স্ত্রী-মেয়েকে হত্যা: একযুগ আত্মগোপনে ছিলেন জাকির

জাতীয় লীড

স্বদেশবাণী ডেস্ক: স্ত্রী ও তিন বছরের মেয়ে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জাকির হোসেনকে ১২ বছর পর গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পারিবারিক কলহের জেরে ২০০৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি মানিকগঞ্জের দৌলতপুরে স্ত্রী নিপা আক্তার ও তিন বছরের মেয়ে জ্যোতিকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে জাকির হোসেন।

পরে এ ঘটনায় করা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জাকির হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। মৃত্যুদণ্ড নিয়ে এক যুগ আত্মগোপনে ছিলেন জাকির। শুক্রবার (৫ আগষ্ট) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার মিডিয়া সেন্টারের সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব-৪ এর অধিনায়ক মোজাম্মেল হক এ তথ্য জানান।

মোজাম্মেল হক বলেন, বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) রাতে র‌্যাব-৪ ঢাকা জেলার সাভারে অভিযান পরিচালনা করে জাকিরকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০০০ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাকির হোসেন মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর থানার জিয়নপুর গ্রামের মো. আবু হানিফের মেয়ে নিপা আক্তারকে পারিবারিকভাবে বিয়ে করেন। বিয়ের সময় যৌতুক হিসেবে বেশকিছু নগদ অর্থ, গয়না এবং আসবাবপত্র দেয় নিপার পরিবার। বিয়ের পর থেকে জাকির নিপাকে আরও যৌতুকের জন্য শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতে থাকে। ইতোমধ্যে তাদের ঘরে জোতি (৩) নামে কন্যা সন্তান জম্মগ্রহণ করে।

র‌্যাব জানায়, মেয়ের বয়স যখন তিন বছর তখন পুনরায় গর্ভধারণ করেন স্ত্রী নিপা আক্তার। সে সময় জানতে পারেন নিজের বড় ভাইয়ের স্ত্রীর সঙ্গে জাকিরের পরকীয়া সম্পর্ক চলছে। বিষয়টি নিয়ে দাম্পত্য কলহ আরও বেড়ে যায়। ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাকিরের ভাই জাহাঙ্গীর বাড়িতে না থাকার সুযোগে সে তার ভাবি তাহমিনার ঘরে প্রবেশ করে। জাকিরের স্ত্রী নিপা আক্তার জাকির ও তাহমিনাকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলে এবং তার স্বামীকে জানায় বিষয়টি তার ভাসুর জাহাঙ্গীরকে বলে দেবে। এ বিষয় নিয়ে জাকির ও নিপার মধ্যে পুনরায় মনোমালিন্য এবং ঝগড়া-বিবাদের সৃষ্টি হয়। জাকির নিপাকে তালাক দেবে মর্মে ভয়-ভীতি দেখায়। তখন নিপা অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন।

তিনি জানান, নিপা জাকির ও তাহমিনার পরকীয়া প্রেমের ঘটনা বড় ভাই জাহাঙ্গীরকে বলার পর জাকির, তার ভাই জাহাঙ্গীর, ভাবী তাহমিনা এবং শ্বশুর-শাশুড়িসহ পরিবারের সদস্যরা বিশ্বাস না করে ক্ষিপ্ত হয়ে নিপাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। পরিবারের সদস্য, আত্বীয়-স্বজন এবং বন্ধু বান্ধবের উসকানিতে জাকির স্ত্রী নিপার প্রতি আরও উগ্র এবং প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে পড়েন। নিপা আক্তারকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

২০০৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে জাকির ঘুমন্ত অবস্থায় নিপা আক্তারকে গামছা দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে। জ্যোতি ঘটনা দেখতে পাওয়ায় নিজের মেয়েকেও শ্বাসরোধে হত্যা করে পালিয়ে যায়।

র‌্যাব জানায়, ২৭ ফেব্রুয়ারি নিহতের বাবা আবু হানিফ বাদী হয়ে দৌলতপুর থানায় জাকির হোসেনসহ তার বাবা নইম উদ্দিন শেখ, মা মালেকা বানু এবং ভাবি তাহমিনাসহ চারজনের নামে হত্যা মামলা করেন। ওই মামলার আসামি জাকির ৫ বছর কারাভোগ শেষে জামিনে বেরিয়ে ২০১০ সালে আত্মগোপনে চলে যায়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জাকির হোসেন তার বাবা নইম উদ্দিন শেখ, মা মালেকা বানু এবং ভাবি তাহমিনাসহ জাকিরের বড় ভাই জাহাঙ্গীর হোসেন, জাকিরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু আমিনুল, জাহাঙ্গীরের শ্যালক স্বপন ও হাসান এবং জাকিরের চাচাতো ভাই পারভেজ ওরফে রানা ওরফে মিলনসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

আদালত সাক্ষ্য প্রমাণ ও উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে অন্তঃসত্ত্বা নিপা ও মেয়ে জ্যোতি হত্যায় অপরাধে প্রধান আসামি জাকিরকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। আর তার ভাবি তাহমিনা, ভাই জাহাঙ্গীর, বন্ধু আমিনুল, চাচাতো ভাই পারভেজ রানা মিলন, জাহাঙ্গীরের শ্যালক স্বপন ও হাসানসহ প্রত্যেককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। শাশুড়ি মালেকা বানু বেকসুর খালাস পান। শ্বশুর নইম উদ্দিন বিচার চলাকালে মৃত্যুবরণ করেন। ২০১০ সালে জামিনের পর জাকির পলাতক অবস্থায় প্রায় দীর্ঘ ১২ বছর আত্মগোপনে ছিলেন।

২০১৩ সালে জাকির পুনরায় বিয়ে করেন। স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে তিনি সাভারের জিনজিরা এলাকায় বসবাস করছিলেন। স্ত্রী ও মেয়ে হত্যা মামলায় জামিন নিয়ে আর কোনোদিন মানিকগঞ্জে যাননি জাকির। ঘটনার পর থেকে আত্মগোপন ও গ্রেপ্তার এড়াতে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ান। পেশা পরিবর্তন করেন। বাউলের বেশে জীবিকা নির্বাহ করেন।

স্ব.বা /রু

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *