জনপ্রিয়হীন নেতৃত্ব অকেজো হয়ে পড়েছে তানোর আওয়ামী লীগ

রাজশাহী

সারোয়ার হোসেন,তানোর: রাজশাহী১(তানোর-গোদাগাড়ী) দুই উপজেলায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে একেবারেই জনপ্রিয়হীন নেতারা আসেন নেতৃত্বে। যার কারনে দলেও দেখা দিয়েছে প্রচুর বিভক্ত। যাকে বলে এক প্রকার অকেজো হয়ে পড়েছে দলটি। কোনভাবে বিভেদ দূর করতে পারছেন না। অবশ্য না পারার কথা। কারন প্রায় স্থানীয় নির্বাচনের ফলাফল চরম প্রশ্নবিদ্ধ। আবার স্থানীয় নির্বাচনে বিএনপি দলীয় প্রতীকে নির্বাচন না করায় আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর ছিল ছড়াছড়ি । অবশ্য একারনে নির্বাচনের প্রচার প্রচারনা চলে জম্পেস ভাবে। কিন্তু ফলাফল যে ভাবেই হোক নৌকার পক্ষে নিতেই হবে। এতে করে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীরা দলের জন্য কোন কাজ করছেন না। বরং নেতৃত্বেরর পতনের জন্য পরিকল্পনা আকছেন বলেও একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেন। বিদ্রোহীদের বঙ্গবন্ধুর খুনি মুশতাক, মীর জাফর,বিএনপি জামায়াতের এজেন্ড, দলের ক্ষতি কারক, ভোটের মাঠে হামলা মামলা ইত্যাদি ইত্যাদি কারনে জাতীয় নির্বাচনের আগে চরম ভাবে বেকে বসেছেন। কোনকিছুতেই কাজ হচ্ছেনা, আবার পাওয়া না পাওয়ার হিসেব তো আছেই। ফলে বর্তমান আওয়ামী লীগ কত ভাগে বিভক্ত তারাই জানে কিনা সন্দেহ। আর এটা দুর হবে না বলেই মনে করছেন সিনিয়র নেতারা।

দলীয় সুত্র মতে, চলতি বছরের জুলাই মাসে তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে বিদ্রোহীদের মদদদাতা হিসেবে সাবেক সভাপতি গোলাম রাব্বানী ও সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুনকে বাদ দিয়ে নতুন ভাবে সভাপতি হন জনপ্রিয় হীন কলমা ইউপি নির্বাচনে নৌকা পেয়েও জামানত হারানো চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মাইনুল ইসলাম স্বপন ও সম্পাদক হোন দলীয় মনোনায়ন পেয়ে ২০০৪ ও ২০১১ সালে তানোর পৌর নির্বাচনে পরাজিত আবুল কালাম আজাদ প্রদীপ সরকার। এতে করে উড়তে থাকা দলটি নিমিষেই ঝিমিয়ে পড়ে। এমনকি নতুন নেতৃত্ব আসলেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এমপির ছবির সাথে চেয়ারম্যান ময়নার ছবি ব্যবহার করে পোষ্টার দিচ্ছেন। যার কারনে নানা প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে। উঠছে সমালোচনারর ঝড়।

বেশ কিছু নেতারা জানান, বিগত ২০২১ সালে উপজেলার ৭ টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার চেয়ারম্যান হন কামারগাঁ ইউপিতে ফজলে রাব্বি ফরহাদ, কলমাতে দলের বিদ্রোহী বর্ষিয়ান নেতা বাবু চৌধুরী, বাধাইড় ইউপিতে নৌকার আতাউর, পাচন্দরে নৌকার আব্দুল মতিন, তালন্দতে দলের বিদ্রোহী নাজিমুদ্দিন বাবু, চান্দুড়িয়াতে নৌকার মজিবর রহমান। অবশ্য সরনজাই ইউপির ভোট মামলা জটিলতায় পিছিয়ে পরে নৌকা ছাড়াই অনুষ্ঠিত হয়। এই ইউপিতে বিএনপির স্বতন্ত্র মোজাম্মেল হক চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এখানে নৌকা পান চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক। কিন্তু ঋন খেলাপির জন্য প্রার্থীতা বাতিল হলেও উচ্চ আদালত থেকে প্রার্থীতা পেয়ে গণসংযোগও করেন। কিন্তু দলের আরেক বিদ্রোহী প্রার্থী আবু সাইদ উচ্চ আদালত থেকে মালেকের প্রার্থীতা অবৈধ রায় নিয়ে আসেন। পরে নৌকা প্রতীক ছাড়াই নির্বাচন হয়। এসব নিয়ে তৃনমুলে রয়েছে প্রচুর ক্ষোভ। কারন আবু সাইদের টাকা থাকলেও জনপ্রিয় হীন তিনি। শুধু তার জন্য নৌকা পেয়ে ভিটে মাটি বিক্রি করে ঋন পরিশোধ করেও দলের গ্যাড়াকলে ভোট করতে পারেন নি মালেক। কিন্তু সাইদ মোটরসাইকেল প্রতীকে ভোট করে হন পরাজিত। নিজেও পারলনা আবার নৌকার প্রার্থী কেও হতে দিল না। যার কারনে রাগে ক্ষোভে বিএনপির প্রার্থী কে বিজয়ী করেন। এছাড়াও প্রতি ইউপিতে বিদ্রোহী প্রার্থী দের উপর হামলা মামলা চলে একাধারে। আবার তালন্দ ইউপি বিদ্রোহী প্রার্থী নাজিমুদ্দিন বাবুর প্রতি ছিল অদৃশ্য সমর্থন। দলীয় ভাবে তার উপর তেমন ধকল যায়নি। ব্যাপক সমস্যায় ছিল কামারগাঁ ইউপির বিদ্রোহী প্রার্থী দু বারের সাবেক চেয়ারম্যান মসলেম উদ্দিন প্রামানিক। আবার কলমাতে প্রচুর জনপ্রিয়তার কারনে নৌকার পক্ষের নেতা কর্মীরা ঠাই পায়নি। যার কারনে জামানত পর্যন্ত পায়নি নৌকার প্রার্থী বর্তমান আওয়ামী লীগ সভাপতি জেলা পরিষদ সদস্য মাইনুল ইসলাম স্বপন।

এদিকে ইউপি ভোটের আগে দলীয় ভাবে আগ্রহী প্রার্থী দের তালিকা জমা নেওয়ার জন্য উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে সভা আহবান করা হয়। সভায় প্রচুর মারপিট ধাওয়া পাল্টা ধাওয়াসহ রনক্ষেত্রে পরিনত হয়। মারাত্মকভাবে আহত হন সম্পাদক মামুন। যা স্থানীয় জাতীয় পর্যায়ে প্রতিবেদন প্রকাশ পায়। আবার সম্মেলনের আগে ওই মিলনায়তনে বর্ধিত সভা থেকে সভাপতি ও সম্পাদককে নানা উসকানি দিয়ে সভা থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। এখানেই শেষ না সভাপতি রাব্বানীরকে থানা মোড় থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।

এসবের কারনে চরম ভাবে ক্ষোভ নিয়ে তারা রাজনীতি থেকে অনেক দূরে। যার কারনে দলে চরম বিভ্রাট।
এদিকে ভোটের ফলাফল নিতে উপজেলা হলরুমে ছিলেন কলমা ইউপির বিজয়ী প্রার্থী তার ছেলে রানাসহ অনেকে। ওইদিন পরিকল্পিত ভাবে ময়নার ডিসের গুদামে কেবা কারা আগুন দেন। এঘটনায় মামলার আসামী হন রানা চৌধুরীসহ অনেকে। শুধু একটি না কয়েকটি মামলা হয়। যার কারনে কলমাতে জিরো অবস্থানে। চেয়ারম্যান বাবু চৌধুরীকে নানা ভাবে হয়রানি করেন। এটাও জিরো টলারেন্সের অন্যতমত কারন।

এছাড়াও মুন্ডুমালা পৌরসভা নির্বাচনে ক্ষমতার ব্যাপক অপব্যবহার করেন নৌকার নেতা কর্মীরা। একাধিক মামলা হামলা হলেও বিজয়ী হন বিদ্রোহী প্রার্থী সাইদুর।

গত মাসে জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলের মনোনীত প্রার্থী বিজয়ী হলেও বিদ্রোহী প্রার্থী গোদাগাড়ীতে বিজয়ী হয়েছিলেন।

এক সিনিয়র নেতা জানান, ক্ষমতার মোহে যাকে তাকে নিজের পচন্দের ব্যক্তিকে দলীয় পদ দিলে সংগঠন অকেজ হবে এটাই স্বাভাবিক। শুধু তানোর না গোদাগাড়ীতেও যাকে সভাপতি করা হয়েছে তিনি তো জনবিচ্ছিন্ন এক নেতা, যিনি একাধিকবার মনোনায়ন পেয়েও বিজয়ী হতে পারেনি, পরে উপনির্বাচনে কি ভোটে বিজয়ী হয়েছে দিনের আলোর মত পরিস্কার। তারা পছন্দের লোককে নেতৃত্বে নিয়ে আসছেন তারাই দল পরিচালনা করবেন। কারন রাব্বানী মামুন তো দলের ক্ষতিকারক, তারা তো বাদ, তাহলে দলের এঅবস্থা কেন এমন প্রশ্ন ছুড়ে দেন। আমরাও চায় আগামী জাতীয় নির্বাচনে যাদেরকে মুসতাক উপাধি দেওয়া হয়েছিল তাদেরকে যেন কোন ভাবেই ডাকা না হয়। কারন যারা দলের ক্ষতি করেছে, আর যাদেরকে নেতৃত্ব দেওয়া হয়েছে তারাই যেন সবকিছু করে। সামান্য জেলা পরিষদ নির্বাচনে তানোর আওয়ামীলীগ এতই দেওলিয়া হয়ে পড়েছে যে, জামায়াতের কয়েকজন মেম্বার আছে তাদেরকে সভায় ডেকে বক্তব্য পর্যন্ত দিতে হয়েছে। অথচ জামাতের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি স্বাধীনতা বিরোধী জঙ্গিসহ আরো কতকি। তাহলে জেলা পরিষদ নির্বাচনে আ”লীগের প্রার্থী ছিল বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবাল। জামাতপন্থী মেম্বারদের বক্তব্যের মাঝে ওয়াদা পর্যন্ত করিয়ে নেওয়া হয় ভোট পেতে। দুচার জন ছাড়াকি প্রার্থী পাশ করত না। ভোট পেতে আদর্শ হীন হয়ে পড়েছে আ”লীগ বলেও এক সিনিয়র নেতার দাবি। এসব না করে দলের বিদ্রোহী দের সাথে নিয়ে কাজ করলেই তো হয়। কিভাবে করবে তারা তো চেয়ারে থাকা নেতাদের কাছে খুনি মুশতাক, বিএনপি জামাতের এজেন্ড। এজন্য কথায় আছে ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিওনা। আগামীতে আরো কত কি অপেক্ষা করছে, সেটা সামাল দেওয়া অসম্ভব। কারন তৃনমূল জনপ্রতিনিধিরা যে ভাবে লুটপাট করেছে তার জবাবও সময় বুঝে নিবে তৃনমূলের আওয়ামী লীগ।

এক প্রবীন নেতা মুক্তিযোদ্ধা নাম প্রকাশ না করে বলেন, গোলাম রাব্বানীর বিপরীতে মাইনুল ইসলাম স্বপনকে সভাপতি করা হয়েছে, তিনি রাব্বানীর জায়গা পুরুন করতে পারবেন, নাকি তারমত জনপ্রিয়। শুধু তানোর না গোদাগাড়ীতেও রাব্বানী জনপ্রিয় কর্মীবান্ধন নেতা। তাকে কত অপবাদ দেওয়া হয়েছে। শুধুমাত্র প্রতিহিংসার কারনে এধরনের অকেজো জনবিচ্ছিন্ন ব্যাক্তিকে পদ দেওয়া হয়েছে। আর যিনি সম্পাদক হয়েছেন তিনি কত জনপ্রিয় সেটা সবার জানা। তিনিও মামুনের জায়গা পুরুন করতে পারবেনা। আগামী জাতীয় নির্বাচনে কি হবে কি ঘটবে হাড়েহাড়ে টের পাবে। এখন আওয়ামীলীগ গোছানোর জন্য মরিয়া হয়ে কাজ করছেন আরেক তরুন জনবান্ধব নেতা সুজন। তার আচার আচরন ও ব্যবহারে তৃনমূল কর্মীরা অনেকটাই তুষ্ট। যদিও পুরো সফল হতে হয়তো পারবে কিনা জানিনা, তবে সাধারন মানুষের আস্থা অর্জন করতে পেরেছেন। যদিও ইতিপূর্বেই সুজনের বিরুদ্ধেও সুযোগ সন্ধানী ষড়যন্ত্র শুরু হয়ে গেছে।

স্ব.বা/বা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *