কাটা মুরগিতে আগ্রহ বেড়েছে ক্রেতাদের

জাতীয় লীড

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: আছিয়া বেগম মুরগির দোকানে দাঁড়িয়ে বলেন, আড়াই শ’ গ্রাম দেন। বিক্রেতা মুখের দিকে তাকিয়ে বলেন ৬৫ টাকা। আড়াই শ’ গ্রাম ব্রয়লার মুরগির মাংস কেনেন আছিয়া। এরপর পাশেই সবজির দোকানে আড়াই শ’ গ্রাম পটল, ৩০০ গ্রাম বেগুন আর এক কেজি আলু কেনেন তিনি।

গরুর মাংসের মতোই কাটা মুরগি কবে থেকে কিনছেন জানতে চাইলে আছিয়া বেগম বলেন, ‘গত রমজান থেকেই মুরগির দাম বাড়তি। এখন ব্রয়লারই ১৭০ টাকা, অথচ ১৩০, ১৩৫ টাকায় ব্রয়লার কিনতাম। দাম বাড়তি, তাই কাটা মুরগি কিনি। যতটুকু দরকার ততটুকুই কিনছি। সব কিছুর দাম বাড়তি, আমাগো খরচাও তো বাইড়া গেছে।’

শুধু আছিয়া বেগম নন, রাজধানীর পশ্চিম শ্যাওরাপাড়ার অলি মিয়ারটেক বউ বাজারে মুরগির দোকানে আগের তুলনায় কাটা মুরগিতে আগ্রহ বেড়েছে ক্রেতাদের।

বিক্রেতারা বলছেন, এক রাতেই ব্রয়লারে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকায়, পাকিস্তানি কক ও সোনালী মুরগিরে কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২৯০ টাকায়। লেয়ারের কেজিতে ২০/৩০ টাকা বেড়েছে। বিক্রি হচ্ছে ২৮০টাকায়। তাই ক্রেতা কমছে।

তবে কাটা মুরগির ক্রেতা বাড়ছে। যে ক্রেতা আগে কিনতো দেড় কেজি মুরগি, সে এখন কাটা মুরগি কিনতেছে আড়াই শ’ গ্রাম থেকে আধা কেজি। ক্রেতাদের চাহিদা বুঝে প্যারেন্টস মুরগির বিক্রিও বাড়ানো হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বউ বাজারে সামর্থ্যবান ক্রেতার চেয়ে নিন্ম, মধ্যবিত্তের ক্রেতার সংখ্যাই বেশি।

স্থানীয় সাধারণ ক্রেতারা বলছেন, দাম বাড়লে আর কমে না, কমলেও পূর্বের দামের তুলনায় খুব অল্পই কমে। নিজেদের সামর্থ্য বুঝে ক্রয়সীমার মধ্যেই প্রয়োজন মেটানোর চেষ্টা করছেন তারা।

বউ বাজারে মুরগির দোকানে কথা শ্রমিক ইসরাফিলের সঙ্গে। তিনি  জানান, আগে কক মুরগিই কিনতাম ১৭০ থেকে ১৮০ টাকার মধ্যে। ওই দামে এখন ব্রয়লার কিনতে হয়। কক এখন ২৯০ টাকা। কেজিতে বাড়ছে ১০০ টাকা।

তিনি বলেন, ‘সব কিছুর দাম তো বাইড়া গেছে, কিন্তু আমগো কাম-কাজের মূল্য তো আর বাড়ে নাই। তাই কক খাওন বাদ দিছি, ব্রয়লার কিনে খাইতাছি। বাঁচতে তো হবে।’

কাজীপাড়ার একটি ফার্নিচারের দোকানের কর্মচারী সবুজ মিয়া। লেয়ার কিনতে এসে কাটা ব্রয়লার কেনেন। তিনি বলেন, সাদা লেয়ার ২৪০ আর লাল লেয়ার মুরগি কিনতাম ২৫০ টাকার মধ্যে। সেই মুরগির দাম আজ চাওয়া হচ্ছে ২৮০ টাকা। উপায় না পেয়ে কাটা ব্রয়লারের মাংস কিনছি আধা কেজি ১৩০ টাকায়।

ক্ষোভ আর হতাশা প্রকাশ করে ভ্যান চালক ওয়ালিদ হোসেন বলেন, ‘কাম বন্ধ করার সুযোগ নাই। দিন আনি, দিন খাই। বাজারের অবস্থা আগের মতো নাই। শুক্রবারের দিন, বউ-বাচ্চা ভাল খাওনের আশা করে। নিজেরও মন চায়। গরু-খাসির মাংস কেনার কথা তো চিন্তাই করিনা। দেশি মুরগিও খাই না অনেকদিন। লেয়ার, কক মুরগির দামও বাড়ছে। ব্রয়লার গত সপ্তাহে কিনছিলাম ১৬০ টাকা, আজ ১৭০ টাকায়।’

মুরগি ব্যবসায়ী মো. রাকিব বলেন, পাইকারি দরে ব্রয়লার গতকালও কিনছি ১৫৫ টাকায়, বিক্রি করছি ১৬০ টাকায়। আজ কিনেছি ১৬৫ টাকায়। পাঁচ টাকা তো বাড়িয়ে বিক্রি করতেই হবে।

তিনি বলেন, রাতারাতি লেয়ার মুরগির দাম বেড়েছে ৩০ টাকা। গতকালও ছিল ২৫০ টাকা। আজ কিনতে গিয়ে দেখি পাইকারি দামই চাচ্ছে ২৭০ টাকা। তাই মহল্লা থেকে পাঁচটা লেয়ার মুরগি কিনছি। অথচ আমার দোকানে প্রতিদিন লাগেই ১০০ লেয়র মুরগি।

ব্রয়লার মুরগি কেটে বিক্রি সম্পর্কে তিনি বলেন, একেকটা ব্রয়লারের ওজন চার কেজির বেশি। কেজি ২৬০ টাকা। পুরো মুরগি তো অনেকেই কিনতে পারেন না। তাই কেটে গরুর মাংসের মতো বিক্রি করতেছি।

রাকিব আরও বলেন, কাটা ব্রয়লারে ক্রেতা বাড়ছে। কারণ যার যতটুকু লাগে তিনি ততোটুকুই কিনতে পারছেন। কেউ আড়াই শ’ গ্রাম কেউ হয়তো আধা কেজি হাড়, চামড়া ছাড়া ব্রয়লারের মাংস কিনতাছেন।

স্ব.বা/বা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *