তানোরে ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় মারপিট সোনা টাকা ছিনতায়

রাজশাহী

তানোর প্রতিনিধি: রাজশাহীর তানোরে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীকে ইভটিজিংয়ের সময় তার ভাই প্রতিবাদ করলে ক্রিকেট খেলার ব্যাট স্ট্যাম্প দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে মারাত্মকভাবে জখম করে সোনা টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে থানায় মামলা করা হয়েছে। গত শুক্রবার দুপুর আড়াই টার দিকে উপজেলার তালন্দ ইউনিয়ন(ইউপির) লালপুর বাজারে ঘটে চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি। এঘটনায় ওই ছাত্রীর পিতা নারায়নপুর দ্বিতীয় উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন বাদী হয়ে লালপুরগ্রামের শিশির ও আকাশসহ চার জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন।

তবে মামলা নিয়ে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। মামলার বাদি শিক্ষক আলাউদ্দিন বলেন, কোন শক্রতা নেই, কোন ঝগড়া বিবাদ নেই। আমার মেয়েকে নিয়ে বাইকে করে বাড়িতে আসার পথে লালপুর বাজারে প্রকাশ্যে ইভটিজিং ও এলোপাথাড়ি মারপিট করে সোনা টাকা ছিনিয়ে নেয়। কিন্তু মারপিট ও চুরি মামলা রেকর্ড হয়েছে। যেখানে প্রকাশ্যে পিটিয়ে ছিনতাই করছে এবং আমার ছেলেকে এতই মেরেছে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে।
থানার ওসি কামরুজ্জামান মিয়া জানান, মনে হয় পুর্ব কোন শক্রতা আছে। আইনে যেটা আছে সেটাই করা হয়েছে।

দিনের বেলায় পথরোধ করে পিটিয়ে টাকা সোনা ছিনিয়ে নিয়েছে কিভাবে চুরি মামলা হয় জানতে চাইলে তিনি জানান, আইনের বাহিরে কিছুই করা হয়নি, আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে, তারা পলাতক রয়েছে।
অভিযোগে উল্লেখ, তালন্দ ইউপির নারায়নপুর গ্রামের নারায়নপুর দ্বিতীয় উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিনের মেয়ে তাসবিরা আক্তার এলিজা(২১) ময়মনসিংহ জাতীয় কবি কাজি নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেন।

এলিজার দাদি অসুস্থ হওয়ায় তিনি ২৮ অক্টোবর শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন। তিনি দুপুরের পরে দেবিপুর মোড়ে আসলে আপন ভাই ফয়সাল হাসান(১৬) মোটরসাইকেলে করে বোনকে নিয়ে নারায়নপুর বা নিজ বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন। এঅবস্থায় তারা লালপুর বাজারের আসলামের দোকানের সামনে যাওয়া মাত্রই পুর্ব পরিকল্পিত ভাবে পথরোধ করে বেশ কয়েকজন বখাটে আজেবাজে কথা বলা শুরু করেন। এসময় এলিজার ভাই ফয়সাল হাসান বাধা দিলে ক্রিকেট খেলার ব্যাট স্ট্যাম্প দিয়ে মারা শুরু করেন লালপুর গ্রামের মাহফুজের ছেলে শিশির(২১), মাহবুরের ছেলে আকাশ(২২) মতিউরের ছেলে সুজন(২০) ও আশরাফের ছেলে মানিক রাজ(২৮)সহ অনেকে। সংবাদ পেয়ে শিক্ষক ও বাজারে থাকা লোকজনসহ স্থানীয়দের সহায়তায় তাদেরকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

এচারজনসহ অজ্ঞাত নামা উল্লেখ করে মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। মামলার ধারা ১৪৩/৩৪১/৩২৩/৩৭৯ পেনাল কোড ১৮৬০: বেআইনী জনতায় দলবদ্ধ হইয়া পথরোধ পূর্বক খেলার ব্যাট ও স্ট্যাম্প দিয়া আঘাত করিয়া জখম ও চুরি করার অপরাধ।
প্রত্যাক্ষদর্শীরা জানান, তারা সবাই কিশোর। টিভি পত্রিকাতে দেখা ও শোনা যায় কিশোর গ্যাংয়ের কথা। কিন্তু গত শুক্রবারে লালপুর বাজারে কিশোর গ্যাং কতটা ভয়ংকার তা দেখা গেল। তারা কতটা অমানুষ হতে পারে সেটা বোঝা গেল। শিক্ষকের সাথে কোন জের বা শক্রতা হয় তো তাদের থাকতে পারে, কিন্তু তার ছেলে মেয়ের কি অপরাধ এভাবে মারধর করতে হবে। এদেরকে যত দ্রুত সম্ভব আটক করে চরম সাজা দেওয়া প্রয়োজন। নচেৎ এদের দেখাদেখি অনেকেই ভয়ংকর হয়ে উঠবেন।

শিক্ষক আলাউদ্দিন আরো জানান, আমার মেয়ের হাতে দেড় ভরি ওজনের ব্যাচলেট, গলার চেইন এক ভরি, হাতের আংটি চারআনা ও ব্যাগে থাকা একলাখ টাকাসহ মোট তিন লাখ বিশ হাজার টাকা ছিনতায় করে নিয়েছে। আমার ছেলে মেয়ের সাথে কারো দ্বন্দ্ব বা ফাসাদ নাই। আর আমার মেয়ে ছেলের সাথে এমন অমানুবিক ঘটনা ঘটিয়ে দিল। মেয়ে আমার বিশ্ববিদ্যালয় যেতে চাচ্ছেনা, ছেলে তো মাঝে মাঝে চিৎকার করে উঠছে। আমি তো তাদের সাথে মারামারি করতে পারব না। আইনে যা হবে সেটাই মেনে নেওয়া হবে বলে মানষিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন।

স্ব.বা/রু

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *