স্নাতক ডিগ্রি ছাড়াই বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ ধনী আদানি

আন্তর্জাতিক লীড

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: মাত্র তিন যুগ ব্যবসা করেই বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ ধনী হয়ে ওঠা চাট্টিখানি কথা নয়। কিন্তু এই অসম্ভবকেই সম্ভব করে দেখিয়েছেন ভারতের গৌতম আদানি। তথাকথিত উচ্চশিক্ষিত ডিগ্রিধারী নন, উত্তরাধিকার সূত্রেও তেমন কোনো সম্পত্তি পাননি, তারপরও অর্থনীতির দুনিয়ায় তিনি এখন বিশাল রাজত্বের মালিক। আর এসবই সম্ভব হয়েছে আদানির তীক্ষ্ণ দূরদৃষ্টি, বুদ্ধিমত্তা ও পরিশ্রমের ফলে। অফুরন্ত অর্থকড়ি থাকা সত্ত্বেও ৬০ বছর বয়সে আজও দৈনিক ১২ ঘণ্টা অফিস করেন আদানি।

বর্তমানে ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ধনী পরিবার আদানিদের। কিন্তু আম্বানিদের মতো উত্তরাধিকার সূত্রে এই সৌভাগ্যের মালিক হননি তারা।

প্রাথমিক জীবন
১৯৬২ সালের ২৪ জুন ভারতের আহমেদাবাদে একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম গৌতম আদানির। তার বাবা ছিলেন ছোটখাটো টেক্সটাইল ব্যবসায়ী। আদানির আরও সাতটি ভাই-বোন রয়েছে।

ছোটবেলা থেকেই প্রবল বুদ্ধিমত্তার অধিকারী গৌতম আদানি। তবে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা খুব একটা ভালো লাগতো না। গুজরাট ইউনিভার্সিটিতে বাণিজ্য বিষয়ে পড়াশোনা শুরু করেছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয় বছরেই সেটি ছেড়ে দেন তিনি।

নিজে কিছু করার প্রবল ইচ্ছার কারণে বাবার ব্যবসায় হাত লাগাতে অস্বীকৃতি জানান আদানি। বয়স ১৮ হওয়ার আগেই মুম্বাই পাড়ি জমান তিনি। সেখানে মহেন্দ্র ব্রাদার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠানে হীরা বাছাইকারীর কাজ নেন।

এই চাকরিতে প্রায় দু’বছর ছিলেন। পরে কিছুটা অভিজ্ঞতা হলে মুম্বাইয়ের জাভেরি বাজারে নিজেই ডায়মন্ড ব্রোকারেজের ব্যবসা শুরু করেন।

আদানির উত্থান
১৯৮১ সালে গৌতম আদানির বড় ভাই মাহসুখভাই আদানি আহমেদাবাদে একটি প্লাস্টিক কারখানা কেনেন। এটি চালাতে সাহায্যের জন্য গৌতমকে অনুরোধ জানান তিনি। তখন বড় ভাইয়ের অনুরোধে আবারও জন্মস্থানে ফেরেন গৌতম আদানি। এই ব্যবসা করতে গিয়ে বিদেশ থেকে পলিভিনাইল ক্লোরাইড (পিভিসি) আমদানি করতে হতো। এটিই তাদের সামনে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের দুয়ার খুলে দেয়।

১৯৮৮ সালে আদানি এক্সপোর্টস প্রতিষ্ঠা করেন গৌতম আদানি, যা বর্তমানে আদানি এন্টারপ্রাইজ নামে পরিচিত।

১৯৯১ সালে ভারত সরকারের অর্থনৈতিক নীতি সংস্কার আদানিদের কোম্পানির জন্য আশীর্বাদ হয়ে ওঠে। মুনাফা ফুলেফেঁপে ওঠায় ধীরে ধীরে ধাতু, টেক্সটাইল, কৃষি পণ্যের ব্যবসাতেও হাত লাগান তারা।

১৯৯৩ সালে গুজরাট সরকার মুন্দ্রা সমুদ্রবন্দরকে বেসরকারি খাতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৯৫ সালে এই সুযোগ লুফে নেন আদানি। আজ ভারতের বৃহত্তম বেসরকারি বন্দর এটি।

১৯৯৬ সালে আদানি পাওয়ার নামে বিদ্যুৎ ব্যবসা শুরু করে আদানি গ্রুপ। বর্তমানে ভারতের বৃহত্তম বেসরকারি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরিচালক তারা।

ধীরে ধীরে স্বদেশ পেরিয়ে বিদেশেও নিজেদের ব্যবসা সম্প্রসারণ করেন গৌতম আদানি। ২০০৯ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার অ্যাবট পয়েন্ট বন্দর ও কুইন্সল্যান্ডের কারমাইকেল কয়লা খনি কিনে নেন তিনি।

২০২০ সালে ৬০০ কোটি মার্কিন ডলারে ভারতে সৌরবিদ্যুৎ সংক্রান্ত বিশ্বের বৃহত্তম দরপত্র জেতেন আদানি। ওই বছরের সেপ্টেম্বরেই মুম্বাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ৭৪ শতাংশ শেয়ার কিনে নেন তিনি। এটি বর্তমানে ভারতের দ্বিতীয় ব্যস্ততম বিমানবন্দর।

২০২১ সালের নভেম্বরে একটি অর্থনৈতিক ফোরামে বক্তৃতাকালে সবুজ জ্বালানি ব্যবসায় সাত হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দেন গৌতম আদানি।

২০২২ সালের মে মাসে কয়েকশ কোটি ডলারে ভারতে সুইস কোম্পানি হোলসিমের সিমেন্ট ব্যবসা (আম্বুজা সিমেন্ট) কিনে নেয় আদানি গ্রুপ। এটি বর্তমানে ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম সিমেন্ট প্রস্তুতকারক।

এ বছরের আগস্টে আদানি গ্রুপের অঙ্গসংস্থা এএমজি মিডিয়া নেটওয়ার্কস লিমিটেড জানায়, তারা আরআরপিআর হোল্ডিং কিনে নিতে চায়। এই প্রতিষ্ঠানটি ভারতের প্রভাবশালী সম্প্রচারমাধ্যম এনডিটিভির ২৯ দশমিক ১৮ শতাংশ শেয়ারের মালিক। এর বাইরে উন্মুক্ত প্রস্তাবের মাধ্যমে এনডিটিভির আরও ২৬ শতাংশ শেয়ার কেনার আগ্রহপ্রকাশ করেছে আদানি গ্রুপ।

শীর্ষ ধনীর কাতারে
শীর্ষ ধনীর তালিকায় গৌতম আদানির উত্থান হয়েছে বেশ দ্রুত। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে স্বদেশি ধনকুবের মুকেশ আম্বানিতে হটিয়ে এশিয়ার এক নম্বর ধনী বনে যান আদানি। একই বছরের আগস্টে গোটা বিশ্বের মধ্যে তৃতীয় শীর্ষ ধনীর আসন দখল করেন তিনি, যা এখনো ধরে রেখেছেন।

ফোর্বসের হিসাবে, এই মুহূর্তে গৌতম আদানির সম্পদের পরিমাণ ১৪ হাজার ২৪০ কোটি ডলার।

অজানা কিছু তথ্য
শোনা যায়, ১৯৯৮ সালে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করা হয়েছিল গৌতম আদানিকে। পরে বিপুল অর্থ মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পান তিনি।

২০০৮ সালে মুম্বাইয়ের তাজ হোটেল সন্ত্রাসী হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া লোকদের মধ্যেও একজন গৌতম আদানি। হামলার সময় হোটেলটিতে খাবার খাচ্ছিলেন। পরে লুকিয়ে কোনোক্রমে প্রাণে বাঁচেন তিনি।

বয়স ৬০ বছর হয়ে গেলেও এখনো দৈনিক ১১ থেকে ১২ ঘণ্টা অফিস করেন আদানি। তিনি চান, কোনো সমস্যা হলে কর্মীরা যেন সরাসরি তাকে জানান। সমস্যার সমাধানে প্রয়োজনে নিজে হস্তক্ষেপ করতে কখনো দ্বিধা করেন না এ ব্যবসায়ী।

গৌতম আদানির স্ত্রীর নাম প্রীতি আদানি। তিনি দন্তচিকিৎসক হলেও বর্তমানে আদানি ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন। তাদের দুই পুত্র- করণ আদানি ও জিৎ আদানি।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে গৌতম আদানির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে বলে শোনা যায়।

স্ব .বা/রু

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *