রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুতে কী ক্ষতি হলো যুক্তরাজ্যের?

আন্তর্জাতিক লীড

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর সামান্য বদলে গেছে যুক্তরাজ্যের জাতীয় সঙ্গীত। এখন রানির পরিবর্তে ‘ঈশ্বর, রাজাকে রক্ষা করুন’ গাইছে দেশটির জনগণ। শুধু জাতীয় সঙ্গীত নয়, রানির মৃত্যুতে আরও অনেক পরিবর্তন এসেছে বা আসতে চলেছে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে।

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সাত দশকের শাসনামলে জনসমাগমের বহু উপলক্ষ তৈরি হয়েছিল যুক্তরাজ্যে। গত জুন মাসে তার প্ল্যাটিনাম জুবিলি উৎসবের সময় দেশব্যাপী ক্লাসিক গাড়ি প্রদর্শনী, নৃত্যানুষ্ঠান, আনন্দ মিছিল, মিউজিক কনসার্ট, ক্রীড়া প্রতিযোগিতাসহ নানা ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। এ ধরনের অনুষ্ঠানে রাজতন্ত্র সম্পর্কে মতামত প্রায় অপ্রাসঙ্গিক। ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপটের মানুষদের ঐক্যবদ্ধ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন রানি।

দ্বিতীয় এলিজাবেথের রাজত্বকালেও ব্রিটিশদের উপনিবেশ প্রত্যাহার অব্যাহত ছিল। অনেকের মতে, তিনি জ্যামাইকার মতো কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনে সাহায্য করেছিলেন। যুদ্ধ-পরবর্তী অভিবাসীদের জন্য কমনওয়েলথে রানির ভূমিকা সহায়ক ছিল। কারণ এটি শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশদের স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিল, এসব মানুষ কেন তাদের দেশে গেছে। তারা নিছক চাকরিপ্রত্যাশী অভিবাসী নয়, একটি ইউনিয়নের মধ্যে থাকা স¤প্রদায়ের সদস্যও ছিল।

থিংক-ট্যাংক ইউনিভার্সিটি সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চের হেভেন ক্রাউলির মতে, আশ্রয়প্রার্থীরা যুক্তরাজ্য সম্পর্কে যে কয়টি বিষয় সম্পর্কে জানে তার একটি হলো রাজতন্ত্র (আরেকটি ফুটবল)।

যুক্তরাজ্যের অন্তর্গত দেশগুলোকেও ঐক্যবদ্ধ রাখতে সাহায্য করেছিলেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। স্কটিশ ফার্স্ট মিনিস্টার নিকোলা স্টার্জন যেমন বলেছেন, তার (রানি) জন্য স্কটল্যান্ড বিশেষ কিছু ছিল এবং তিনি স্কটল্যান্ডের জন্য। ২০১৪ সালে স্কটিশ স্বাধীনতার প্রচারাভিযানের সময় স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি (এসএনপি) বলেছিল, স্কটল্যান্ড যুক্তরাজ্য ছাড়ার পরেও রাষ্ট্রের প্রধান থাকতে পারেন রানি এলিজাবেথ।

এসএনপির অনেক সদস্যই প্রজাতন্ত্রের সমর্থক এবং এই অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে। স্টার্জনের এক সহকর্মী বলেন, বিষয়গুলো একবার স্থির হয়ে গেলে স্বাধীন স্কটল্যান্ডের জন্য রাজতন্ত্র সর্বোত্তম হবে কিনা তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

যুক্তরাজ্যের মাত্র এক-চতুর্থাংশ মানুষ প্রজাতন্ত্রের সমর্থক। তবে বয়স্কদের তুলনায় তরুণদের মধ্যে রাজতন্ত্রের প্রতি আগ্রহ কম। ২০২১ সালে ব্রিটিশ সোশ্যাল অ্যাটিচিউড জরিপে দেখা গেছে, ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সীদের মধ্যে মাত্র ১৪ শতাংশ বলেছেন, দেশে এর দরকার রয়েছে। বিপরীতে ৫৫ বা তার বেশি বয়সী মানুষদের মধ্যে রাজতন্ত্রের প্রতি সমর্থনের হার প্রায় ৪৪ শতাংশ।

খুব শিগগির সংখ্যাগরিষ্ঠ ব্রিটিশরা রাজতন্ত্রের বিলুপ্তি চাইবে, এমন সম্ভাবনা খুব কম। তবে রানির তুলনায় রাজার প্রতি তাদের সহানুভূতি কম হতে পারে।

৭৩ বছর বয়সী রাজা তৃতীয় চার্লস দ্বিতীয় এলিজাবেথের মতো অনেক লোকের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে পারেননি। হতে পারে তিনি এর জন্য অতটা সময় পাননি। ২০১৮ সালে ইউগভের এক জরিপে দেখা যায়, যুক্তরাজ্যের ৩১ শতাংশ লোক (এবং ৬৪ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে ৪৯ শতাংশ) রানিকে সামনাসামনি দেখেছেন। আর তৃতীয় চার্লসকে দেখেছেন মাত্র ১৬ শতাংশ মানুষ।

অ্যানাবেলে বাইরন নামে এক শিক্ষার্থী জানান, তিনি ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের বিরোধী নন। তবে রানি মারা যাওয়ার পর এর ওপর তার আগ্রহ কমে গেছে।

এক্ষেত্রে স্টিপল বাম্পস্টেডের ক্যাথলিন ও পিটার অ্যান্ডারসনের দৃষ্টিভঙ্গি অনেকটাই স্পষ্ট। ক্যাথলিন বলেন, আমরা অনেক বড় রাজতন্ত্রবাদী। তবে প্রথম স্ত্রী ডায়ানার সঙ্গে আচরণের জন্য তিনি রাজা চার্লসকে কখনোই ক্ষমা করতে পারবেন না। এমনকি মুকুট যদি চার্লসকে পাশ কাটিয়ে চলেও যেতো, তাতে একটুও কষ্ট পেতেন না ক্যাথলিন।

এরপরও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের নতুন রাজার শুরুটা মন্দ হয়নি। দেশটির তিন-পঞ্চমাংশ লোক টেলিভিশনে রাজা তৃতীয় চার্লসের প্রথম ভাষণ দেখেছেন বা শুনেছেন। ভাষণে তিনি দেশের সেবা করার অঙ্গীকার করেছেন। যারা চার্লসের এই বক্তৃতা শুনছেন তাদের মধ্যে ৯৪ শতাংশই তাতে অনুমোদন দিয়েছেন। তবে এই মুহূর্তে একজন রাজার পারফরম্যান্স বিচার করা ব্রিটিশদের কাছে কিছুটা নতুন বিষয়ই বটে।

স্ব.বা/রু

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *