রাজশাহীতে ১৬ লক্ষ টাকাসহ ডাকাত, ১৯৯ বোতল ফেন্সিডিলসহ মাদকব্যবসায়ী গ্রেফতার

রাজশাহী লীড

স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহীতে পৃথকী অভিযানে নগরীর শাহ মখদুম থানা পুলিশ সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের ৬ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে । তাদের কাছ থেকে লুন্ঠিত ১৬ লক্ষ ৮৪ হাজার ৯৪০ টাকা উদ্ধারসহ অ্যাম্বুলেন্স ও দেশীয় অস্ত্র জব্দ করেছে। অন্যদিকে, নগরীর মতিহার থানা পুলিশ ১৯৯ বোতল ফেন্সিডিলসহ এক মাদক ব্যবসায়ী আটক করেছে।

সোমবার (২২ আগস্ট) বিকেল ৩ টায় আরএমপি সদরদপ্তর কনফারেন্স রুমে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের সম্মানিত অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মজিদ আলী বিপিএম এক সংবাদ সম্মেলনে নগরীর শাহ মখদুম থানা পুলিশ সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের ৬ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে । তাদের কাছ থেকে লুন্ঠিত টাকা উদ্ধারসহ অ্যাম্বুলেন্স ও দেশীয় অস্ত্র জব্দ করেছে বলে জানান।

রাজশাহী মহানগরীর শাহমখদুম থানার পোস্টাল একাডেমির সামনে ডাকাতির ঘটনায় পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিকের সার্বিক দিকনির্দেশনায় ৬ ঘন্টার মধ্যে সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের ৬ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে আরএমপি’র শাহমখদুম থানা পুলিশ। এসময় আসামিদের কাছ থেকে ডাকাতি হওয়া ১৬ লক্ষ ৮৪ হাজার ৯৪০ টাকা ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার হয়। সেই সাথে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত অ্যাম্বুলেন্সটি জব্দ করা হয়েছে।

গ্রেফতারকৃতরা হলো রাজশাহী মহানগরীর কাশিয়াডাঙ্গা থানার পূর্ব মোল্লাপাড়ার রাজ্জাকের ছেলে আশিক ইসলাম (২৪),  আজাদ আলীর ছেলে হৃদয় (২৪), রাজপাড়া থানার আলীগঞ্জ মধ্যপাড়ার মো: আসলাম আলীর ছেলে আব্দুর রহমান (২১), আসলামের ছেলে আব্দুর রহিম (২০), ডিঙ্গাডোবা ঘোষ মাহালের  লোকমানের ছেলে রিকো ইসলাম (২১) ও চন্ডীপুর সুফিয়ানের মোড়ের মৃত এবাদুলের ছেলে ইয়ামিন (২০)।

ঘটনা সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী মহানগরীর পবা থানার একলাছ মোল্লা-সহ ৮৫ জন পান ব্যবসায়ী একটি সমিতি গঠন করে রাজশাহী জেলার দূর্গাপুর থানার দাওকান্দি বাজারে পানের ব্যবসা করত। তারা দীর্ঘদিন ধরে রাজশাহী’র বিভিন্ন অঞ্চল হতে পান ক্রয় করে ঢাকার শ্যামবাজারে বিভিন্ন আড়তে বিক্রি করত।

গত ২১ আগস্ট ভোর সোয়া ৫ টায় রায়হান আহম্মেদ (২৬),  শহিদুল ইসলাম (৩০) ও আমিনুল ইসলাম (২৭) ঢাকায় পান বিক্রির ৩৪ লক্ষ ২৭ হাজার টাকা নিয়ে শিরোইল বাস টার্মিনালে পৌঁছে। সেখানে তারা একটি সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া করে দাওকান্দি বাজারের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। এসময় তারা লক্ষ্য করে, তাদের সিএনজি অটোরিকশাকে একটি নীল রংয়ের অ্যাম্বুলেন্স অনুসরণ করছে। ভোর সাড়ে ৫ টায় নগরীর শাহমখদুম থানার পোস্টাল একাডেমির সামনে পৌঁছালে পিছন থাকা সেই অ্যাম্বুলেন্সটি হঠাৎ সামনে এসে তাদের গতিরোধ করে। সিএনজি অটোরিকশাটি থামার সাথে সাথেই অ্যাম্বুলেন্স হতে ৬-৭ জন ডাকাত বের হয়ে চায়নিজ কুড়াল, হাসুয়া, চাকু, ছোরা ও লোহার রড নিয়ে তাদের ঘিরে ধরে।

এসময় রায়হান পালানোর চেষ্টা করলে ডাকাতরা তাকে মারধর করে তার কাছে থাকা ১৪ লক্ষ ২৭ হাজার টাকা এবং শহিদুলকে প্রাণ নাশের হুমকি দিয়ে তার নিকটে থাকা ২০ লক্ষ টাকা-সহ মোট ৩৪ লক্ষ ২৭ হাজার টাকা জোরপূর্বক দুধর্ষ ডাকাতি করে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে আম চত্বরের দিকে পালিয়ে যায়।

একলাছ মোল্লার এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আরএমপি’র পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক সর্বাত্মক গুরুত্ব সহকারে শাহমখদুম ক্রাইম বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার নূরে আলম, সহকারি পুলিশ কমিশনার সুকুমার মোহন্ত-কে আসামি গ্রেফতার, লুন্ঠিত টাকা, অ্যাম্বুলেন্স ও অস্ত্র উদ্ধারে যাবতীয় দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন।

পুলিশ কমিশনারের নির্দেশ মোতাবেক শাহমখদুম থানার অফিসার ইনচার্জ মেহেদী হাসান ও শাহমখদুম থানা পুলিশের একটি টিম আসামিদের নাম ঠিকানা ও অবস্থান সনাক্ত করে গ্রেফতারে অভিযান শুরু করেন।

পরবর্তীতে শাহমখদুম থানা পুলিশ আরএমপি’র সাইবার ক্রাইম ইউনিটের সহায়তায় সিসিটিভি ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত অ্যাম্বুলেন্স-সহ আসামিদের সনাক্ত করে। এরপর তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নগরীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে মাত্র ৬ ঘন্টার মধ্যে আসামিদের গ্রেফতার করে। এসময় আসামিদের কাছ থেকে ডাকাতি হওয়া ১৬ লক্ষ ৮৪ হাজার ৯৪০ টাকা ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার হয়। সেই সাথে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত অ্যাম্বুলেন্সটি জব্দ করা হয়েছে।

অবশিষ্ট টাকা উদ্ধার ও সহযোগী আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে। গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে শাহমখদুম থানায় ডাকাতির মামলা রুজু করা হয়েছে।

অন্যদিকে, রাজশাহী মহানগরীতে ১৯৯ বোতল ফেন্সিডিল-সহ এক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে আরএমপি’র মতিহার থানা পুলিশ।

গ্রেফতারকৃত হাবিবুল বাসার ওরফে পিয়ারুল ওরফে পিয়া (৩৫)। সে রাজশাহী মহানগরীর মতিহার থানার খোঁজাপুর মধ্যপাড়ার মৃত আক্কাস কাটানীর ছেলে।

ঘটনা সূত্রে জানা যায়, মতিহার বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মনিরুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে মতিহার থানার অফিসার ইনচার্জ আনোয়ার আলী তুহীনের নেতৃত্বে এসআই পলাশ আলী ও তার টিম গতকাল ২১ আগস্ট রাতে মতিহার থানা এলাকায় বিশেষ অভিযান ও মাদকদ্রব্য উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করছিল। এসময় তারা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, মতিহার থানার খোঁজাপুর মধ্যপাড়ায় একজন মাদক ব্যবসায়ী বিক্রয়ের জন্য ফেন্সিডিল-সহ অবস্থান করছে।

উক্ত সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে মতিহার থানা পুলিশের ঐ টিম রাত সাড়ে ১১ টায় সেখানে অভিযান পরিচালনা করে আসামি হাবিবুল বাসারকে গ্রেফতার করে। এসময় তার কাছ থেকে ১৯৯ বোতল ফেন্সিডিল উদ্ধার হয়।

গ্রেফতারকৃত আসামির বিরুদ্ধে নগরীর মতিহার থানায় ৬ টি মাদকের মামলা রুজু আছে। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

স্ব.বা/ম

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *