তীব্র সার সংকটে রাজশাহীর চাষীরা, হুমকির মুখে আমন ধান চাষ!

কৃষি জাতীয় রাজশাহী লীড

স্বদেশ বাণী ডেস্ক : রাজশাহীতে তীব্র সার সংকট, আমন ধান চাষ হুমকির মুখে, বিএডিসি গোডাউনে নয় ছয় রাজশাহীতে আমন ধানের ভরা মৌসুমে তীব্র সার সংকট দেখা দিয়েছে। ডিলাররা জুলাই মাসের বরাদ্দকৃত সার এখনো পায়নি বলে জানা গেছে। আগস্ট মাসের সার পেতে ভোগান্তি ও হয়রানিসহ নানারকম জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে।

গোপন সূত্র জানায়, সরকারের বরাদ্দকৃত সার বন্টনে রয়েছে বড় রকম বৈষম্য। বিএডিসি গোডাউন কতৃপক্ষ, সার দিতেও করছেন নয় ছয়।
রাজশাহী জেলায় মোট আবাদি জমির পরিমান ১ লক্ষ ৮১ হাজার ৮১৫ হেক্টর। এর মধ্যে আমন ধানের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ৮০ হাজার ৫০ হেক্টর, গতবারে এই লক্ষমাত্রায় অর্জন ৭৮ হাজার হেক্টর ছিলো। এখন লক্ষমাত্রা অর্জনে সরকারের বরাদ্দকৃত সার না পেয়ে চরম বিপাকে কৃষকরা। লক্ষমাত্রা অর্জনে অতিরিক্ত সার বরাদ্দ প্রয়োজন বলে মনে করছেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা।

জানা যায়, চলতি বছর আগষ্ট মাসে রাজশাহী জেলায় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) মাধ্যমে এমওপি ৮০০ মেট্রিক টন, টিএসপি ৬৬৩ মেট্রিক টন এবং ডিএপি ১৫৩১ মেট্রিক টন সরকারি বরাদ্দ পেয়েছে। কিন্তু জেলায় মোট আবাদি জমি এমনকি শুধুমাত্র আমনের লক্ষমাত্রা অর্জনের জন্যও এ বরাদ্দ চাহিদার তুলনায় অনেক কম।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে প্রতি হেক্টর জমিতে এমওপি ৮২.৫০ কেজি, ডিএপি ৬০ কেজি, টিএসপি ৫২.৫০ কেজি এবং ইউরিয়া সার ১৫০ কেজি’র প্রয়োজন। সেই হিসেবে রাজশাহী জেলায় আমন মৌসুমে ৮০ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে ৬ হাজার ৬ শত মেট্রিক টন এমওপি সারের চাহিদা রয়েছে। সেখানে মে থেকে আগষ্ট এই চার মাসে ৩ হাজার মেট্রিক টন এমওপি সারের বরাদ্দ রয়েছে। আগষ্ট মাসে বরাদ্দ রয়েছে মাত্র ৮০০ মেট্রিক টন এমওপি।

বিএডিসি বলছে, ৮০০ মেঃটন এর মধ্যে ১৯০ মেঃটন (১০ আগস্ট পযর্ন্ত) বন্টন করা হয়েছে। অথচ কাগজ কলমে রাজশাহী বিএডিসি গোডাউনে এমওপি মজুত আছে ২.৮০ মেঃটন। সারের এই তীব্র সংকটে কৃষকরা, আমন ও আসছে আলুর সিজনে নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন বলে জানিয়েছে ডিলাররা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সার ডিলার জানান, বিগত বছর গুলোতেও সারের বরাদ্দ প্রায় এরকমই ছিল।  কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা কোন আবাদযোগ্য জমি ফেলে না রাখা যাবে না, এতে করে আবাদের পরিমানও বেড়েছে। ফলে বরাবরের মত বরাদ্দ সারে চাহিদা মেটাতে পারছে না। এছাড়াও গত বছর পর্যন্ত আমরা বিভিন্ন মোকাম থেকে (সরকারি বরাদ্দের বাইরে বেসরকারি উৎস) অতিরিক্ত চাহিদার সার আমদানি করে চাহিদা মেটাতে পেরেছি। কিন্তু এবছর বহির্বিশ্বে সারের বেশী দাম, মোকাম থেকে আনার খরচ, লোড ও আনলোড খরচ বেশী হওয়ার কারনে আমদানি করতে না পারায় এ সংকট আরো বেশী হয়েছে।

তারা অভিযোগ করে বলেন, এত কম বরাদ্দের ভিতরেও আবার ডিলার পর্যায়ে সার বরাদ্দে রয়েছে বৈষম্য। কোন কোন ইউনিয়নে স্বভাবিক বরাদ্দের চেয়ে বেশী আবার কোথাও একেবারেই কম বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। তানোর ও পবা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কাছে জানা যায়, তানোর উপজেলার কামারগাঁ ইউনিয়নে এমওপি বরাদ্দ রয়েছে ২১ মেট্রিকটন,তালন্দ ইউনিয়নে ১৬ মেট্রিক টন ; পবা উপজেলার হরিয়ান ইউনিয়নে ৭.২০ টন এবং দর্শন পাড়া ইউনিয়নে ২.৯০ মেট্রিক টন এমওপি’র বরাদ্দ রয়েছে। আবাদী জমি বা আমন ধানের লক্ষমাত্রার সাথে যা পরিস্কার বৈষম্যপূর্ণ ।

এদিকে আগষ্ট মাসের জন্য বরাদ্দ ৮০০ মেট্রিকটন এমওপি’র পুরোটাই দায়িত্বে থাকা বিএডিসি’র রাজশাহী আঞ্চলিক সার গুদামে গিয়েও ডিলাররা ফিরে আসছেন। তারা বরাদ্দকৃত সার নিয়ে করছেন নয় ছয়। আঞ্চলিক খাদ্য গুদামের দায়িত্বরত সহ-পরিচালক আরিফুজ্জামান বলেন, আমি তথ্য দেব, না নিজের কাজ করবো ? এর আগেও কয়েকজন এসে তথ্য নিয়ে গেলেন। আপনি আমার উর্ধ্বতন কর্মকর্তা যুগ্ম পরিচালক জুলফিকার আলীর সঙ্গে কথা বলতে পারেন।

পরে যুগ্ম পরিচালক জুলফিকার আলী’র অফিসে তাকে না পেয়ে ফোন করা হলে তিনি বলেন, এই মুহুর্তে আমি বাহিরে আছি বিকাল ৪ টার পর ফোন দিলে এবিষয়ে কথা বলবো। বিকাল ৪ টার পর একাধিক নাম্বার থেকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

সংকট বিষয়ে বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার এসোসিয়েশন রাজশাহী জেলা ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক মোঃ রবিউল ইসলাম বলেন, আমরা সংকট নিরসনের জন্য জেলা প্রশাসক (জেলা সার ও বীজ কমিটির সভাপতি) বরাবর গত ২০ জুলাই অতিরিক্ত এমওপি ৫ হাজার, ইউরিয়া ৩ হাজার এবং টিএসপি ২ হাজার মেট্রিক টন বরাদ্দের জন্য আবেদন পত্র দিয়েছি।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রাজশাহীর উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গিয়ে তিনি অফিসে না থাকায় অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) তৌফিকুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকারের বরাদ্দকৃত সার বিএডিসি গোডাউনে আছে। তাঁরা বরাদ্দকৃত সার ডিলারদের প্রদান করবেন। আগে থেকে এইভাবে সার বরাদ্দ হয়ে আসছে। এখন কেন সংকট দেখা দিয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকারের বরাদ্দের বাহিরেও সার আমদানি করতো অনেকে, যা এখন বন্ধ আছে। কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম বেশি তাই অনেকে সার আমদানি করছে না। ইতোমধ্যে অতিরিক্ত সার বরাদ্দ চেয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল বলেন, ফার্টিলাইজার এসোসিয়েশন রাজশাহী’র আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সংকট নিরসনে অতিরিক্ত বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। তবে কৃষি সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ বলছে যতটা সংকট কৃষকরা বলছে, ততটা সংকট নয়।

স্ব.বা/ম

 

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *