বাঘা প্রতিনিধি : প্রভাবশালী প্রার্থীদের সাথে ভোটের লড়াইয়ে শামিল হয়েছেন বিত্তহীন-স্বাক্ষরজ্ঞান এক মেয়র প্রার্থী। যেন এক ঢাল-তলোয়ার বিহীন রাজা। গত অর্ধ যুগেরও বেশি সময় ধরে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। সংসদ নির্বাচন ও উপজেলা নির্বাচনও বাদ দেননি। ভোটে দাঁড়িয়ে জামানত হারালেও নির্বাচন এলেই প্রার্থী হওয়া তার নেশায় পরিনত হয়েছে। এবার মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছেন। ভোট পাগল এ মানুষটি হলেন রাজশাহীর বাঘা পৌরসভার বলিহার এলাকার বাসিন্দা ইসরাফিল বিশ্বাস। পেশায় টিউবওয়েল মিস্ত্রী। ডেকোরেটর নামের একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে তার। চতুর্থ ধাপের অনুষ্ঠেয় বাঘা পৌরসভা নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ‘মোবাইল ফোন’ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন ইসরাফিল বিশ্বাস ।
তার ইচ্ছা, ভোটে জয়লাভ করলে গরিবের প্রাপ্য হক সঠিকভাবে বণ্টন করবেন। সরকারের সব সুযোগ-সুবিধা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিবেন। নির্যাতিত-অবহেলিত গরিব মানুষ কিভাবে তাদের প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, তা দেখে, সিদ্ধান্ত নেন সমাজসেবক হয়ে তাদের পাশে দাঁড়ানোর। তাই ভোটের লড়াইয়ে জিততে কখনও সাইকেলে চড়ে, আবার কখনও পায়ে হেঁটে, কখনো ইজিবাইকে চড়ে ভোটারের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট-ভিক্ষা চাইছেন, চালিয়ে যাচ্ছেন প্রচার-প্রচারণা ।
সাধারণ ভোটাররা ভোট পাগল এ মানুষটিকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করে বিনোদন নিলেও ভোটের ব্যাপারে ভীষণ সিরিয়াস ইসরাফিল। আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীসহ আ’লীগ দলীয় বিদ্রোহী ও বিএনপি-জামায়াতের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তিনিও মাঠে চালাচ্ছেন প্রচারণা, করছেন গণসংযোগ। তার ভোটের প্রচারণা করতে কর্মী সমর্থক কম হলেও আগে থেকেই পরিচিতি পাওয়া ইসরাফিল বিশ্বাস নিজেই প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে তার নির্বাচনী প্রচারণায় নেই গণজমায়েত, নেই মিছিলের হট্টগোল। কেউ কেউ হাসি-তামাশা করলেও ইতিবাচক হিসেবেও দেখছেন অনেকে। তবে প্রতিক্রিয় যা-ই হোক, ব্যতিক্রমী প্রচারণা নজর কেড়েছে সকলের। নির্বাচনী প্রচারে এসেছে ভিন্ন মাত্রা।
নির্বাচনী প্রচার ভ্যানে চড়ে এলাকা ঘুরে ঘুরে নিজের ছবি সংবলিত ‘মোবাইল ফোন’প্রতীকের পোষ্টার বিলি করতে দেখা গেল ইসরাফিল বিশ্বাসকে। বার বার প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে ইসরাফিল বিশ্বাস বলেন, নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে জনগণের ভোট না পেলেও দুঃখ নেই তার। তবে ‘এভাবে প্রার্থী হয়েই একদিন লেগে যাবে- সফলতা আসবেই। নির্বাচনকে ঘিরে ভোটের হারানো সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনতে চাই। প্রজন্ম জানতে হবে এদেশে একদিন গণতন্ত্র ছিল, ভোটের রাজনীতি ছিল। কোনো দিন যদি নির্বাচিত হই,তাহলে সমাজসেবক হিসেবে তরুণদের কর্মসংস্থান নিয়ে কাজ করবো সবার আগে। তার বিশ্বাস অতীতের দিনগুলোর চেয়ে এবার পৌরসভার ভোটাররা তাকে মূল্যায়ন করে মেয়র পদে ‘মোবাইল ফোন’ প্রতীকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবে।
জানা যায়, সর্ব প্রথম ১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন ইসরাফিল বিশ্বাস । কিন্তু নির্বাচনী এলাকার ১শতাংশ ভোটারদের স্বাক্ষর সঠিক না হওয়ায় তার মনোনয়ন পত্র বাতিল হয়ে যায়। এরপর থেকে প্রতিবারই তিনি প্রার্থী হয়েছেন। ২০০৯ সালে উপজেলা পরিষদের তৃতীয় নির্বাচনে চেয়ারম্যান,২০১৪ সালে উপজেলা পরিষদের ৪র্থ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেছিলেন।
উপজেলা নির্বাচন অফিসার মুজিবুল আলম জানান,কোন নির্বাচনেই জামানত ফেরত পাননি ইসরাফিল বিশ্বাস। আগামী ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় বাঘা পৌরসভা নির্বাচনে এবার মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছেন। পড়ালেখায় ‘স্বাক্ষরজ্ঞান’ । স্থানীয়রা জানান, বলিহার গ্রাম বাঘা পৌরসভার অন্তভর্’ক্ত হওয়ার আগে ইসরাফিল বিশ্বাসের পিতা গ্রাম্য চিকিৎসক রহিমুদ্দীন বিশ্বাস মেম্বর নির্বাচিত হয়েছিলেন।
পৌরসভার ৭নম্বর ওয়ার্ডের আব্দুল রবিউল বলেন, ইসরাফিল একা একা যেভাবে ভোট চেয়ে বেড়াচ্ছেন, তা দেখে মনে হচ্ছে এটা নির্বাচনে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। কনা খাতুন নামের এক নারী বলেন, ইসরাফিল বিশ্বাস গরিব বলে নিজেই পোস্টার-মাইকিং গাড়িতে চড়ে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
হাবিবুর রহমান বলেন, ভোটের মাঠে যেখানে অর্থ আর ক্ষমতার লড়াই চলছে। সেখানে ওই প্রার্থীর সাদামাটা অংশগ্রহণকে ইতিবাচক বলে মনে হচ্ছে। দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়ার লক্ষ্যে তার ব্যতিক্রমী প্রচারণা ইতিবাচক উদাহরণ হতে পারে।
স্ব.বা/রু