শ্রীলঙ্কায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সামরিক বাহিনীকে নির্দেশ

আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: শ্রীলঙ্কায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সামরিক বাহিনীকে নির্দেশশ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী রানিল ভিক্রামাসিংহে বলেছেন, দেশটিতে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য “যা যা দরকার” তা করার জন্য তিনি সামরিক বাহিনী ও পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন।
দেশটিতে সদ্য জারি করা জরুরি অবস্থা ভেঙে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী রাজধানী কলম্বোতে তার অফিসের ভেতরে ঢুকে পড়লে তিনি এই নির্দেশ দিয়েছেন।
টেলিভিশনে দেওয়া এক বিবৃতিতে ভিক্রামাসিংহে বলেন পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য সামরিক ও পুলিশ বাহিনীর প্রধানদের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিনি বলেন ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনে বিক্ষোভকারীরা তাকে বাধা দিচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট গোটাভায়া রাজাপাকশা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর পার্লামেন্টের স্পিকার প্রধানমন্ত্রী ভিক্রামাসিংহেকে দেশটির ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করেন। বিরোধী নেতা সাজিথ প্রেমাদাসা এই ঘোষণাকে “হাস্যকর” বলে উল্লেখ করেছেন। এর আগে বিক্ষোভকারীরা রাষ্ট্রীয় একটি টিভি চ্যানেলের অফিসে ঢুকে পড়লে তার স¤প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

জরুরি অবস্থার পর

প্রধানমন্ত্রী রানিল ভিক্রামাসিংহেকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করার পর পরই তিনি সারা দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন। কিন্তু হাজার হাজার বিক্ষোভকারী প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়।
তারা ভবনের ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয় এবং তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়ে, জলকামান ব্যবহার করে। তাদের মধ্যে কয়েক দফায় সংঘর্ষও হয়। এক পর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা প্রধানমন্ত্রীর অফিসের চারপাশের দেয়াল বেয়ে উপরে উঠে যায়। তারা প্রধানমন্ত্রীর অফিসের প্রধান গেট ভেঙে ফেলে এবং শেষ পর্যন্ত ভেতরে ঢুকে পড়তে সক্ষম হয়। এসময় তারা সেখান ¯স্লোগান দিয়ে উল্লাস করতে থাকে। অনেককেই মোবাইল ফোন দিয়ে ছবি ও সেলফি তুলতে দেখা যায়।
বিবিসির একজন সংবাদদাতা রজনী বৈদ্যানাথানও প্রধানমন্ত্রীর অফিসের ভেতরে গিয়েছিলেন। তিনি বলছেন, শ্রীলঙ্কার ইতিহাসে এটি আরো একটি ব্যতিক্রমধর্মী মুহূর্ত। কদিন আগে বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্টের প্রাসাদ ও অফিসের ভেতরেও ঢুকে পড়ে। তিনি বলছেন সেখানকার পরিস্থিতি বর্ণনা করা কঠিন। কিন্তু আসল প্রশ্ন হচ্ছে- এর পর কী? এর উত্তর বিক্ষোভকারীরাও জানে না।

প্রধানমন্ত্রীর কথা শুনছে না বিক্ষোভকারীরা

প্রধানমন্ত্রী রানিল ভিক্রামাসিংহে রাজধানী কলম্বোসহ দেশটির পশ্চিমাঞ্চলে কারফিউ এবং সারা দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার পরেও হাজার হাজার মানুষ কলম্বোর রাজপথে বিক্ষোভ করছে।
বিক্ষোভকারীরা বলছেন তাদের লড়াই এখনই শেষ হয়ে যাচ্ছে না। তাদের দাবি সরকারের নেতৃত্বে যারা আছেন তাদের সবাইকে চলে যেতে হবে। এবং দেশের যে অবস্থা হয়েছে তার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচার হতে হবে।
এই অবস্থার মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী ভিক্রামাসিংহে টেলিভিশনে ভাষণ দিয়েছেন এবং দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য যা কিছু করা দরকার সেসব করার জন্য সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন।
তার অফিসসহ সরকারি আরো যেসব ভবন বিক্ষোভকারীরা দখল করে রেখেছে সেগুলো থেকে তাদের চলে যাওয়ার জন্য তিনি বিক্ষোভকারীদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, “সংবিধানকে আমরা ছিঁড়ে ফেলতে পারি না। ফ্যাসিবাদীরা ক্ষমতা দখল করবে এটা হতে দেওয়া যায় না। গণতন্ত্রের প্রতি ফ্যাসিবাদীদের এই হুমকির অবসান ঘটাতে হবে।”
কিন্তু তার এসব কথায় কেউ কান দিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। কলম্বো থেকে বিবিসির একজন সংবাদদাতা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর এই ভাষণ থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে দেশটির সেনাবাহিনী হয়তো রাজধানী কলম্বোর নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে যাচ্ছে।

প্রেসিডেন্ট রাজাপাকশার পলায়ন

শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণে গত কয়েক মাস ধরেই যে প্রতিবাদ বিক্ষোভ চলছে সেটা গত এক সপ্তাহ ধরে তীব্র রূপ নিয়েছে।
বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্ট রাজাপাকশার বাসভবন দখল করে নেওয়ার পর তিনি কোথায় আছেন সেবিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছিল না। তাকে নিয়ে নানা ধরনের গুজব ছড়িয়ে পড়িয়েছিল।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত গতরাতে নিশ্চিতভাবে জানা গেল যে তিনি দেশ ছেড়ে মালদ্বীপে চলে গেছেন। সামরিক বাহিনীর একটি বিমানে করে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে তিনি দেশ ছেড়ে চলে যান। শ্রীলঙ্কার বিমান বাহিনী এই খবর নিশ্চিত করেছে। জানা গেছে বুধবার স্থানীয় সময় ভোর তিনটার সময় তিনি মালদ্বীপের রাজধানী মালেতে গিয়ে পৌঁছেছেন। বিক্ষোভকারীরা দেশটি বেহাল অর্থনীতির জন্য প্রেসিডেন্ট রাজাপাকশার পরিবার এবং তার সরকারকে দায়ী করছে।
প্রেসিডেন্ট গোটাভায়া রাজাপাকশা এর আগে ১৩ই জুলাই অর্থাৎ গতকাল বুধবার পদত্যাগ করবেন বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু এখন তিনি কী করবেন সেটা এখনও স্পষ্ট নয়।
বিবিসি জানতে পেরেছে রাজাপাকশা মালদ্বীপে থাকবেন না। অন্য কোনো একটি দেশে চলে যাবেন। তার ভাই সাবেক অর্থমন্ত্রী বাসিল রাজাপাকশা ইতিমধ্যেই শ্রীলঙ্কা ত্যাগ করেছেন এবং তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পথে রয়েছেন।

স্ব.বা/ রু

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *