নদী গর্ভে গ্রাম, জিও ব্যাগ ফেলেও ঠেকানো যাচ্ছেনা ভাঙন

বিশেষ সংবাদ রাজশাহী লীড

আব্দুল হামিদ মিঞা,বাঘা (রাজশাহী): পদ্মার ভাঙনে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে, বাঘা উপজেলার চরাঞ্চলের চকরাজাপুর ইউনিয়ন। পদ্মার অব্যাহত ভাঙনে নদী গর্ভে গেছে, ইউনিয়নের ৪টি গ্রাম। বিলিন হওয়ার পথে আরো ৩টি গ্রাম। এই ভাঙন চলছে চকরাজাপুর ইউনিয়নে। বেশি ভাঙছে ইউনিয়নটির ৩ নম্বর ও ৫ নম্বর কালিদাশখালি এলাকায়। জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রক্ষায় কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

পদ্মার চরের কালিদাসখালী এলাকায় ৫০ বিঘা জমি কিনে আম ও লিচু বাগান করেছিলেন বাঘার সেকেন্দার আলী(আড়ৎদার)। পদ্মা পাড়ে কথা হলে সেকেন্দার আলী জানান, এবারের ভাঙনে সবটাই নদীগর্ভে চলে গেছে। তিনি বলেন, আমার মতো এই চরের জমিতে আম বাগান করেছিল ,নারায়নপুরের আসলাম সর্দার, কিতু পাড়ে, মনি বাবু,মিলিক বাঘার শহিদুল সর্দার, সুরাত আলী,ইউনুস আলী,গাওপাড়ার শাহিন মন্ডল, মশিদপুরের মেহের আলীসহ আরো অনেক কৃষক চরের জমিতে আমবাগান,লিচু বাগান,বরই বাগান করেছিলেন । পদ্মার ভাঙনে সেই জমি ও গাছপালা সবটাই নদী গর্ভে গেছে । ওই গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম জানান, দেড় বিঘা জমির বেগুন ক্ষেত সবটাই গেছে নদী গর্ভে।

৫নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য, কালিদাশখালি গ্রামের সহিদুল ইসলাম জানান, সপ্তাহখানেক আগে, তার গ্রামের মোশারফ হোসেন, মিজান মাষ্টার, হয়রত আলী, বিজু ব্যাপারিসহ ৬০জন ঘরবাড়ি সরিয়ে নিয়েছে। ঝুঁকিতে রয়েছে প্রায় ১৫ পরিবার। ৩নম্বর কালিদাশখালি, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের লক্ষীনগর, ৪নম্বর ওয়ার্ডের চকরাজাপুরসহ অন্তত ৬০ জন কৃষকের আমবাগানসহ আবাদ করা ফসলের জমি গিলে খেয়েছে পদ্মা। ৮নম্বর ওয়ার্ড সদস্য লক্ষীনগর গ্রামের তমছু মোল্লা জানান, তার গ্রামের আবুল বিশ্বাস, মহর উদ্দিনসহ প্রায় ৪০ পরিবার বিভিন্ন জায়গায় চলে গেছে। বর্তমান সময়ের ভাঙনের আগে চকরাজাপুর,লক্ষীনগর,আতারপাড়ার স্থাপনাসহ জায়গা জমি নদী গর্ভে চলে গেছে। অব্যাহত ভাঙনে ৩নম্বর কালিদাশখালি গ্রামও গেছে নদী গর্ভে।

এর সত্যতা নিশ্চিত করে ইউনিয়নটির চেয়ারম্যান ডিএম বাবুল মনোয়ার বলেন, তার ইউনিয়নে ১২টি গ্রাম রয়েছে । ভাঙনে ৪নম্বর ওয়ার্ডের চকরাজাপুর গ্রাম, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কালিদাশখালি গ্রাম, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের লক্ষীনগর গ্রাম,১ নম্বর ওয়ার্ডের আতারপাড়া নদী গর্ভে চলে গেছে। ২নম্বর ওয়ার্ডের চৌমাদিয়া গ্রামের ৩ভাগের ২ভাগ, ৫নম্বর কালিদাশখালি গ্রামের অর্ধেক ও ৬ নম্বর কালিদাশখালি গ্রামের ৩ভাগের ২ভাগ নদী গর্ভে চলে গেছে। ৫মাসে ভাঙনের কবলে পড়েছে প্রায় সাড়ে ৪শ’পরিবার। ৬০০শ’ একর জমি নদী গর্ভে গেছে।

সরেজমিন বৃহসপতিবার (১৮ ডিসেম্বর) ভাঙন কবলিত এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, জিও ব্যাগ ও জিও টিউব ফেলে চকরাজাপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও বাজার রক্ষায় কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। দোচালা টিনের নীচে পরিবার নিয়ে রাতে থাকছেন জুবেল সেখ ।

চকরাজাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক মিজানুর রহমান জানান, জিও ব্যাগ ফেলেও ভাঙন ঠেকানো যাচ্ছেনা। যেভাবে ভাঙছে তাতে স্কুল ও বাজারও থাকবেনা। ২বছর আগে বিদ্যালয় ও বাজার ৫ নম্বর কালিদাশখালি এলাকায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। চকরাজাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মজিবর রহমান জানান ভাঙনের কবলে পড়ায় গত বছর তার বিদ্যালয়টি সরিয়ে নিয়ে কালিদাশখালি -দাদপুর এলাকায় প্রতিষ্ঠা করেছেন।
ডিজিএম সুবির কুমার দত্ত বলেন, গত মঙ্গলবার(১৩ ডিসেম্বর)) পর্যন্ত ৪৮টি বিদ্যুতের পুল উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে।

রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ সহকারি প্রকৌশলী মাহাবুব রাসেল জানান,ভাঙন রোধে গত ১৫ দিনে ৫০০০(পাঁচ) হাজার জিও ব্যাগ ও প্রায় সাড়ে ৭০০(সাত)শত জিও টিউব ফেলা হয়েছে। নদীর মাঝখানে চর পড়ে পানির ন্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ হওয়ায় ভাঙন থামছেনা।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন আখতার বলেন,পরিদর্শন করে দেখেছি কয়েকটি গ্রামের অস্তিত্ব নেই। ৪৮ পরিবারকে অনুদানের টাকা দেওয়া হয়েছে। বাঁকিদেরও দেওয়া হবে।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ্যাড.লায়েব উদ্দীন লাভলু বলেন, ভাঙন রক্ষায় নদী ড্রেজিং কাজ শেষ হলে, নদী ভাঙন থেকে রক্ষা পাবে লোকজন।

স্ব.বা/বা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *