তানোর প্রতিনিধি: রাজশাহীর তানোরের ইউএনওর সাথে শিক্ষক জাহাঙ্গীর প্রতারনা করে কৃষি জমিকে পুরাতন পুকুর দেখিয়ে নিষিদ্ধ ভেকু মেশিন দিয়ে খনন কাজ করে জম্পেশ ভাবে মাটি বিক্রি করছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। মাটি বহনের কারনে সরকারী পাকা রাস্তা নষ্ট হয়ে পড়েছে। অপর দিকে পুকুর খননের কারনে বর্ষা মৌসুমে প্রচুর জলাশয়ের সৃষ্টি হবে। উপজেলার কামারগাঁ ইউপির হরিদেবপুর গ্রামের উত্তরে কৃষি জমি কাটার ঘটনা ঘটে রয়েছে। এতে করে একের পর এক কৃষি জমিতে পুকুর হওয়ায় খাদ্য ঘাটতির আশংকা করছেন কৃষকরা। ফলে দ্রæত এসব কৃষি জমি ধ্বংস কারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জোরালো দাবি প্রান্তিক চাষীদের।
জানা গেছে, উপজেলার কামারগাঁ ইউনিয়ন (ইউপির) হরিপুর মৌজার অন্তর্গত তিন ফসলী জমিতে গত বছর কোদাল দিয়ে মাটি কাটেন। পরে সেই জমিটি পুকুর করে ফেলেন ওই গ্রামের শিক্ষক জাহাঙ্গীর। ওই কৃষি জমিকে পুরাতন পুকুর দেখিয়ে সংস্কার করার জন্য চলতি বছরের নভেম্বর মাসের ১১ তারিখে কামারগাঁ ইউনিয়ন ভূমি অফিসে আবেদন করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে ইউনিয়ন ভূমি তহসিলদার অনুমোদনের জন্য নির্বাহীর দপ্তরে পাঠান। ৬৫৭ নম্বর স্বারকে আবেদন পাঠানো হয়। এর প্রেক্ষিতে নির্বাহী অফিসার বাহিরে মাটি বিক্রি করা যাবে না মর্মে অনুমোদন দেন।
স্থানীয়রা জানান, হরিপুর মৌজায় সাতটি দাগে জমি রয়েছে ৩ একর ৮৩ শতাংশের কাত ৩ একর ৫০ শতাংশ জমিতে পুকুর খনন করেছেন শিক্ষক জাহাঙ্গীর। অবশ্য আবেদনে জমির তফসীল দিলেও শ্রেণী ব্যবহার করেন নি। শ্রেনী ব্যবহার করলে কোনভাবেই অনুমোদন পেতেন না। এখানেই শেষ না পুকুর খননের কাদা মাটি ট্র্যাক্টরে করে বিক্রি করার কারনে সরকারের কোটি টাকার রাস্তা নষ্ট হয়ে পড়ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, হরিপুর গ্রামের উত্তরে ১২ বিঘা কৃষি জমিতে নিষিদ্ধ ভেকু মেশিন দিয়ে পুকুর কাটা হচ্ছে। সেখানে ছিলেন শিক্ষক জাহাঙ্গীরের পিতা আব্দুল খালেক। তিনি জানান, অনুমোদন নিয়ে পুকুর কাটছি বলে তিনি দুটি কাগজ দেখান। কাগজে জমির শ্রেণী দেওয়া নেই ও মাটি বিক্রি করা যাবেনা। মাটি বিক্রি নিষেধ ও জমির শ্রেণী ব্যবহার করা হয়নি জানতে চাইলে তিনি জানান মাটি বিক্রি না করলে কোথায় দিব, নিয়ম অনুযায়ী কয়জন কাজ করে, প্রশাসনকে আমার ছেলে দেখবে, কি করতে হয় তাও জানে, অনুমোদন তো আর মাকনা হয়নি।
গ্রামের বাসিন্দারা জানান, দিনরাত সমান তালে ট্র্যাক্টরে করে মাটি বহনের কারনে ধূলায় পুরো গ্রাম একাকার হয়ে পড়ছে। কৃষি জমির শ্রেণী পরিবর্তন না করে কিভাবে পুকুর খনন হয়। রাস্তাগুলো নষ্ট করলেও নিরব কর্তৃপক্ষ। যেখানে সরকার প্রধান হুশিয়ারী দিয়ে বলছেন কোন ভাবেই কৃষি জমির শ্রেণী পরিবর্তন করা যাবে না। তাহলে কিভাবে অনুমোদন দেওয়া হল। নাকি টাকা নামক বস্তুর কাছে সবাই জিম্মি। অথচ ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কাটা ও বহনের কারনে শরিফুল নামক এক ভেকু মেশিনের মালিককে ৬ মাসের জেল দেওয়া হল। আর এসবের কিছুই হচ্ছে না। ওই সব জমিতে পুকুর হওয়ার কারনে পার্শ্বের জমিগুলো জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। একবার পুকুর হলে বাধ্য হয়ে পার্শ্বের জমির মালিকরা পুকুর করতে মরিয়া হয়ে পড়েন।
শিক্ষক জাহাঙ্গীর জানান, আমি অনুমোদন নিয়ে পুকুর খনন করছি। আপনি তো প্রতারনা জালিয়াতি করে অনুমোদন নিয়েছেন প্রশ্ন করা হলে উত্তরে বলেন জালিয়াতি না কি সেটা আমি ও কর্তৃপক্ষ বুঝব, মাটি বিক্রি নিষেধ জানতে চাইলে তিনি জানান, এত উত্তর দেওয়ার সময় নেই বলে প্রচুর দম্ভক্তি প্রকাশ করেন।
এলজিইডি প্রকৌশলী সাইদুর রহমান জানান, আগামী জানুয়ারী মাস থেকে যারাই রাস্তা নষ্ট করবে তাদের নামেই ক্ষতিপুরন চেয়ে আদালতে মামলা, কোন ছাড় না, কারা এসব করছে সবার তালিকা করা হচ্ছে, যতই প্রভাবশালী হোক কোন ছাড় না।
কামারগাঁ ইউনিয়ন ভূমি তহসীলদার কাওসার জানান, আমি সরেজমিনে গিয়ে প্রতিবেদন করেছি, ইউএনও স্যার অনুমোদন দিয়েছেন। কৃষি জমি কে আপনি পুরাতন পুকুর হিসেবে কি ভাবে প্রতিবেদন দিলেন জানতে চাইলে তিনি জানান, সেখানে মাছ চাষ হয় এজন্য এভাবে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। সারা দেশে কৃষি জমিতে পুকুর হচ্ছে এখানেও একই নিয়ম। কৃষি জমির শ্রেণী কি পরিবর্তন হয়েছে প্রশ্ন করা হলে উত্তরে বলেন এভাবেই হয় পুকুর বলে এড়িয়ে যান তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পংকজ চন্দ্র দেবনাথ জানান, বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্ব.বা/বা