতারা। এই অপবাদ সহ্য করতে না পেরে রোববার রাত ৮টার দিকে গৃহবধূ এক সন্তানের জননী বাড়ির পার্শ্ববর্তী বাশঝাড়ে গিয়ে ক্ষোভে অভিমানে বিষপান করেন। বিষপানের পর গৃহবধূ চটপট ও বমন করতেই থাকেন।এসময় পরিবারের লোকজন দ্রুত  উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে কর্তব্য রত চিকিৎসক রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। সেখানে চিকিৎসা ধীন অবস্থায় রাত্রি প্রায় সাড়ে ১২টার দিকে মারা যান গৃহবধূ শাকিলা বেগম।
গৃহবধূর শাকিলার পিতা মহাদেব পুর গ্রামের পচন জানান,আমি মেয়েকে নিয়ে রাত থেকেই রাজশাহী মেডিকেলে ছুটাছুটি করছি, আর গ্রামে বসে আমাকে ছাড়াই আমার মেয়ের মৃত্যু নিয়ে সালিশ বিচার করে অপরাধীদের দেড় বিঘা জমি দিবে বলে আপস মিমাংসা করেছে,যা আমি জানিনা, আমি এর কঠোর বিচার চাই বলে জানান।
তানোর থানা অফিসার ইনচার্জ ওসি রাকিবুল হাসান জানান, গৃহবধূ মারা গেছেন রামেক হাসপাতালে। আমাদের কিছুই করার নাই। তবে অভিযোগ পেলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।স্ব.বা/ রু

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *